Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীর্ষ ইয়াবা কারবারীরা আত্মসমর্পণের সুযোগ নিলেও খুলেছে কুতুবদিয়া-ছনুয়া চ্যানেল ইয়াবার নতুন ট্রানজিট

বিশেষ সংবাদদাতা কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২১ পিএম

ইয়াবা চোরাচালান রোধ করতে টেকনাফ সীমান্তে কাজ করছে পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। অভিযানের পর অভিযানে এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত অভিযুক্ত ইয়াবা কারবারী।
এসব দেখে প্রাণ বাঁচাতে আত্মসমর্পণ প্রচেষ্টারত শতাধিক তালিকাভূক্ত ইয়াবা কারবারী। আগামী শনিবার শতাধিক শীর্ষ ইয়াবা কারবারী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে বলে জানাগেছে। আর ওই অনুষ্ঠানে
হাজির থাকছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা।

ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে সীমান্ত অতিক্রম করে ইয়াবা ঢুকা আগের চেয়ে কমে এলেও থেমে নেই সাগর পথে ইয়াবা পাচার। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবায় জড়িয়ে হঠাৎ 'আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ' বনে যাওয়া অনেকেই এখন সাগর পথকে নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। ইয়াবা চালানের ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে কক্সবাজারের পেকুয়া-কুতুবদিয়া ও পার্শ্ববর্তী বাশঁখালীর ছনুয়া চ্যানেল।
এ চ্যানেল দিয়ে উপকূলীয় রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়া ঘোনা ও সুন্দরী পাড়া এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা দেদারছে পাঠাচ্ছে ইয়াবা চালান । জলপথে কঠিন তদারকি না থাকায় ফিশিং ট্রলারই এখন ইয়াবার নির্ভরযোগ্য বাহন। পেকুয়ার রাজাখালী এলাকার ডজনখানেক ব্যক্তি জোটবদ্ধ হয়ে একার্যক্রম চালিয়ে রাতারাতি হয়েছেন কোটিপতি।

অভিনব কৌশলে পাচারকারীরা ইয়াবা পাচার অব্যাহত রাখায় তা বরাবরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের আড়ালে রয়ে গেছে তারা।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, রাজাখালী ইউনিয়নের ইয়াবা কারবারের মূল নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করছেন উত্তর সুন্দরী পাড়ার আব্দুল মালেকের ছেলে আনছারুল ইসলাম টিপু। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান টিপু এখন অঢেল বিত্তের মালিক। অবশ্য তার চোরাচালানি হয়ে উঠার পেছনে তার বাবার নাকি হাত রয়েছে। পিতা আব্দুল মালেকও চোরাকারবারে জড়িয়ে আয় করেন কাড়িকাড়ি টাকা। পিতার দেখানো পথে সহজে হেটে টিপু হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। তার সহযোগীরাও অর্থবিত্তে এখন কোন অংশে কম নয়।

স্থানীয়দের মতে, টিপুদের মালিকানায় এফবি আপরা ও এমবি খোকা নামে দুটি ট্রলার রয়েছে। গভীর সাগরে মাছ ধরতে পাঠানোর নামে তাদের ফিশিং ট্রলারগুলো মিয়ানমার জলসীমার কাছাকাছি পাঠানো হয়। সেখানে ওপারের পার্টনাররাও ট্রলারে এসে ইয়াবার চালান বুঝে দেয়। তা নিয়ে তাদের ট্রলারগুলো কৌশলে ফিরে এসে কুতুবদিয়া-ছনুয়া চ্যানেল দিয়ে বাঁশখালী, আনোয়ারা বা চট্টগ্রাম ফিশারিঘাটে সুবিধামতো ইয়াবা ডেলিভারি দেয়। আবার ছনুয়া চ্যানেল দিয়ে থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ঝালকাঠিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লবণ নিয়ে যাওয়া কার্গো ট্রলারে তুলে দেয়া হয় ইয়াবা চালান। যা অত্যন্ত নিরাপদভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যায় গন্তব্যে।

