Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ট্রাম্পের বিজয়ের পর আমেরিকায় ‘হেট ক্রাইম’ কি বাড়ছে?

প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘হেট ক্রাইম’র অভিযোগের বেশকিছু খবর পোস্ট করা হয়েছে। ‘আমি আমার কলেজ লাইব্রেরিতে বসেছিলাম।
ট্রাম্পের ছবিওয়ালা শার্ট পরা লম্বা চওড়া এক ব্যক্তি হঠাৎ আমার পেছনে এসে দাঁড়াল। আমি মুখ ঘোরাতে গেছি, কিন্তু তার আগেই দেখলাম একটা হাত আমার হিজাব টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করছে’। নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্রী বিবিসি ট্রেন্ডিং-কে বলেছেন, তিনি কোনোমতে ওই হামলাকারীর কবল থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছেন।
ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি ঐ ব্যক্তিকে বললাম, আপনি যেমনটা চান তেমনটা বিশ্বাস করার অধিকার আপনার আছে। আমাকেও আপনি যা বলতে চান বলতে পারেন। কিন্তু আমার গায়ে হাত দেবার কোনো অধিকার আপনার নেই। লোকটি তখন সরে গেল, কিন্তু বলল তুমি আমার দিকে গ্রেনেড ছুঁড়বে নাকি?’
মঙ্গলবারের নির্বাচনের পর থেকে এ ধরনের বেশকিছু অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট ও শেয়ার করা হয়েছে বলে বিবিসি ট্রেন্ডিং খবর দিচ্ছে। এ ধরনের সব অভিযোগের ক্ষেত্রেই বলা হচ্ছে এসব ঘটনার পেছনে কাজ করছে ধর্ম ও বর্ণ বিদ্বেষ। কিন্তু বিবিসি বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব অভিযোগের সত্যতা বা মঙ্গলবারের নির্বাচনের সঙ্গে এর আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা যাচাই করা অসম্ভব। নিউ মেক্সিকোর ঘটনায় ঐ ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঐ ঘটনার কথা জানিয়েছে, কিন্তু পুলিশে কোনো খবর দেয়নি।
‘আমি কারো বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করতে চাই না, কারণ কারো মুখোশ খোলাটা আমার কাজ নয়,’ বলছেন ঐ ছাত্রী। ‘লোকটি ভুল করেছে এবং এই ঘটনা যেভাবে প্রচার পেয়েছে তারপর আশা করি সে শোধরাবে’।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার বিষয়ে তারা তদন্ত করছে, তবে আইনি বিধির কারণে এসব ঘটনা নিয়ে তারা খোলাখুলি মন্তব্য করতে অপারগ। ‘হেট ক্রাইম’ বা বিদ্বেষমূলক যেসব অপরাধের খবর সামাজিক মাধ্যমে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে :
ফিলাডেলফিয়াতে বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে ট্রাম্প সমর্থক নানা দেয়াল লিখনের সঙ্গে নাৎসীদের বেশ কয়েকটি প্রতীকী স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকে দেয়া হয়েছে। একটি ঘটনায় গাড়ির গায়ে বর্ণবাদী মন্তব্যের পাশে লেখা হয়েছে ‘ট্রাম্পের শাসন’।
নিউ ইয়র্ক স্টেটের ওয়েলসভিলের ছোট এক গ্রামে খেলার মাঠের দেয়ালে স্বস্তিকা চিহ্নের পাশে লেখা হয়েছে ‘আমেরিকা আবার শ্বেতাঙ্গদের হোক’।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগোতে এক নারীর ব্যাগ ও গাড়ি ছিনিয়ে নেয়া দু’জন লোক ডাকাতির সময় ‘ট্রাম্প ও মুসলমান’ সংক্রান্ত মন্তব্য করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ বলছে তারা এই ঘটনাকে ‘হেট ক্রাইম’ হিসেবে দেখছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত করছে। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরাও আক্রান্ত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় এক তরুণী ইনস্টাগ্রামে ট্রাম্পকে সমর্থন করে মন্তব্য করায় পরদিন কলেজে তার উপর হামলা চালানো হয়েছে। তার বাবা-মা বলেছেন, ঐ হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
