পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জানুয়ারির শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবানের মধ্যে শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হওয়া ঠেকাবে এ মর্মে তালিবানের অঙ্গীকারের বিনিময়ে সেখান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার বিষয়ে মৌলিক সমঝোতায় পৌঁছার পর শান্তি আলোচনায় এ অগ্রগতি অর্জিত হয়। তালিবানের আফগান বিরোধীদের নিয়ে একটি ব্যাপক সমাধানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবানের মধ্যে একটি চুক্তি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং তা হচ্ছে বিজয় ছাড়াই যুদ্ধ থেকে সরে আসার উপায়। আফগানিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানোর আশঙ্কা ও তালিবানকে ক্ষমতার বাইরে রাখাই হচ্ছে আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য রাখার মূল কারণ, তবে এখন তা বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি কল্পনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের হামলার হুমকি অতিরঞ্জিত। আমি আমেরিকান ও আফগান কর্মকর্তাদের দাবিতে বিস্মিত হয়েছি যে, আফগানিস্তানে ২০টি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশি^ক যুদ্ধে তার দেশকে ‘রণাঙ্গন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার বক্তব্য আফগান সংঘাতকে ভীষণ গোলমেলে করে তুলেছে বলে মনে হয়।
বাস্তবতা হচ্ছে, আফগান যুদ্ধ একটি দ্বিমুখী যুদ্ধ যা আধুনিক যুদ্ধ মানচিত্রের টুকরো মানচিত্রে ক্রমেই এক বিরল ঘটনা হয়ে উঠছে। আফগানিস্তানের যুদ্ধ সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া বা ইয়েমেনের চেয়ে সহজ। আফগানিস্তানে প্রায় প্রতিটি যুদ্ধই হয় সরকারি বাহিনী ও তালিবানের মধ্যে যার অর্থ বিদ্রোহী মানেই তালিবান।
গত দু’দশকে আফগানিস্তানে বিদেশী জিহাদি গ্রুপগুলোর অভ্যুদয় ঘটেছে, তাদের পরিবর্তন হয়েছে ও হীনবল হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে একটি শক্তিশালী বাহিনী থেকে এক প্রান্তিক অভিনেতায় পরিণত হয়েছে তালিবান। এটা ঘটেছে তাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার অবিরাম অভিযান এবং আংশিক ভাবে তাদের মনোযোগ মধ্যপ্রাচ্যে সরে যাওয়ার কারণে।
আফগানিস্তানে অন্য জঙ্গি গ্রুপগুলোর পতনের কারণ হচ্ছে সেদেশে প্রায় একচেটিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার তালিবানি হিসাব করা চেষ্টা। গত জুনে তালিবান যখন তিনদিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে তা থেকে এটা বোঝা গিয়েছিল। ইসলামিক স্টেটের খোরাসান প্রদেশ (আই.এস.কে.পি) শাখা ছাড়া আর কোনো জঙ্গি গ্রুপ সে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেনি। বিদেশি জিহাদি গ্রুপগুলো এবং তাদের নিজের কট্টরপন্থী কমান্ডারদের বিরুদ্ধে তালিবানের শুদ্ধি অভিযানের পরিণতিতে ২০১৫ সালে আই. এস. কে. পির জন্ম হয়।
আই. এস. কে. পি যখন পূর্ব আফগানিস্তানে আত্মপ্রকাশ করে তালিবানই তাদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান চালায়। যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকারি বাহিনীর সাথে তালিবান হচ্ছে তৃতীয় শক্তি যাদের অব্যাহত অভিযান আই. এস. কে. পিকে পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত কয়েকটি পাহাড়ি এলাকায় কোণঠাসা করে ফেলে যদিও তাদের আবার পুনরুজ্জীবিত হতে দেখা গেছে।
আক্রমণের শিকার ও বিচ্ছিন্ন আই. এস. কে. পি হচ্ছে তালিবানের পর বৃহত্তম অরাষ্ট্রীয় গ্রুপ। অন্য ২০টি সন্ত্রাসী গ্রুপের শক্তি ও হামলা চালানোর সক্ষমতা সামান্য। তাদের অর্ধেকেরও বেশি পাকিস্তানের স্থানীয় গ্রুপ, কিছু হচ্ছে দীর্ঘদিনের দলছুট, অন্যরা নিয়মিত তাদের আদর্শ ও পরিচয় পাল্টায়। তাদের অধিকাংশই পাকিস্তানের শিয়া বা সংখ্যালঘুদের ও মাঝেমধ্যে ভারতীয়দের টার্গেট করে।
