কীর্তিতে ভাস্বর তিনি
আজ মাওলানা এম এ মান্নানের ইন্তেকাল দিবস। বিষাদময় এই দিনটি এলেই সর্বত্র তাঁকে নিয়ে বিশেষভাবে
‘রাসুলুল্লাহ (সা:) যা কিছু প্রত্যক্ষ করেন তোমরা কি এ ব্যাপারে ঝগড়া করছ?’ (সুরা নাজম)
আম্বিয়ায়ে কেরামের ইন্দ্রিয়ানুভ‚তি সাধারণ মানুষের ইন্দ্রিয়ানুভ‚তির চেয়ে প্রখর হয়ে থাকে। কিংবা আমাদের ইন্দ্রিয়ানুভ‚তি ছাড়াও তাদের মাঝে এমন ইন্দ্রিয়ানুভ‚তি আছে, যে সম্পর্কে সাধারণ মানুষ সম্পূর্ণ অজ্ঞ। যেমন একজন জন্মান্ধ ব্যক্তি তীক্ষè দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন যুবকের কথা ভাবতে পারে না এবং তার দৃষ্টির তির্যক ভাবও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না।
রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মোশাহাদাত বা প্রত্যক্ষ দর্শন সাধারণ বস্তুনির্ভর ঘটনাবলি নয়, যেগুলোর বর্ণনা সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের জ্ঞান অথবা দর্শন অথবা শ্রবণের মাধ্যমে করতে পারেন। বরং তারা ঐ ঘটনাবলির মর্ম ততখানিই উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যতখানি রাসূলুল্লাহ (সা:) স্বীয় জবান মোবারকে ব্যক্ত করেছেন। এ কারণে হাদীস বর্ণনার মাঝে মোশাহাদাতে নববীকে সীমাবদ্ধ করা যায় না। এমনকি সাধারণ উম্মতের ধর্মীয় কর্মকাÐের জন্য ঐ সকল জ্ঞানের অতীত অবস্থাবলীর প্রয়োজনও পড়ে না। মোটকথা, ভাষা এবং বাক্যের মাধ্যমে যতখানি সম্ভব আমরা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রত্যক্ষ দর্শন ও প্রত্যক্ষ শ্রবণ সম্পর্কে আলোচনা করতে প্রয়াস পাব।
রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রত্যক্ষ দর্শন সম্ভূত বিষয়সূচির মাঝে সর্বপ্রথম হচ্ছে ‘রুহুল কুদুস’ অথবা ‘রুহুল আমীন’ অথবা ‘জিব্রীল’ নামক ফেরেশতাকে দর্শন করা, যিনি সর্বপ্রথম হেরা গিরি গুহায় পরিদৃষ্ট হয়েছিলেন। তারপর বেশ কিছুদিন রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর দৃষ্টিতে তিনি ধরা দেননি। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) এবং এর ফলে রাসূলুল্লাহ (সা:) মর্ম যাতনা অনুভব করতেন। সহী মুসলিমে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত আছে, মক্কা মোয়াজ্জমায় রাসূলুল্লাহ (সা:) এমন কয়েকটি বছর অতিবাহিত করেছেন, যখন তিনি গায়েব হতে আওয়াজ শ্রবণ করতেন এবং আলো দেখতে পেতেন, কিন্তু কোনো জিনিস নজরে পড়ত না।’ সম্ভবত এটাই ছিল অহী বন্ধ থাকার কাল। এই কাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর একদিন তিনি আওয়াজ শ্রবণ করার পর দৃষ্টি উত্তোলন করে আসমান-জমীনের মধ্যবর্তী শূন্য মার্গে সিংহাসনোপরি উপবিষ্ট সেই ফেরেশতাকে দেখতে পেলেন। কিন্তু তিনি তাকে প্রায়ই বিভিন্ন আকৃতিতে দেখতে পেতেন।
সহীহ বর্ণনানুসারে জানা যায়, হযরত জিব্রীলকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আসল আকৃতিতে মাত্র দু’বার দেখেছেন। তখন তিনি দেখেছেন যে, জিব্রীলের দেহে ছয়শত পাখা আছে এবং তার উভয় বাহু দিকচক্রবাল পরিব্যাপ্ত করে আছে। জিব্রীল ছাড়া অন্যান্য ফেরেশতাও বারগাহে নববীতে উপস্থিত হতেন, যাদের বিস্তৃত বিবরণ ফেরেশতা অবতীর্ণ শীর্ষক অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে।(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
ফেরেশতাদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে শয়তানের অস্তিত্ব। ইহা হলো অপশক্তি, যার সংস্পর্শ হতে কোনো মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে না। সর্বপ্রথম এর দ্বারা হযরত আদমকে পরীক্ষা করা হয়েছে। আল্লাহপাক এর প্রতিফল এভাবে ব্যক্ত করেছেন, “আমি আদমের মাঝে দৃঢ়চিত্ততা পাইনি।”
(সূরা ত্বাহা : রুকু-৬)
সহীফা সফরে আইউব এবং আল কুরআনে আছে যে, এর দ্বারা হযরত আইউব (আ:) এরও পরীক্ষা হয়েছে। এতে তিনি পরিপূর্ণ কামিয়াব হয়েছিলেন। ইঞ্জিল কিতাবে আছে, হযরত ঈসা (আ:)-কেও শয়তান দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনিও সফলতার সাথে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সহীহ হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, প্রত্যেক মানুষের সাথেই একটি শয়তান রয়েছে। জনৈক প্রশ্নকারী জিজ্ঞেস করলেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ) আপনার সাথেও কি আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে সে মুসলমান হয়ে গেছে অথবা আমার অনুগত হয়ে গেছে। আর একবার তিনি ইরশাদ করেছেন, আমি নামাজ পড়ছিলাম। শয়তান আমাকে বিব্রত করতে লাগল এবং আমার নামাজ ভঙ্গ করতে চাইল। তখন আল্লাহপাক তার উপর আমাকে বিজয়ী করলেন। (সহীহ বুখারী)
জান্নাত এবং দোযখ যদিও ভিন্ন জগতের জিনিস, কিন্তু দৃষ্টিশক্তির সম্মুখস্ত পর্দা অপসৃত হয়ে গেলে সেগুলোও নজরে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আমলে একদিন সূর্য গ্রহণ দেখা দিলে সাহাবগণসহ তিনি নামাজে দাড়িয়ে গেলেন এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কেরায়াত, রুকু এবং সিজদাতে মশগুল রইলেন। এমন সময় একজন সাহাবী দেখতে পেল যে, তিনি সামনের দিকে হাত বাড়িয়েছেন এবং তার পরে দেখতে পেলেন তিনি সামান্য পিছনে চলে এসেছেন। নামাজ শেষে লোকজন জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমার সামনে এখন ঐ সকল বস্তুরাজি উপস্থিত করা হয়েছিল, যেগুলোর ওয়াদা আল্লাহপাক করেছেন। জান্নাত এবং দোযখের সাদৃশ্য এই দেয়ালের পাশে দেখানো হয়েছে। আমি বেহেশতকে দেখলাম, আঙ্গুরগুচ্ছ ঝুলে রয়েছে। আমি ফল পাড়তে চেয়েছিলাম। যদি আমি পাড়তে সক্ষম হইতাম তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত তোমরা তা ভক্ষণ করতে সক্ষম হতে। আমি দোযখকে দেখেছি। এর চেয়ে ভয়ানক ও ভয়ঙ্কর কোনো বস্তু অধ্যাবধি আমি দেখিনি। কিন্তু সেখানে অধিকাংশই আমি মহিলাদেরকে দেখেছি। লোকজন জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কারণ কি? উত্তর করলেন, স্বামীদের প্রতি না শোকরীর জন্য। যদি একজন মহিলার প্রতি জীবনভর তুমি এহসান কর এবং সে মাত্র একটিবার তোমার কোনো কাজে বিরূপ হয়ে যায়, তখন সে বলবে, আমি তোমার কাছ থেকে কখনও ভাল ব্যবহার দেখতে পাইনি। তিনি আরও বলেছেন, দোযখে আমি ঐ চোরকে দেখেছি, যে হাজীদের মাল-সামান চুরি করত এবং আমি দোযখে ঐ ইহুদী মহিলাদেরকেও, যে একটি বিড়ালকে অভুক্ত অবস্থায় বেঁধে রেখেছিল। পরিশেষে ইহাকে ছেড়ে দিয়েছিল, যেন মাটিতে পড়ে থাকা কিছু দ্রব্যসামগ্রী সে ভক্ষণ করতে পারে। কিন্তু ক্ষুধার তাড়নায় বিড়ালটি মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিল। এজন্যই তার উপর শাস্তি হচ্ছিল।
