পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আজকে মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। গণতন্ত্র আমাদের সংবিধানের একটা মূলনীতি। সেই আন্দোলন আমরা করে এসেছি। ৩০ ডিসেম্বর যেটা ঘটেছে এটা সবাই প্রহসন বলেছেন, নাটক বলেছেন, মানুষের প্রতি একটা ভাওতাবাজী বলা যেতে পারে। দুঃখজনক এগুলো কেনো করতে হলো, কেনো করতে হচ্ছে? পরেরদিন সকালে বললেন (শেখ হাসিনা) যে, আমি তো পাঁচ বছরের জন্য এসে গেছি। আমরা মনে করি, এসব করে ১৬ কোটি মানুষকে অপমান করা হচ্ছে। ১৬ কোটি মানুষের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এভাবে বলা সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি যে, ১৬ কোটি মানুষ এটা মেনে নেবে না। আমাদের যা করণীয় আছে আমরা করবো। গতকাল (মঙ্গলবার) বিকালে এক আলোচনা সভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরামের সভাপতি একথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন কনফারেন্স লাউঞ্জে গণফোরামের উদ্যোগে উপমহাদেশের রাজনীতিবিদ, গণতনন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুতে এই স্মরণ সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করে মরহুম রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এবার নির্বাচন কিন্তু গণতন্ত্র বা রাজনীতির জন্য হয় নাই, এবার নির্বাচন হয়েছে ব্যবসার জন্য, টাকার জন্য। আগে যারা কমিশন নিয়েছেন মিলিয়ন মিলিয়ন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। যদি সরকার পরিবর্তন না হয়, সেই ব্যবসা যদি না হয়, মেগা প্রজেক্ট যদি না হয়, চট্টগ্রাম টানেল যদি না হয়, ডিপ সি পোর্ট যদি না হয়, পদ্মা সেতু যদি না হয় তাহলে কমিশনের টাকাগুলো ফেরত দেয়া লাগতে পারে। পাঁচ হাজার কোটি টাকা নাকী বিদেশ থেকে পাওয়া গেছে ওমরাহ হজের নামে। টাকা, হায়রে টাকা বাতাসে উড়ে, বাতাসে উড়ে।
তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জনগণকে যে অপমান, অবহেলা, অবজ্ঞা করা হয়েছে। গণতন্ত্রের লাশের ওপর শকুনদের উল্লাস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সেটা কল্পনা করা যায় না। আমাদের খুব দুঃখ হয়, আমরা কী মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, কেনো করেছিলাম। ভোট ডাকাতির জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? প্রশাসন থাকবে। তারা সবাই মিলে ভোটের আগের রাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা হবে। এভাবে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে তারা। দেশে প্রজাতন্ত্র বলে কিছু নাই, আইনের শাসন বলে কিছু না।
খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ টেনে রব বলেন, কবে খালেদা জিয়ার মামলার কখন তারিখ পড়বে এটা নির্ধারিত হয় অন্য জায়গা থেকে, কোর্ট থেকে হয় না। বন্দি অবস্থায় ঢাকার বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ের কারাগারেই আছে ৭ থেকে ১০ হাজার। রাতে বাই রোটেশন ঘুমাতে হয়, লটারি করে কে কখন ঘুমাবে ঠিক করতে হয়। সারা দেশে লক্ষ বিরোধী দলের নেতা-কর্মী জেলে আছে। হাজার হাজার গায়েবি মামলা। বিনা অপরাধে বছরের পর বছর কারাগারে আছে। এদেরকে সহজে মুক্ত করা যাবে না, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া তাদের মুক্তি আসবে না।
তিনি বলেন, আসুন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বশেষ আরেকবার চেষ্টা করে দেখি। লক্ষ লক্ষ শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে যে দেশ অর্জন করেছি সেই দেশের গণতন্ত্র যারা হত্যা করেছে, জনগণকে যারা অপমানিত করেছে, মানবিক মূল্যবোধকে যারা হত্যা করেছে, যারা ভোট ডাকাতি করেছে তাদেরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আরেকবার রাজপথে গণসম্পৃক্ত আন্দোলন করি। কর্মী নির্ভর আন্দোলনে মুক্তি হবে না, সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে নামতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, রাজনৈতিকদের মধ্যে যে সৌহার্দ পরিবেশ সেই বৃটিশ আমলে এমনকি ৪৭ সালের স্বাধীনতার পরেও ছিলো সেটা কিন্তু আজকে আর দেখা যায় না। এখানে রাজনীতির নামে যেটা হচ্ছে হিংসা-বিদ্বেষ। আমেরিকা-যুক্তরাজ্যে যাকে বাই-পার্টিজানাজিজম বলা হয়, সেই বাই-পার্টিনাজিজমের কোনো লেশমাত্র বাংলাদেশে নেই। এই পরিস্থিতিতে আমরা এসেছি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও তার ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দীকে শ্রদ্ধা জানাতে।