শিকাগোতে ট্রাফিক দুর্ঘটনার শিকার এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিকে মারধোর করে তার জিনিসপত্র লুটপাট করেছে একদল কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। ঐ হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে যাতে সেখানে জড়ো হওয়া লোকজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে ‘ডোন্ট ভোট ট্রাম্প’।
বানানো গল্পও শোনা যাচ্ছে এই হুজুগে। লুইসিয়ানায় এক ছাত্র বর্ণবাদী হামলার শিকার হয়েছে এমন খবর ছড়িয়েছে বলে দুই যুবক তাকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবিদ্বেষী গালিগালাজ করেছে। পরে জানা যায় গোটা ঘটনাই সাজানো। এমনকি সংখ্যালঘুদের ওপর পুরনো হামলা ও হেট ক্রাইমের অনেক খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে- যেগুলো নির্বাচনের অনেক আগের ঘটনা- নির্বাচনের সঙ্গে সেগুলোর কোনো যোগাযোগ নেই।
বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা নানা ঘটনা, নানা মন্তব্য হাজার হাজার বার শেয়ার হচ্ছে।
ব্রিটেনে জুন মাসে ব্রেক্সিট গণভোটের পরপরই ধর্ম ও বর্ণ বিদ্বেষের ঘটনা এক লাফে ৪১ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। আগস্টে এ ধরনের ঘটনার খবর কমলেও তার মাত্রা ব্রিটেনে আগের রেকর্ডের তুলনায় বেশি বলেই বলা হচ্ছে। তবে একথাও বলা হচ্ছে যে, ব্রেক্সিট ভোটের পর এ ধরনের ঘটনা পুলিশে নথিভুক্ত করার রেওয়াজ বেড়ে যাওয়ায় তা চোখে পড়ছে বেশি এবং পরিসংখ্যানেও তার প্রতিফলন ঘটছে।
আমেরিকাতেও বর্ণবৈষম্য নজিরবিহীন কোনো ঘটনা নয়। তবে মিঃ ট্রাম্পের জয়লাভ এ ধরনের ‘হেট ক্রাইম’ আসলেই বাড়িয়ে দিয়েছে কিনা তা বুঝতে আরও সময় লাগবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ট্রাম্পকে অবশ্যই ইউরোপ সম্পর্কে জানতে হবে : জাঙ্কার
ইউরোপীয় কমিশনের (ইইউ) প্রধান জ্যাঁ-ক্লঁদ জাঙ্কার বলেন, ট্রাম্পকে অবশ্যই ইউরোপ সম্পর্কে জানতে হবে। গত শুক্রবার তিনি লুক্সেবার্গে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ট্রাম্পের বিজয় সম্পর্কে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, বেলজিয়াম ইউরোপের কোনো একটি জায়গার একটি গ্রাম।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ীকে জানাতে হবে, ইউরোপ কী এবং কীভাবে এটি চলে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেসব দেশ সম্পর্কে ট্রাম্পের ধারণা নেই আগামী দুই বছর তিনি সেসব দেশ ভ্রমণ করবেন। আর আমার বিশ্বাস, আমাদের এ দুই বছর বৃথা সময় নষ্ট করতে হবে।’
জাঙ্কার বলেন, ট্রাম্প ন্যাটো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এটা ক্ষতিকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কারণ এটা ইউরোপকে সুরক্ষার মডেল।
ওবামার স্বাস্থ্য সেবার মূল বিষয়গুলো ট্রাম্পের পছন্দ
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সার্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা পুরোপুরি বাতিল করবেন না। বরং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রেখে এর কিছু অংশ সংশোধন করবেন। গতকাল ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ কথা বলেন। নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত স্বাস্থ্যসেবা বাতিল করাই হবে তার প্রথম কাজ।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে ট্রাম্প বলেন, ওবামার স্বাস্থ্যবিমার বৈষম্য দূর করা সংক্রান্ত বিষয় ও মা-বাবার স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত রাখার বিষয়গুলো তার পছন্দ। তিনি বিমার এ দুটি নীতির ব্যাপারে বলেন, ‘আমি এগুলো খুবই পছন্দ করি।’