-সহীহ বুখারী ও মুসলিম
অপর এক হাদীসে আছে, তিনি বলেছেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করে দেখলাম, সেখানকার অধিকাংশ হলো দুনিয়ার গরীব শ্রেণীর লোক এবং দোযখে প্রবেশ করে দেখলাম, সেখানে অধিকাংশই রয়েছে মহিলা। (সহীহ বুখারী) জীভনের শেষ বছরে তিনি শোহাদায়ে ওহুদের কবরস্থানে চলে গিয়েছিলেন এবং সেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে এক খুতবা দেয়ার প্রাক্কালে তিনি বলেছেন, আমি এখান থেকেই হাউজে কাওসারকে দেখতে পাচ্ছি এবং ভুগর্ভস্থ ধনসম্পদের চাবিসমূহ আমাকে প্রদান করা হয়েছে। হে লোক সকল! আমি এর থেকে ভয় করছি যে, দুনিয়ার ধনদৌলতের মোহে পড়ে তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষে জড়িয়ে না পড়।
(সহীহ বুখারী)
তার মিম্বর মোবারক মসজিদের নববীতেই ছিল এবং এরই সংলগ্ন ছিল আযওয়াজুম মুতাহহারাতগণের কামরাসমূহ, যার একটির মাঝে পবিত্র দেহ মোবারক সমাহিত আছে। তিনি বলেছেন, আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী অংশে জান্নাতের টুকরাসমূহের মধ্য হতে একটা টুকরা রাখা আছে এবং আমার মিম্বারটি আমার হাউছের উপর প্রতিষ্ঠিত। (সহীহ বুখারী) মুহাদ্দেসীনে কেরাম এই হাদীসের হাকীকত বিভিন্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। কিন্তু আমাদের কাছে এর যথার্থ বিশ্লেষণ এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে অনুরূপ প্রত্যক্ষ করানো হয়েছিল।
স্বাভাবিকভাবে তিনি যখন তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য সজাগ হতেন তখন উম্মাহাতুল মুমিনীনদেরকে জাগিয়ে তুলতেন। উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমাহ বলেন, এক রাতে তিনি নিদ্রা হতে উত্থিত হয়ে বললেন, সুবহানাল্লাহ! আজ রাতে কত সব ধনদৌলতের খনি এবং বিপদ-আপদ অবতীর্ণ হয়েছে। এই কামরাগুলোতে অবস্থানকারীদেরকে জাগিয়ে কে তুলবে?
(আযওয়াজুম মুতাহহারাহ)
হায় আফসোস! দুনিয়ার মাঝে প্রাচুর্যের প্রতি পালিতা বহু নারী আখেরাতে শূন্য হাতে উত্থিত হবে। (সহীহ বুখারী) দুনিয়ার জীবনে তারা পুণ্যকর্ম থেকে গাফেল ছিল।
হযরত উমামা বিন যায়েদ বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা:) মদীনার বাইরে তাশরীফ নিলেন এবং একটি টিলার উপর আরোহণ করে বললেন, হে লোক সকল! আমি যা কিছু দেখছি, তাকি তোমরা দেখতে পাও? লোকজন উত্তর করল, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ) তিনি বললেন, আমি তোমাদের গৃহসমূহে ফেতনা-ফাসাদের ঝড় বর্ষিত হচ্ছে, তা দেখতে পাচ্ছি।(সহীহ বুখারী) সম্ভবত এটা ছিল হযরত উসমান রা: এর শহীদ হওয়ার পরবর্তী ঘটনাবলীর মোশাহাদা বা প্রত্যক্ষ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় উম্মতের চিন্তায় সর্বদাই বিভোর থাকতেন। একবার তিনি ইরশাদ করলেন, জমীনের সকল প্রান্তসীমাকে আমার দৃষ্টির সামনে হাজির করা হয়েছে। আমি এর মাঝে মাশরেক এবং মাগরিবকে দেখেছি। আমার উম্মতের সালতানাত এ সকল প্রান্তসীমা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, যা আমাকে দেখানো হয়েছে। আমাকে লাল এবং সাদা (স্বর্ণ এবং রৌপ্য) উভয়ের খনি দেয়া হয়েছে। আমি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছি, হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে বিশ্বগ্রাসী অভাব দ্বারা ধ্বংস করে দিও না এবং তাদের উপর স্বধর্মীগণ ছাড়া অন্য বিধর্মী দুশমনদেরকে বিজয়ী করবেন না। এমন সময় হুকুম হলো যে, আমার দরবারে ফয়সালা কখনও পরিবর্তিত হয় না এবং আমি তোমার এই প্রার্থনা কবুল করেছি। সুতরাং আমার উম্মতকে বর্তমানে অন্য কোনো সম্প্রদায় ধ্বংস করবে না; বরং তারা একে অন্যকে ধ্বংস করবে। (সহীহ মুসলিম) পৃথিবীর মুসলমানদের সার্বিক ইতিহাস এই মোশাহিদারই প্রত্যক্ষ ফল বৈ কিছুই নয়।
অতীত আম্বিয়ায়ে কেরামের ছায়াচিত্র অধিকাংশ সময় তাকে দেখানো হয়েছে। মিরাজ এবং নিদ্রিতাবস্থা ছাড়াও সচেতন অবস্থাতেই তিনি এগুলো প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস রা: হতে বর্ণিত আছে, একবার তিনি সফরে গমনকালে (সম্ভবত হজ্বের সফর) ওয়াদিয়ে আরজাক নামক প্রান্তর অতিক্রমকালে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন প্রান্তর? লোকজন উত্তর করল, এটা হচ্ছে ‘ওয়াদিয়ে আরজাক’ তিনি বললেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, হজ্জের তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় হযরত মূসা (আ:) পাহাড়ের চূড়া হতে অবতরণ করছেন। এরপর ‘হারসা’ নামক ঘাঁটি অতিক্রমকালে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন ঘাঁটি? লোকজন উত্তর করল, এটা ‘হারসা ঘাঁটি’ তিনি বললেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, মতির ছেলে ইউনুস (আঃ) লাল উটনীর উপর আরোহণ করে কম্বল দ্বারা দেহ আবৃত করে আছেন এবং উটনীর রশি খেজুরের ছিলা দ্বারা তৈরী। তিনি লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক বলে চলেছেন।
মিরাজের ঘটনা সম্পর্কে স্মর্তব্য যে, কাফেরগণ যখন বায়তুল মুকাদ্দাসের কারুকার্য সম্পর্কে প্রশ্ন করল, তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ভালভাবে তা আমার স্মরণে ছিল না। অকস্মাৎ আল্লাহপাক ইহাকে আমার সামনে এনে দিলেন। তারা এক একটি বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, আর আমি এগুলোর উত্তর দিতেছিলাম। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) হযরত ইবনে আব্বাস বলেন, একদিন তিনি কবরস্থানের নিকট দিয়ে গমন করছিলেন। তকন বললেন, এ দুটো কবরে আযাব হচ্ছে। এই আজাব কবীরা গুনাহের জন্য নয়; এর একজন পবিত্রতা অর্জনকালে পর্দার ব্যবস্থা করত না কিংবা পেশাবের ছিঁটাগুলো থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না। দ্বিতীয় ব্যক্তির আজাবের কারণ হচ্ছে এই যে, সে মানুষের চোগলখোরি করত। এরপর তিনি একটি গাছের তাজা ডালা দু’ভাগ করে উভয় কবরের মাঝে পুঁতে দিলেন এবং বললেন, হয়তো এগুলোর তাসবীহ-তাহলীলের দ্বারা তাদের শাস্তি কিছুটা লাঘব হবে। (সহীহ বুখারী) হযরত আবু আইউব আনসারী বলেন, একবার তিনি দ্বিপ্রহরে গৃহ হতে বের হলেন। এমন সময় একটি আওয়াজ তার কানে ভেসে আসল। তিনি বললেন, ইহুদীদের কবরে আজাব হচ্ছে। এ হলো সহীহ বুখারীর বর্ণনা। তবে তিবরানী কিতাবে আছে, তিনি বলেছেন, ইহুদীদের কবরসমূহে যে আগুন দেয়া হচ্ছে তার শব্দ আমার কানেও ভেসে আসছে। কোনো এক জিহাদে মুসলমানদের পক্ষের একজন লোক মারা গেল। লোকজন বলল যে, সে শহীদ হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, কখনও নয়, আমি তাকে দোযখে দেখেছি কারণ, সে মালে গনীমত হতে একটি লম্বা জামা (আবা) চুরি করেছিল। তারপর হযরত উমরকে এ ঘোষণা জারি করতে নির্দেশ দিলেন যে, জান্নাতে কেবলমাত্র ঈমানদারগণই প্রবেশ করবে।(জামে তিরমিজি)