অন্যরা হচ্ছে দুর্বল ও বিভক্ত মধ্য এশীয় সংগঠনসমূহ যারা পাশ্চাত্য নয়, স্ব স্ব দেশে দমন-নিপীড়নের শিকার হওয়ায় সেসব দেশের প্রতি বৈরী মনোভাবাপন্ন। এসব গ্রুপের কোনো কোনোটিতে মাত্র ২০ বা ৩০ জন সদস্য রয়েছে। এমন কোনো প্রকাশ্য প্রমাণ নেই যে আল কায়েদা ও আই. এস. কে. পি ছাড়া আফগানিস্তানে তৎপর আর কোনো গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কার্যকর হুমকি। ২০০১ সালের পর এ রকম কোনো গ্রুপই যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে হামলার সাথে সম্পৃক্ত নয়।
তালিবানের সাথে আমেরিকার আলোচনার সমালোচকদের প্রশ্ন যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপকে হামলা চালাতে দেবে না বলে তালিবানের আশ্বাসকে বিশ্বাস করা যায় কিনা। যে কোনো গ্রুপ বা রাষ্ট্রের মত তালিবানও তাদের নিজ স্বার্থে কাজ করে। তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা মূল্যায়নের চেষ্টার আগে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হচ্ছে, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে আফগানিস্তান থেকে বহিষ্কারের জন্য তালিবানের নিজস্ব কোনো কারণ আছে কী? তাদের কী তা করার ক্ষমতাও আছে?
আমি মাঠে আন্তর্জাতিক গ্রুপগুলোর সাথে তালিবানের সম্পর্কের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করেছি। আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে তালিবানের সর্বাত্মক প্রদর্শন করে যে তারা যাকে প্রতিযোগী বলে মনে করে সেই জিহাদি গ্রুপগুলোকে মোকাবেলা করার ইচ্ছা ও সক্ষমতা তাদের আছে।
তালিবান হচ্ছে কোনো আন্তর্জাতিক উচ্চাকাক্সক্ষাহীন একটি জাতীয়তাবাদী ও ঐতিহ্যবাদী গ্রুপ। আই. এস. কে. পির আগমনের পর গত চার বছর ধরে তালিবানের আদর্শের এসব বৈশিষ্ট্য জোরদার হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের আদর্শের সাথে এক নন এমন কমান্ডারদের তালিবান বাদ দিয়েছে।
তালিবান অতীতে আল কায়েদার সাথে কৌশলগত সমঝোতা করেছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে তালিবান কি আবারো আল কায়েদাকে আতিথ্য দেবে অথবা মার্কিন প্রত্যাহারের পর আল কায়েদার পুনরুত্থান রোধে ব্যর্থ হবে?
আল কায়েদা তালিবান নেতাদের সাথে শত শত আলোচনার পর আমি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে বাস্তববাদীরা ও তালিবানের মধ্যে ওসামা বিন লাদেনের প্রাক্তন সহযোগীরা আল কায়েদা ও তার মতবাদ বিষয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক জিহাদিদের আশ্রয়দান করায় তালিবানকে সরকার হারিয়ে ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে তার মূল্য দিতে হয়েছে। বহু তালিবান সদস্য আল কায়েদাকে তাদের প্রতি হুমকি মনে করেন। কোনো আন্তর্জাতিক জিহাদি গ্রুপের জন্য তালিবানের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় কম সহানুভ‚তিই দেখা যায়।
আল কায়েদা ও অন্য জিহাদি গ্রুপগুলোর প্রতি স্পষ্ট ও প্রকাশ্য প্রত্যাখ্যান , সে সাথে তাদের পুনরুত্থান প্রতিহত করার বিশ্বাসযোগ্য অঙ্গীকার আসবে রাজনৈতিক সমাধানের অংশ হিসেবে। আফগান মূলধারার রাজনীতিতে তালিবানের আনার চুক্তি বিদ্রোহী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সাথে তাদের চুক্তি স্বাক্ষরের আগ্রহ ও সক্ষমতা জোরদার করার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
আফগানিস্তানে সৈন্য মোতায়েন রাখা ও এক অন্তহীন যুদ্ধ করার চাইতে আফগান সরকারে যোগ দেয়ার জন্য সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অঙ্গীকারকারী তালিবান পাশ্চাত্যে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধে অনেক বেশি কার্যকর বাধা হতে পারে। (নিবন্ধকার বোরহান ওসমান দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশ্লেষক।)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।