চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মানবসমাজের জন্য শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাই পারে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রকৃত কল্যান ও সফলতা বয়ে আনতে। (বুখারী : ৭১)। মহানবী (সা.) এর প্রতি প্রথম নির্দেশনাই ছিল শিক্ষা সংক্রান্ত। যেমন : ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আলাক : ১)। এখানে আল্লাহ তায়ালা পুরুষকে যেমন শিক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তেমন নারীকেও শিক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামে শিক্ষা অর্জন করা নর-নারীর সমান অধিকার। কারণ শিক্ষা ছাড়া আল্লাহকে চেনা যাবে না, আল্লাহর হুকুম মানা যাবে না বিধায় শিক্ষা গ্রহণ করা প্রথম ও প্রধান ফরজ। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে- ‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, মহাক্ষমাশীল।’ (সূরা ফাতির : ২৮)। শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা শুধু পুরুষদের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়। আর সে জন্যই মহানবী দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ : ২২৪)। সুতরাং ইসলাম নারী-পুরুষ নির্বেশেষে সবার জন্য শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে।
মহানবীর কাছে পুরুষ সাহাবিরা যেমন জ্ঞান শিখতেন, তেমনি মহিলা সাহাবিরা জ্ঞান শিক্ষা করতেন। মহানবী (সা.) কে শিক্ষানুরাগী মহিলারা একবার বলছিলেন, আপনি জ্ঞান শিক্ষার কাজে সবসময় পুরুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন। আমাদের জন্যও একটা দিন ধার্য করুন। মহানবি (সা.) সে অনুযায়ী তাঁদের আলাদা শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। রসুল (সা.) উম্মাহতুল মিমিনীনের লেখা শেখার ব্যবস্থা করেছিলেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফছা (রা.), হযরত আয়েশা (রা.) এবং অন্যান্য মহিলা সাহাবীরা লিখতে জানতেন। হযরত আয়েশা (রা.) সমকালীন শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তা বোঝা যায় নিম্নোক্ত বর্ণনা থেকে। হযরত ওরওয়া বিন যোবায়ের তাঁর খালা সম্পর্কে বলেন, ফারায়েযের ইলম, হালাল-হারামের মাসায়েল এবং কোরআনের ইলমের ক্ষেত্রে হযরত আয়েশা (রা.) এর চেয়ে বড় আলিম আমি দেখিনি। হযরত ওরওয়া আরো বলেন, কবিতা, সাহিত্য, চিকিৎসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে আয়েশা (রা.) চেয়ে বড় জ্ঞানী আমি দেখিনি। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তাঁর মর্যাদা ছিলো অনেক পুরুষ সাহাবীরও উপরে। হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০, যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রসিদ্ধ তাবেঈ হযরত মসরূক বলেন, আল্লাহর কসম, বড় বড় সাহাবাকে আমি আয়েশা (রা.) এর কাছে মীরাছের মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি। সাহাবীরা যখনই কোন মাসআলার ব্যাপারে সন্দিহান হতেন বা সমস্যায় পড়তেন তখনই তার পর্দার আড়াল থেকে হযরত আয়শা (রা.) এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করতেন এবং সঠিক সমাধান পেয়ে যেতেন। এর দ্বারা বুঝা গেল, পর্দার সাথে মহিলাদের জন্য শিক্ষকতা করা বা মহিলাদের নিকট গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার ব্যাপারে ইসলামের কোনো বাধা নেই। আর পর্দার বিধান নারীকে আবদ্ধ করার জন্য নয়, নারীকে শিক্ষা বিমুখ রাখার জন্যও নয় বরং নারীর সম্ভ্রম রক্ষা ও নিরাপত্তা দানের জন্যই পর্দার বিধান রাখা হয়েছে। শিক্ষাও যেমন নারীর জন্য জরুরী ঠিক পর্দাও নারীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জরুরী।
যেসকল মহিলা সাহাবী কবিখ্যাতি অর্জন করেছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আরওয়া বিনতে আব্দুল মুত্তালিব, সুদা বিনতে কোরায়য, রসুল (সা.) এর দুধবোন শায়মা, আতেকা বিনতে যায়দ, হযরত খানসা প্রমুখ। হযরত খানসা (রা.) এর কবিতা রসুল (সা.) অত্যন্ত আগ্রহ ভরে শ্রবণ করতেন এবং বলতেন, হে খানসা, আরো কিছু শোনাও। সুতরাং ইসলামের সূচনা লগ্ন থেকেই নারীসমাজের জ্ঞান চর্চার ব্যপারে নারী শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ছিল এবং এ ধারাবাহিকতা পরবর্তী যুগেও অব্যাহত ছিলো। ইবনে আসাকির বলেছেন, ইমাম বুখারী যেসকল নারী মুহাদ্দিস থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন তার সংখ্যা ছিলো আশির উপরে।
পুরুষের মত নারীরাও শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং শিক্ষার প্রসারে অবদান রাখবে এ সম্পর্কিত নির্দেশনা পবিত্র কোরআনেই রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে নবী পরিবার! তোমাদের গৃহে যে আল্লাহর বাণী পাঠ করা হয় এবং হিকমত পরিবেশন করা হয় তা তোমরা স্মরণ কর।’ (সূরা আহযাব : ৩৪)। নারীদের শিক্ষা প্রদানের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা নিসা : ১৯)। কারণ মা যদি মূর্খ হয়, তবে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বহুলাংশে মূর্খই থেকে যাবে। মা যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে তার সন্তানেরাও হবে সুশিক্ষিত। শিশুদের উপর মায়ের চারিত্রিক প্রভাব থাকে সব চেয়ে বেশি। তাই শিশুর আদব-শিষ্টাচার নির্ভর করে একমাত্র তার মায়ের শিক্ষার উপরই। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারী : ৪৭৩৯)। এ হাদীসে ইলম শিক্ষার যে ফজিলতের কথা বলা হয়েছে তাও নারী-পুরুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।