পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন কাটরা মসজিদ। ভারতের মুর্শিদাবাদ রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে কাটরা মসজিদ অবস্থিত। নিয়মিত শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন মসজিদটি দেখতে। মসজিদের প্রধান প্রবেশ দ্বারে ঢুকতেই চোখে পড়ে গাছ গাছালির আচ্ছাদিত সবুজ বাগান। দুই পাশের দুই উঁচু বুরুজ স্বাগত জানায় দর্শনার্থীদের। প্রবেশ পথেই দর্শনার্থীরা থমকে দাঁড়ায় লাল ইটের চোখ জুড়ানো স্থাপনাটি দেখে। দর্শনার্থীরা প্রবল আগ্রহ ও উচ্ছাসের ফলে ডান নাকি বাম কোন পথে যাবেন ঠিক ঠাহর করতে পারেন না। তখনই সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন কয়েকজন গাইড। প্রথমে বিরক্ত বোধ করলেও তাদের কথা শোনে ভালো লাগে। খুব দ্রুতই বলতে থাকেন কাটারা মসজিদের ইতিহাস। সেখানকার গাইড বাবুল দেবনাথ জানান, প্রতিদিন এখানে যারা আসেন তাদের এ মসজিদের ইতিহাস জানাতে পারলে ভালো লাগে। দর্শনার্থীদের সেবা করাই তার পেশা। এ পেশাতেই তার সংসার চলে। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করান। কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা গৌরভ জানান, মুর্শিদাবাদের প্রত্যেক এলাকাতেই রয়েছে ইতিহাসের নিদর্শন। এখানে বাংলার নবাবদের শাসন আমলের নিদর্শনগুলো দেখা যায়। জানা যায় অজানা অনেক তথ্য। ইতিহাসের সাক্ষী কাটারা মসজিদে আগেও তিনি এসেছেন। পরিবারের লোকজন নিয়ে এখানে এসেছেন তিনি।
জানা যায়, ঢাকা থেকে ১৭১৭ সালে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত করেন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁন। তার নামানুসারে নতুন রাজধানীর নাম হয় মুর্শিদাবাদ। কাটরা মানে বাজার। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁনের ইচ্ছা অনুযায়ী বাজারের মধ্যে নির্মাণ করা হয় মসজিদ। কাটরা মসজিদটি নতুন রাজধানীর জামে মসজিদ হিসেবে নির্মিত হয়। বৃদ্ধাবস্থায় নবাব মুর্শিদকুলি খাঁন তার কবর একটি মসজিদের পাশে হোক ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি মসজিদটি নির্মাণের দায়িত্ব দেন বিশ্বস্ত কারিগর মুরাদ ফরাস খাঁনের উপর।
মসজিদটি চতুর্ভূজাকৃতির। সামনের দিকে রয়েছে পাঁচটি প্রবেশ খিলান। সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠতেই চোখে পরবে পাঁচটি গম্বুজ। চার কোণে চারটি বুরুজ। সিঁড়ি বেয়ে বুরুজের উপর পর্যন্ত যাওয়া যায়। মসজিদের সামনের বুরুজ বা টাওয়ারগুলো ৭০ ফুট উঁচু এবং প্রায় ২০ ফুট চওড়া। মসজিদটি ১৮৯৭ সালে ভ‚মিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বর্তমানে পশ্চিম পাশের দুটি বুরুজ আছে। এখন সিঁড়ি বেয়ে এসব বুরুজে উঠা নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ। দুই কোনার উঁচু দুটি বুরুজ বা টাওয়ার যেগুলোতে বন্দুক স্থাপনের জন্য ছিদ্র রয়েছে। কাটরার কক্ষগুলি মাদরাসা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সর্বমোট ১৫টি মিহরাব রয়েছে মসজিদটির পশ্চিম দেয়ালে। মসজিদের কক্ষে প্রায় ৭শ’ লোক কোরআন পড়তে পারত। মসজিদে ২ হাজার নামাজ আদায়কারী ধারণ করতে পারে।
নবাব মুর্শিদকুলি খাঁনের কবর রয়েছে মসজিদে প্রবেশ তোরনের নিচে। তার ইচ্ছা অনুসারে তাকে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে। তিনি জীবনে পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন। এটি তার নিরহঙ্কারতার প্রকাশ। তিনি চেয়েছেন তার কবর এমন একস্থানে হোক যেখানে তিনি মসজিদে প্রবেশকারী পূণ্যবান লোকের পদস্পর্শ পান। সেভাবেই তাকে কবর দেয়া হয়। বর্তমানে কাটারা মসজিদের তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব আর্কিওলজিক্যাল সারভে অব ইন্ডিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপর রয়েছে। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দর্শনার্থীদের চোখ ভরা প্রাপ্তির হাসি নিয়েই ফিরতে হয় নবাব মুর্শিদকুলী খাঁনের অনন্য স্থাপনা কাটারা মসজিদ দেখে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।