Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দখলে বিলীন হচ্ছে উত্তরা খিদির খাল

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর ও হরিরামপুর ইউনিয়নের বুক চিঁরে বয়ে যাওয়া খালটির নাম খিদির খাল। দখল আর দুষণের কবলে পড়ে উত্তরার সবচেয়ে গুারুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ এ খালটি এখন মরা খাল হয়ে গেছে। দীর্ঘ ৮ কিলোমিটারের এ খালটি তুরাগ নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে হরিরামপুর ইউনিয়নের রানাভোলা, ফুলবাড়িয়া, উত্তরা ১২ নং সেক্টর খালপাড়, দলিপাড়া, বাউনিয়া, মিরপুর আলোকদি হয়ে আবার তুরাগ নদীতে গিয়ে মিশেছে। অসাধু চক্রের দখল আর রাস্তা ও রাজউকের প্লট নির্মাণের কারণে খালটি এরই মধ্যে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এখন ছোট ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর অংশে লেকের উত্তর প্রান্ত ময়লা ফেলে দখল করে প্লট তৈরি করা হয়েছে। ১০ নম্বর সেক্টরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বহমান খালটি এখন পুরোপুরি নর্দমায় পরিণত হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালের পাড় দখল করে প্লট, ফ্ল্যাট ও দোকানঘর নির্মাণের মহোৎসব চললেও পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেই খালটির মালিক ঢাকা ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের।
স্থানীয়দের মতে, খিদির খালটি ঢাকা ওয়াসার হলেও এর কোন তত্ত্বাবধান নেই। ইচ্ছামত খালের পাড় দখল ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। উত্তরার বিভিন্ন এলাকার স্যুয়ারেজ ড্রেনের সংযোগ এই খালে দেয়া হয়েছে। ড্রেন দিয়ে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা এসে খালে পড়ছে। গত প্রায় তিনি বছর আগে ওয়াসা নামে মাত্র খালটি পরিষ্কার করেছে বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে। আবারো খালে ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। এতে মশা প্রজননের উত্তমস্থানে পরিণত হয়ে গেছে। এসব মশা ছড়িয়ে পড়ছে উত্তরা, কামারপাড়া ও হরিরামপুর এলাকায়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক কর্মকর্তা (আনিক) মোহাম্মদ সেলিম ফকির ইনকিলাবকে বলেন, খিদির খালের জায়গা দখলের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দায়িত্ব নিয়ে এসেছি যে বেশি দিন হয়নি তাই এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে। তিনি বলেন, সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করার অধিকার কারো নাই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। খালের জায়গা যদি কেউ অবৈধভাবে দখল করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশন এরিয়ার মধ্যে তথা উত্তরা এলাকায় মশা নিধনের নিয়মিত কর্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। মশা এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আছে। বাকিটাও নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র খালের পাড় দখল করে শাল গাছের খুঁটি দিয়ে বেড়া তৈরি করে মাটি ভরাট করে খালের জায়গা দখল করে সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করছে। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের খাল পাড় ব্রীজ থেকে নলবুক যাওয়ার পথে খালের ওপরে ৩টি সেতু নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে দুটি সেতু। একটি সেতু পুরাই দখল করে চলানো হচ্ছে খাবারের হোটেল। খাবারের হোটেলসহ বিভিন্ন দোকানের আড়ালে ব্রীজটি একেবারেই ঢাকা পড়ে গেছে। বুঝার কোন উপায় নেই এখানে যে একটি ব্রীজ আছে। এছাড়া উত্তরা বিভিন্ন এলাকার পানি নিষ্কাশনের ড্রেন খিদির খালে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই ড্রেন দিয়ে ময়লা-আবর্জনা এসে খালটি দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবী, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে।