ইয়াবা সম্রাট খ্যাত টিপুর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত জালাল আহমদ নাকি সমস্ত কারবার দেখভাল করে তাকেন। তিনিও গাড়ি, বাড়ি ও বেশ কয়েকটি ট্রলারের মালিক। জালালের বাবা মোহাম্মদ শরিফ ছিলেন এলাকার নিতান্ত গরীব ব্যক্তি। আর বছর দুয়েক আগেও জালাল উদ্দিন অন্যের ট্রলারে মজুরি করতেন। এখন দৃশ্যমান কোন ব্যবসা না করেও কোটি টাকার মালিক বনে অবস্থার পরিবর্তন দেখে এলাকায় নানা গুঞ্জন চলছে।

স্থানীয়দের মতে, টিপু-জালালের পরিবর্তন দেখে তাদের ইয়াবা সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়েছেন সুন্দরী পাড়া এলাকার মৃত শরীফের ছেলে আফজাল কবির, তার ছেলে শামসু, জসিম, মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন খোকা, উলা মিয়ার ছেলে জামাল, বদরুল আলমের ছেলে মিজান, রাজ্জাক মাঝির ছেলে মাহাবু, গোলাম শরীফের ছেলে আব্দুল মাবুদ, জালাল আহমদের ছেলে ফয়সাল, মৃত ফজল আহমদের ছেলে সাজ্জাদ, আবুল কাশেমের ছেলে শমসু, বকশিয়া ঘোনা এলাকার ছৈয়দ নূরের ছেলে মনছুর, জকরিয়া, আমিন শরিফের ছেলে আহমদ ছবি, আলী আহমদের ছেলে আক্তার কামাল ও নবী হোছেনের ছেলে চিহ্নিত মানব পাচারকারী আব্দুল মজিদ।

তাদের দেখাদেখি ইয়াবা বিকিকিনিতে জড়িয়েছে ইউনিয়নের উলাদিয়া পাড়ার মৃত আমির হামজার ছেলে জামাল, চড়ি পাড়ার আছদ আলী মাঝির ছেলে জাফর মাঝি, বামলা পাড়া এলাকার মৃত গোলাম নবীর ছেলে বদি আলম, শাহ আলমের ছেলে মো. আলম ও সিকদার পাড়া এলাকার আমির হামজার ছেলে জামাল এমনটি দাবি সচেতন মহলের।

স্থানীয়রা আরো জানান, মো. জাকারিয়ার মালিকানাধীন এফবি রাবেয়া ও এমবি তামিম, আব্দুল মালেকের মালিকানাধীন এফবি নজরুল ও এমবি খোকা-২, রুহুল আমিনের মালিকানাধীন এফবি আকিব, গিয়াস উদ্দীন খোকা মালিকানাধীন এফবি জারিত এবং আনছারুল ইসলাম টিপুর মালিকানাধীন এমবি খোকা-১ ইয়াবা পাচার কাজেই কেবল সাগরে যায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিসের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল জানান, সব ধরণের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো-ট্রলারেন্সে রয়েছি আমরা। উপকূলসহ সবখানের মাদক সংশ্লিষ্টদের তালিকাভূক্তি করার কাজ চলছে। আনছারুল ইসলাম টিপু ও জালাল আহমদসহ বেশ কয়েকজনের নাম নতুন তালিকায় এসেছে। তাদের অতীত ও বর্তমান নিয়ে অনুসন্ধান চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আনছারুল ইসলাম টিপুর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি ডাইবার্ট করা। তার সাথে কথা বলা দরকার উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোন রেসপন্স না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, পেকুয়ার কিছু ইউনিয়ন দুর্গম। তার একটি রাজাখালী। এখানকার ইয়াবা সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানাছিল না। এখন খোঁজ লাগানো হবে। নজরদারি বাড়ানো হবে কুতুবদিয়া-ছনুয়া চ্যানেলও। ইয়াবায় যারাই জড়িত থাকুক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়াবা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