পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যানবাহন উঠতে আর খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। প্রায় ৭৩ শতাংশ অগ্রগতির পর পদ্মা সেতুর স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের কাছাকাছি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, ইতোমধ্যে নদী শাসনের কাজও অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। সর্বশেষ মাসখানেক আগে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের ওপর ষষ্ঠ স্প্যান বসানো হয়েছে। আর তাতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৯০০ মিটার। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীতে পানি কম থাকা, নাব্যতা সঙ্কট এবং ঘন কুয়াশার কারণে ষষ্ঠ স্প্যানটি বসাতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লেগেছে। আগামী মাস থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানে কয়েকটি স্প্যান বসবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্যানেল অব এক্সপার্টের সভাপতি প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আশা করছি আগামী বছরের মাঝামাঝি অথবা শেষ হাফে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। অর্থাৎ পদ্মা সেতু চালু হতে আর দেড় বছর লাগতে পারে। প্রফেসর জামিলুর রহমান বলেন, এত বড় কাজ শুরুর দিকে জটিলতা ছিল এবং তা থাকাই স্বাভাবিক। তবে এখন আর কোনো জটিলতা নেই। এজন্য দেড় বছরের বেশি সময় লাগবে না।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণ অবকাঠামো পদ্মা বহুমুখী সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকে যুক্ত করবে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে। আর এটি তৈরি হচ্ছে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে। আর পদ্মা সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞে ইতোমধ্যে ৫ হাজার বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে।
এ দিকে, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ ১০টি মেগা প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যদিও সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) পদ্মা সেতু বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে। আর চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন-বিশিষ্ট টানেল নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পকে আরো দৃশ্যমান করতে এডিপিতে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। তবে খরচ করতে না পারায় আরএডিপি’তে বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এতে করে এডিপি থেকে আরএডিপি’তে পদ্মা সেতুর বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত মাসে বনানীতে সেতু ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৬৩ ভাগ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৭৩ শতাংশ। আর নদী শাসনের কাজ হয়েছে ৫০ শতাংশ। সে সময় মন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতুর মোট ২৬১টি পাইলের মধ্যে ১৯১টির কাজ সম্পন্ন। আরো ১৫টি পাইলের আংশিক কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া মোট ৪২টি পিলারের মধ্যে ১৬টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে ও ১৫টির কাজ চলমান রয়েছে। মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে এ পর্যন্ত ছয়টি স্থাপন করা হয়েছে। এতে সেতুর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় তিন সপ্তাহে এরই মধ্যে কাজের বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সীগঞ্জের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নয়নের কাজ চলছে পুরোদমে। রাস্তাটির কাজ শেষ হলে ঢাকার গুলিস্তান থেকে মাওয়া দূরত্ব সময়ের বিচারে অনেক কমে যাবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্বের তীব খর স্রোতা নদী আমাজানের পরেই পদ্মার অবস্থান। এ কারণে এই নদীতে সেতু তৈরি অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। একই সঙ্গে বিস্ময়করও। পদ্মার তলদেশ এতই দ্রুত পরিবর্তনশীল, যেকোনো মুহূর্তেই সেখান থেকে মাটি সরে গিয়ে ২১তলা ভবন সমান গভীর খাদ তৈরি হতে