হোয়াইট হাউসে গত বৃহস্পতিবার বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করেন ট্রাম্প। ওই বৈঠক এবং ওবামার পরামর্শ নিয়ে ওয়ালস্ট্রিটের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ট্রাম্প। তিনি জানান, বৈঠকে স্বাস্থ্যবিমা পুরোপুরি বাতিল না করতে ওবামা পরামর্শ দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ওবামার পরামর্শ তিনি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন। তিনি আরও বলেন, তিনি দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান। এমন দেশ চান, যেখানে সবাই একে অন্যকে ভালোবাসবে।
সিবিএসকে দেয়া পৃথক এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ওবামার স্বাস্থ্যবিমার যে বিষয়গুলো তিনি রেখে দিতে চাচ্ছেন সেগুলো সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বিলটি সংশোধন করা হবে। আমেরিকার জনগণ যাতে কম টাকায় উন্নত স্বাস্থ্য সেবা পায় তার জন্য বিলে পরিবর্তন আনা হবে। ষাট মিনিটের একটি অনুষ্ঠানের জন্য সিবিএস তার এ সাক্ষাৎকার নেয়। এটি আজ (রোববার) প্রচার করা হবে। নির্বাচনী প্রচার চলানোর সময় ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্টের এ স্বাস্থ্য বিমাকে পুরোপুরি একটা বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেছিলেন।
সিএনএন থেকে ট্রাম্পের সাবেক সহযোগীর পদত্যাগ
মার্কিন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের ব্যবস্থাপক কোরি লিউয়ানদোস্কি দেশটির সংবাদমাধ্যম সিএনএন থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি ট্রাম্পের প্রশাসনে যোগ দিতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। এর আগে জুনে ট্রাম্প শিবিরের প্রচারণার সময় ব্রেইবার্ট-এর নারী সাংবাদিক মিশেল ফিল্ডসকে আঘাত করার জন্য লিউয়ানদোস্কিকে ট্রাম্প শিবির বহিষ্কার করে। এরপর তাকে নিয়োগ দেয় সিএনএন। ওই মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের প্রেসিডেন্ট জেফ জাকার লিউয়ানদোস্কির নিয়োগের বিষয়ে সাফাই গেয়ে আগস্টে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, সিএনএন-এ রিপাবলিকান প্রার্থীর সহযোগীও রয়েছেন।’ তবে বহিষ্কৃত সহযোগীকে কণ্ঠস্বর বানানোর কথা বলে বিতর্কের জন্ম দেয় তারা।
এবার লিউয়ানদোস্কির পদত্যাগের পরে সিএনএন-এর এক মুখপাত্র অপর মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে বলেছেন, লিউয়ানদোস্কি সিএনএন-এ যোগ দেয়ায় কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কারণ তিনি ট্রাম্প শিবিরের প্রচারণার সময় সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই লিউয়ানদোস্কি সিএনএন থেকে পদত্যাগ করলেন। এনবিসি নিউজ বলছে, ট্রাম্পের সঙ্গে লিউয়ানদোস্কির সম্পর্ক চুকে যায়নি এখনও। শুক্রবার ট্রাম্পের অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা কমিটি গঠনের সভাতেও তাকে দেখা গেছে। সিএনএন মানির বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো বলছে, লিউয়ানদোস্কির ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেয়ার ব্যাপারে গুঞ্জন শোনা গেছে সংবাদ মাধ্যমে। তবে ঠিক কোন পদে তিনি নিয়োগ পেতে পারেন, নিশ্চিত করে তা বলতে পারেনি সিএনএন। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্পের বিজয়ের পর আমেরিকায় ‘হেট ক্রাইম’ কি বাড়ছে?
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