আমর বিন আমের খোজায়ী সর্বপ্রথম আরবে দেবতাদের নামে পশু বলি দেয়ার কুপ্রথা চালু করেছিল। বুখারী শরীফে হযরত আবু হুরাইরা এবং হযরত আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আমি জাহান্নামকে দেখেছি। এর স্ফুলিঙ্গগুলো একটি অপরটিকে বিচূর্ণ করেছে এবং এর মাঝে আমার বিন আমেরকেও দেখেছি যে, সে নিজের নাড়িভুঁড়িগুলো আঁকড়ে ধরে আছে।(মুসনাদে ইবনে হাম্বল)
সহীহ মুসলিম শরীফে আছে, একবার তিনি নাজ্জাবর গোত্রের খেজুর বাগানে গমন করলেন। তিনি একটি খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন। তার সাথে কতিপয় অনুসারীও ছিল। অকস্মাৎ খচ্চরটি এমনভাবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে লাফ দিল যে, তিনি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলেন। পাশেই ছিল পাঁচ-ছয়টি কবর। জিজ্ঞেস করলেন, এই কবরগুলো কেউ চিনে কি? একজন বলল, হ্যাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আমি চিনি। জিজ্ঞেস করলেন, এ লোকগুলো কখন মৃত্যুবরণ করেছে। তখন তিনি বললেন, এই লোকগুলোকে কবরে আজাব দেয়া হচ্ছে। যদি এই ধারণা না হতো যে, তোমরা মৃতদের থেকে ভীত হয়ে একে অন্যকে দাফন করতে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতাম তোমাদেরকেও যেন শোনানো হয়, যা আমি শুনতে পাচ্ছি। (মুসনাদে ইবনে হাম্বল)
একবার সাহাবীদের সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন, এমন সময় এক ভীষণ দুর্গন্ধ ভেসে আসল। তিনি বললেন, তোমরা কি জান এ কিসের দুর্গন্ধ? এ দুর্গন্ধ হচ্ছে এসব লোকের যারা মুসলমানদের গিবত করে। (মুসনাদে ইবনে হাম্বল) একবার হযরত বিলাল রা. বললেন, হে বিলাল! আমি যা শুনছি, তুমি কি তা শুনতে পাও? আরজ করলাম, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তুমি কি শুনতে পাওনা কবরে মৃতদেরকে আজাব করা হচ্ছে? (মুস্তাদরাকে হাকেম) ইমাম আহমদ বাজ্জার এবং বায়হাকীর শোয়াবুল ঈমানে আছে, হযরত যায়েদ বিন আরকাম বলেন, একবার আমরা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি পান করার কিছু বস্তু চাইলেন। তখন তার জন্য মধু এবং পানি নিয়ে আসা হলো। হযরত আবু বকর তা দর্শন করে কাঁদতে লাগলেন। লোকজন ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একদিন আমি খেদমতে নববীতে হাজির ছিলাম। দেখলাম, তিনি হাত দ্বারা কি যেন সরিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আমি কোন জিনিস দেখতে পাইনি। জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ) আপনি কি জিনিস ফিরিয়ে দিচ্ছেন? তিনি উত্তর করলেন, এটা পৃথিবী যা আমার সামেন আকৃতি ধারণ করে উপস্থিত হয়েছে এবং আমি বললাম যে আমার নিকট হতে চলে যা, তখন ইহা বলল, যদিও আপনি আমার খপ্পর হতে বেঁচে গেলেন, কিন্তু আপনার পরবর্তীকালের লোকেরা আমা হতে রেহাই পাবে না। বর্তমান দুনিয়ার হালহকিকত এই কথার সত্যতার প্রমাণই বহন করে চলেছে।
লেখক: সাংবাদিক, ইসলামী গবেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।