পারে। আর এই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই এর চেয়েও বেশি গভীরে পাইল বসিয়ে তৈরি করতে হচ্ছে পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের এই সেতু তৈরি করতে গিয়ে বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পদ্মার গভীরতা প্রায় চল্লিশ মিটার (১৩১ ফুট)। সাধারণত একতলা ভবনের উচ্চতা ১০ ফুট হয়। সে হিসাবে পদ্মার তলদেশ থেকে পানির উপরের ভাগ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩তলা ভবনের সমান। আর নদীর তলদেশে হঠাৎ খরস্রোতে আরও প্রায় ৬৫ মিটার (২১৩ ফুট) মাটি সরে গিয়ে খাদ তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ২১ তলা ভবন সমান মাটি পদ্মার নিচে যেকোনো সময় ধস নেমে সরে যেতে পারে। যে কারণে ১৩ ও ২১ তলা ভবন মিলিয়ে ৩৪তলা ভবন সমান গভীরে পাইল বসাতে হয়। প্রকৌশলীরা হিসাব করে ১২০ মিটার গভীরে নিয়ে যান একেকটি পাইল। যার ফলে নদীগর্ভে ৪০ তলা ভবনের একটি অবকাঠামো গড়তে হয়েছে। ধূসর রঙে যে পদ্মা সেতু দাঁড়িয়ে গেছে, তার তলদেশে এই ৪০ তলা ভবন সমান কাঠামো রয়েছে। যাকে পদ্মা সেতুর সবচেয়ে বড় বৈচিত্র্য ও চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর বিশালাকার পাইল নদীগর্ভে নিয়ে যেতে এর আগে পৃথিবীতে শক্তিশালী কোনো হ্যামার ছিল না। এজন্য ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে হ্যামার তৈরি করে আনা হয়েছে। এ পর্যন্ত এ রকম ৫টি হ্যামার ব্যবহৃত হয়েছে পদ্মায়। তবে এর মধ্যে ২টি বিকল হয়ে গেছে। কাজ চলছে বাকি ৩টি দিয়ে। হ্যামারগুলো জার্মান প্রযুক্তির নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানি থেকে বিশেষ অর্ডারে আনা হয়েছে।
স্বপ্নের এই সেতুটি যেসব উপাদানে তৈরি হচ্ছে, তাতেও রয়েছে বৈচিত্র্য। এই সেতু তৈরিতে যে পাথর ব্যবহৃত হচ্ছে, তার একেকটির ওজন এক টন। পাথরগুলো ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের পাকুর নামক স্থান থেকে আমদানি করা হয়েছে। এসব পাথর এত ভারী ও বড় যে, মাত্র ১৫ টুকরো পাথরের বেশি একটি বড় ট্রাকে তোলা যায় না।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ওয়ার্কশপ ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্মাণ ওয়ার্কশপ। এর আগে কোনো সেতু তৈরিতে এত বড় কর্মযজ্ঞের প্রয়োজন হয়নি। এখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে রিমোট কন্ট্রোল পদ্ধতিতে ভারী বস্তু ওঠানো-নামানো হয়। পদ্মা পাড়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এই পাইল ও স্প্যান ফেব্রিকেশন ইয়ার্ড (ওয়ার্কশপ) তৈরি করা হয়েছে। যেখানে প্রস্তুত হচ্ছে সেতুর একের পর এক পাইল ও স্প্যান। এই ইয়ার্ডের আয়তন ৩০০ একর।
এদিকে, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় মোট তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের জুনে এর ব্যয় ১৪০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এর আগে দ্বিতীয় দফায় ব্যয় বাড়ানোর পর এর প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সেবার ব্যয় বাড়ানো হয় ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর আগে ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেক অনুমোদন পায়। আর ২০০৭ সালে প্রথম অনুমোদনের সময় এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৮ কোটি ২১ লাখ ডলার। টাকার হিসাবে যা ৩০ হাজার কোটিরও বেশি। বর্তমানে বিশ্বে এর চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল সেতু রয়েছে মাত্র দুটি। এগুলো হলো, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রানসিসকোর বে-ব্রিজ ও ডেনমার্কের স্টোরবেল্টের গ্রেট বেল্ট ব্রিজ। এই ব্রিজ দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৬৪০ কোটি ডলার ও ৪৪০ কোটি ডলার। ব্যয়ের দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থিত ভেরাজানো-ন্যারোস ব্রিজ। দ্বিতল এ ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৪০ কোটি ডলার। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে ব্যয়ের দিক থেকে এটি নেমে যাবে চতুর্থ অবস্থানে। আর পদ্মা সেতু জায়গা করে নেবে তৃতীয় স্থান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।