Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অনলাইনে ৩২ শতাংশ শিশু ঝুঁকিতে: ইউনিসেফের রিপোর্ট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:১৮ এএম

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৩২ ভাগ শিশু অনলাইনে সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টার পরিচালিত এক জরিপে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাপড়ুয়া ১২৮১ জনের ওপর ওই জরিপ চালানো হয়েছে, যাদের বয়স ১০ থেকে ১৭ বছর। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক সংস্থাটির তরফে এখনই অনলাইনে শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে।

‘বাংলাদেশে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ শিরোনামে পরিচালিত জরিপটি ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রীও শিশুদের ঝুঁকির মুখে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এটি মোকাবিলায় সরকার গৃহীত বিভিন্ন মেয়াদি উদ্যোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন। সমীক্ষা বা জরিপ প্রতিবেদন বিষয়ে ইউনিসেফ জানায়- তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত জরিপ এবং ‘এন্ডভায়োলেন্স ইয়ুথ টকস’ শিরোনামে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক আলোচনার ভিত্তিতে ওই রিপোর্ট বা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

জরিপের বিষয়ে প্রায় ৫ সপ্তাহ ধরে বিশ্বব্যাপী ১৬০টি দেশের ১০ লাখের বেশি লোক তাদের মতামত দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিশুদের ওপর এই প্রথম এমন সমীক্ষা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়- বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের মধ্যে ধর্মীয় উস্কানি দেয়ার বিষয়টিও সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ১০ শতাংশ শিশু ধর্মীয় উস্কানিমূলক বিষয়বস্তুর মুখোমুখি হওয়ার অভিযোগ করেছে। কিশোর বয়সীরা (১৬ থেকে ১৭ বছর) অন্য বয়সীদের তুলনায় এই ধরনের উস্কানিমূলক বিষয়বস্তুর সম্মুখীন হচ্ছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে ইউনিসেফের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রধান এডয়ার্ড বেগবেদার বলেন, বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর কথা আমরা শুনেছি। তারা যা বলছে, তাতে পরিষ্কার; ইন্টারনেট একটি নির্দয় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসে ইউনিসেফ তরুণ জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব অনুসরণ করছে এবং অনলাইনে তাদের প্রতি সদয় হতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। সমীক্ষা মতে, প্রায় ২৫ শতাংশ শিশুর ১১ বছর বয়সের আগেই ডিজিটাল জগতে প্রবেশ ঘটে। শিশুদের একটি বড় অংশ (৬৩%) প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্থান হিসেবে তাদের নিজেদের কক্ষটিকেই ব্যবহার করে। এটা ‘বেডরুম কালচার’-এর ব্যাপকতা নির্দেশ করে, যা অপেক্ষাকৃত কম নজরদারির মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে।

বাংলাদেশে উচ্চমাত্রায় অনলাইনে প্রবেশাধিকারের সুযোগ ও ব্যবহারের দিক থেকে মেয়েরা ৪৮% ও ছেলেরা (৬৩%) এগিয়ে বলে জরিপে ধরা পড়েছে। জরিপ বলছে, শিশুরা ইন্টারনেটে নিয়মিত যে দুটি কাজ করে তা হলো- অনলাইন চ্যাটিং (বার্তা আদান-প্রদান) ও ভিডিও দেখা। প্রতিদিন গড়ে ৩৩ শতাংশ সময় অনলাইন চ্যাটিংয়ে এবং ৩০ শতাংশ সময় ভিডিও দেখায় তারা কাটায় বলেও জানানো হয়েছে। সমীক্ষায় যে বিপদটি চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো- ৭০ শতাংশ ছেলে ও ৪৪ শতাংশ মেয়ে অনলাইনে অপরিচিত মানুষের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশ তাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলে সেই অনলাইন ‘বন্ধুদের’ সঙ্গে সরাসরি দেখা করার কথাও স্বীকার করে। ক্ষতিকর সামগ্রী, যৌন নিগ্রহ, অপব্যবহার এবং ভয়ভীতির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি থেকে শিশুরা কখনোই মুক্ত নয় বলে মন্তব্য করে জাতিসংঘ বলছে, অনলাইনে হয়রানি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন ব্যাপক ক্ষতির বড় কারণ হতে পারে। অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় যারা অনলাইনে ভয়ভীতির শিকার হয়, তাদের এলকোহল ও মাদকে আসক্ত হওয়া এবং স্কুল ফাঁকি দেয়ার হার বেশি বলেও জানানো হয়। এ ছাড়া তাদের পরীক্ষায় ফল খারাপ করা, আত্মসম্মান কমে যাওয়া ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কার কথাও জরিপ রিপোর্টে উঠে এসেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউনিসেফ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