২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
কথায় বলে রোজ একটা টমেটো খেলে ডাক্তারের আর প্রয়োজন হয় না। টমেটো আমাদের দেশীয় সবজি নয়। টমেটোর আদি জন্ম স্থান দক্ষিন আমেরিকা। বিশেষ করে পেরু ইকুয়েডরের স্থানীয় উদ্ভিদ হিসেবে জন্মানো হতো। তখন এটি বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য লাগানো হতো। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমের দিকে স্পেনীয়রা ইউরোপে নিয়ে আসে। ১৬৮০ দিকে জানা যায় যে অন্যান্য সবজির মতো টমেটো একটি মজাদার ও ভালো খবার। এরপর পরই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টমেটো জনপ্রিয় সবজি হয়ে ওঠে। প্রায় ১৫০ বছর আগে বিদেশ থেকে টমেটোর বীজ আনা হয়েছিল। এজন্য একে বলা হতো বিলাতি বেগুন। কারণ এর বীজ বেগুনের মতো। এটি মূলত শীতকালীন সবজি। এ মৌসুমে প্রচুর চাষ হয় এবং দেশের সর্বত্রই প্রচুর পাওয়া যায়। দামেও স্বস্তা। এ সবজিটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন সবজি। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে। টমেটো কাঁচা ও রান্না করে খাওয়া যায়। তবে কাঁচা টমেটো সালাদ করে খেলে তার পুষ্টি উপাদান পুরোপুরিটাই শরীরে কাজে লাগে। টমেটো ইংরেজি নাম। উদ্ভিদ জগতের সোলানেসি গোত্রের বর্ষজীবী বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ।
রাসায়নিক উপাদানঃ পাতায় থাকে গ্লইকো-উপক্ষার, টমাটিন ও টমাটিউন এর অন্যান্য পরিমানে সোমানিন, অ্যামাইনো এসিড এবং এমাইড। ফলে থাকে ট্রিপ্টে ফ্যান ব্যতিত সবগুলো অত্যাবশ্যক এমাইনো এসিড এবং জৈব এসিড প্রধানত সাইট্রিক, অক্সালিক ও ম্যালিক এসিড এবং রঞ্জক পদার্থ মূলত ক্যারোটিনয়েড, বিটা-ক্যারোটিন ও লাইকোপেন। অপক্ক ফলে থাকে নারকোটিন। পক্ক ফলে থাকে গ্লকোজ ও ফ্লকটোজ।
পুষ্টি উপাদানঃ পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগি টাটকা টমেটোতে পুষ্টি উপাদান-
খাদ্যশক্তি ২০ কিলোক্যালরি, জলীয় পদার্থ ৯৪ গ্রাম, আমিষ বা প্রোটিন ১.৯ গ্রাম, কার্বোহাইট্রেড ৩.৬ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, আঁশ ০.৮ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৫ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ বা থায়ামিন ০.১২ মিলিগ্রাম, বি-২ বা বিবোফ্লবিন ০.৩৬ মিলিগ্রাম, শর্করা ৩.৬ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১.৮ গ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.০৪ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৬০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম, গুটামিক এসিড ২৪০ গ্রাম।
উপকারিতাঃ টমেটোতে লাইকোপিন নামক এক ধরনের শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির জন্য টমেটোর রং টকটকে লাল হয়। টমেটোর মতো এতো পরিমাণ লাইকোপিন অন্য কোন ফল বা সবজিতে নেই। এ উপাধানটি মরণব্যধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাছাড়া মহিলাদের জরায়ুর, পুরুষের প্রটেস্ট, বৃহদন্ত্র ও মলাশয়, পাকস্থলি, খাদ্যনালি ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা পালন করে। তবে মনে রাখবেন লাইকোপিন শরীরে তৈরি হয় না বাহির থেকে গ্রহণ করতে হয়। আমরা জানি, রান্নার সময় যেকোন শাক-সবজির পুষ্টিমান কমে যায় কিন্তু টমেটো রান্না করার সময় প্রায় চারগুণ লাইকোপিন বেড়ে যায়। তাপে এ উপাদানটি নষ্ট হয় না। তাই টমেটো খেয়ে দেহকে নানা রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখে সু-স্বাস্থ্য গ্রহণ করা যায়। টমেটোর নিকোটিনিক এসিড রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। আর গুটানিক এসিড মানব মস্তিষ্ককে সুস্থ সবল রাখে। আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষই দেহের হাড় বা হাড্ডির নানা রোগে ভুগছেন। তার মধ্যে কোমড়ের হাড় বা মেরুদন্ডের হাড়ের সমস্যা আবার মহিলাদের ৪০-৫০ বয়সে মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যায়। তখন দেহে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। আবার বৃদ্ধ বয়সে এ ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগ “অস্টিওপোরোসিস” নামক একটি ঘাতক রোগ দেখা দেয়। তাই সুস্থতার জন্য কম বয়স থেকে টমেটো বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া দেহে রক্ত সঞ্চালন, পেশি সংকোচন, হৃদস্পন্দন, হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ক্যালসিয়াম। তাছাড়া রক্তের সুগার লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিকস রোগীরা টমেটো খেয়ে উপকার পেতে পারেন।
ঔষধী গুণাগুণঃ * যাদের রোগা রোগা শরীর বা শরীরে রক্ত কম বা শরীর দুর্বল লাগে তারা সকাল বিকাল পাকা টমেটো খান। উপকার পাবেন। * যাদের বুকের ব্যাথা বা হার্টের সমস্যা আছে তারা অর্জুন গাছের বাকলের রসের সাথে প্রতিদিন আধা গ্লাস টমেটোর রস নিয়ে তাতে সামান্য চিনি মিশিয়ে খান। উপকার পাবেন। তবে যাদের ডায়াবেটিকস আছে তারা চিনি বাদ দিয়ে খাবেন। * যাদের ওজন কম তারা নিয়ম মাফিক খাওয়া-দাওয়ার পরে প্রতিদিন দুপুরে একটি করে পাকা টমেটো দুই মাস খেলে ওজন কমবে ও স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। * পাঁচ চামচ মধুসহ দুটি পাকা টমেটোর রস প্রতিদিন সকালে খেলে রক্তপিত্ত এবং রক্তের দোষকমে যায়। * যাদের নিয়মিত পায়খানা হয় না অথবা পায়খানা শক্ত হয় তারা সকাল বিকাল টমেটো খান। উপকার পাবেন।
সতর্কতাঃ পাকা টমেটোর সালাদ করে খেলে যদি কারো পেট জ্বালাপোড়ার সমস্যা হয় তাহলে কাচা না খেয়ে তরকারি করে খাওয়াটাই ভালো।
মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।