খিদির খালটির একপাশ দিয়ে পাইলিং করে দখল করা হচ্ছে খালের জায়গা। খাল পাড়ের ব্রীজের পাশে খালের প্রায় দেড় ফুট জায়গা দখল করে ঢালাই দিয়ে উঁচু আরসিসি পিলারের ওপর স্থায়ী স্থাপনা (দোকানঘর) নির্মাণ করছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এছাড়াও বাড়ি নির্মাণের জন্য খালের পাড়ে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে খালের বেশ অংশে। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে খালে পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে খাল আরও সংকুচিত হয়ে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে বলে এলাকাবাসীর শঙ্কা।
খিদির খালের পাশেই দোকানদারী করেন আমির হোসেন। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, বহুদিন ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার না করার কারণে ভরাট হয়ে গেছে খালটি। গত প্রায় তিনি বছর আগে ঢাকা ওয়াসা নামে মাত্র খালটি পরিষ্কার করে ছিল। দীর্ঘদিন আর আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে খালের পানির দুর্গন্ধ অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ময়লা-আবর্জনায় জন্মাচ্ছে মশা।
এ ব্যাপারে ডিএনসিসির ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান বলেন, খালটি সিটি কর্পোরেশনের নয়, এটি ঢাকা ওয়াসার। এ জন্য খালটি নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। খাল পরিষ্কারের দেখভাল পুরোটাই ওয়াসার। সেখানে সিটি কর্পোরেশন কেন খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে যাবে।
এদিকে নলবুক এলাকার সাবেক ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বর হাজী মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন বলেন, এটি বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় চলে গেছে। বৃষ্টির পানিতে উত্তরা এলাকার যত ময়লা-আবর্জনা সব খালের মধ্যে এসে পড়ে। কাউন্সিলর একবার খালটি পরিষ্কার করেছেন। খালটি প্রায় ৭০ ফুটের মত চওড়া ছিল যা বর্তমানে ৩০ ফুটে পরিণত হয়েছে। যাদের শক্তি রয়েছে তারা খাল দখল করেছেন যাদের শক্তি নেই তারা খাল দখল করতে পারেনি।
এক সময় খিদির খালটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন থাকলেও স¤প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নতুন করে ১৮টি ওয়ার্ড যোগ হওয়ায় খালটি ডিএনসিসির আওতায় এসেছে। কিন্তু খালটির মালিক ঢাকা ওয়সা। এর দেখভালের দায়িত্বও তাদের। কিন্তু গত তিন বছরেও তারা এই খালটির ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের প্রয়োজনিয়তা মনে করেনি। অন্যদিকে মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু ওয়াসা ময়লা আবর্জনা পরিস্কার না করার কারণে সেখানে মশা জন্মাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হয়েছে, খাল যেহেতু ওয়াসার তার দেখভালের দায়িত্ব তাদের। এ ব্যপারে আমাদে করার কিছু নেই।
খালের জায়গা দখল করে প্রতিনিয়ত দোকানঘর নির্মাণ হতে থাকলে আগামী বর্ষা মৌসুমে উত্তরা, হরিরামপুর, কামারপাড়া, নলবুক বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছে এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা জামাল উদ্দিন খাল ভরাট না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ৭০ ফুট চওড়া এ খালটি অবৈধ দখলের কারণে আজ ৩০ ফুট ড্রেন হয়ে গেছে। বছর বছর দখলের কারণে ধীরে ধীরে এটা মরা খাল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অচিরেই খালের আশপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহের পথ উন্মুক্ত করে উচিত। না হয় আগামী বর্ষায় এই এলাকাবাসীর কপালে পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ আছে। খাল ভরাট করা হলে পানিবদ্ধতার আশঙ্কা প্রকাশ করে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা লতিফ ফয়জুল্লাহ বলেন, এই খালে উত্তরা, হরিরামপুরের বেশিরভাগ এলাকার পানি আসে। খাল ভরাট করে ফেললে পানি যেতে পারবে না। বৃষ্টি হলে পানি আটকে যাবে তখন পানিবদ্ধতায় এলাকাবাসীকে হাবুডুবু খেতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন জানান, মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশের মতো আন্দোলনেও ভূমি খেকোদের হাত থেকে খিদির খাল রক্ষা করা যাচ্ছে না। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাল

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->