আমি শুধু এইটুকু বলছি, এদেশের কল্যাণে, এদেশের মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে, যে স্বাধীনতার জন্য একাত্তর সালে লাখ লাখ মানুষ বুকের রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছিলো, সেই কথা স্মরণ রেখে আজকে রাজনীতির হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে আমরা সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক যে রীতিনীতি, সেই রীতিনীতিতে আস্থা রেখে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে এমন একটি রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করি, যে পরিবেশ দেখে স্বর্গ থেকেও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর আত্মা শান্তি পাবে এই কামনা আমি করছি।
সদ্য কারামুক্ত ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, আমি শুধু এটা বলব, বর্তমান যুগে সারা পৃথিবীতে যেখানে রাজতন্ত্র, যেখানে যেখানে স্বৈরতন্ত্র হচ্ছে সেখানে পরিস্থিতিটা ন্যাশনাল থাকে না, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিসের মধ্যে চলে যায়। সেখানে আমাদের বাস্তবতায় আমলাদের জনগণের কর্মচারিদের সহযোগিতায় আমাদেরকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। নিজেরা নিজেদেরকে বঞ্চিত করেছি। স্বাধীন দেশের নাগরিকের জন্য এর চাইতে চরম লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।
আজকে কোথায় নেমে এসেছি রাজনীতিতে যে, নিজের অধিকার নিজেরা রক্ষা করতে পারছি না। রাজনীতি করে বড়লোক হওয়া, রাজনীতি এখন ব্যবসা হয়ে গেছে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব ও ফজলুল হক সাহেব যে রাজনীতি করেছেন, আজকের যে রাজনীতি এটা ব্যবসায়ী রাজনীতি, তাতে নীতি-আদর্শ খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্যক্তির প্রতি পূজা, ব্যক্তিকে সুযোগ দেবেন, ব্যক্তিকে সুযোগ দেয়া হবে না- এই তাদের চিন্তায় মাথার মধ্যে আছে। এটা আমাদের বাংলাদেশের রাজনীতি নয়। মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা যে রাজনীতি পেয়েছি, সেই রাজনীতিতে সাংবাদিকরা সাংবাদিক থাকবে না, আইনজীবীরা আইনজীবী থাকবে না, রাজনীতিবিদরা রাজনীতিবিদ থাকবে না। আমলাদের কথা মতো চলবে, দেশ আমলাতান্ত্রিকতায় চলবে। এসমস্ত শিক্ষা তো সোহরাওয়ার্দী সাহেবের আওয়ামী লীগে কখনো ছিলো না। রাজনীতির দিন শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে রাজনীতি রাজনীতিতে নেই।
দেশে আমলাতন্ত্র চলাচ্ছে। আমাদের দেশের পুলিশ আমাদের জনগণকে পিটাবে- এটা বেদনার। নিজেরাও চিন্তা করুন, সোহরাওয়ার্দী সাহেব কি এই রাজনীতি করেছেন? তিনি সুবিধাবাদী রাজনীতি করেননি, বাড়ি-গাড়ির জন্য ছুটাছুটি করেন নাই। একদম নি:স্ব হয়ে মারা গেছেন। তার চিকিৎসার অর্থ ধার করে দিতে হয়েছে।
দুই বছরের বড় রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার বর্ণাঢ্য জীবন তুলে ধরেন ব্যারিস্টার মঈনুল। তিনি বলেন, রাশেদ সোহরাওয়ার্দী নিয়ে কথা বলা আমার জন্য কষ্টের। আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। ঢাকায় আসলে আমাদের সাথেই থাকতো। উদার মনের অধিকারী সে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দী লন্ডনে অবস্থানের জন্য মুক্তিযুদ্ধে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিলো। আবু সাঈদ চৌধুরী সাহেবের সাথে থাকতেন। এই সম্পর্কের জন্য তার আত্বীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক কাটআপ হয়ে গেলো। হি ওয়াজ সাপোর্টেড ইন লিবারেশন ওয়ার। আর তারা হলো পাকিস্তানি।
বাবার (হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) মহৎ উদ্দেশ্য সে কখনোই ছোট হতে দেয়নি। সব সময় বাবাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন। অত্যন্ত অমায়িক, অত্যন্ত ভদ্র। অভাব টানাটানির মধ্যে থাকলেও কারো কাছে কিছুই চাইতো না। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। বাস্তবতা হলো এটা, যে দলের সে (হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) প্রতিষ্ঠাতা যে দলটাকে ব্যবহার করে হোক বা অপব্যবহার করে হোক অনেকে রাজকীয় হাল-হালতে আছেন তারা কেউ তার (রাশেদ সোহরাওয়ার্দী) দিকে তাকায়নি। এটা খুবই কষ্ট। তার দেহটা পর্যন্ত বাংলাদেশে আনা হলো না। লন্ডনে তার কেউ নেই। তার ডেডবডিটা আওয়ামী লীগ সরকারে আছেন তারা ইচ্ছা করলে আনতে পারতেন।
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় পেশাজীবী নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোক্কাবির খান, আমসা আমিন বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।