Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফগানদের মধ্যে বিপুল আশা

যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

যুক্তরাষ্ট্র-আফগানিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চলা যুদ্ধের অচলাবস্থা নিরসনে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে যে খসড়া চুক্তি হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করা কঠিন। এটি শান্তিচুক্তি না হলেও আফগানদের মধ্যে বিপুল আশাবাদের সঞ্চার করেছে। কারণ এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে যুক্তরাষ্ট্র তার সৈন্য প্রত্যাহার করবে এবং তালেবান নিশ্চিত করেছে যে আফগানিস্তানের ভেতর থেকে কোনো ‘সন্ত্রাসী’ দলকে কাজ করতে দেয়া হবে না।

ব্যাপক আশাবাদ সত্তে¡ও খসড়া মানে খসড়াই এবং চূড়ান্তভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য অনেক ক্ষেত্র ও সম্ভাব্য বিরোধের অবসান ঘটাতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এতে সন্ত্রাসবাদ ও মার্কিন সামরিক প্রত্যহারের ধারা অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রকে চূড়ান্তভাবে আফগান যুদ্ধ অবসানের সুযোগ করে দিলেও খসড়াতে এমন কিছু নেই যাতে আফগানিস্তানের মধ্যকার সঙ্ঘাত অবসানের আশাবাদ সঞ্চার করতে পারে।
আফগানিস্তানের মধ্যকার সঙ্ঘাত অবসানের সম্ভাবনা ভয়াবহ রকমের অস্পষ্ট এবং পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়বে যদি না কাবুল পুরো প্রক্রিয়ার অংশে পরিণত না হয় এবং সঙ্ঘাতময় স্বার্থগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করার মতো ক্ষমতা ভাগাভাগি ফর্মুলা প্রণয়ন করা না গেলে।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রের (এবং সেইসাথে পাকিস্তানের) সামনে একটি বড় বাধা হিসেবে যেটা বিরাজ করছে তা হলো আন্তঃআফগান সংলাপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চুক্তি হওয়ার পর পরই জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি স্পষ্ট করেছেন যে আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সৈন্য মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্ব্বল। তবে তার বক্তৃতায় তালেবানের রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিও প্রবলভাবে বোঝা গেছে।
মার্কিন বিশেষ দূত জালমি খলিলজাদ সর্বশেষ রাউন্ডের আলোচনা শেষ হওয়ার পর বলেছেন, আমাদের আরো কিছু বিষয়ের সুরাহা করতে হবে। তিনি বলেন, সবকিছুতে সমঝোতা হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুতেই একমত হওয়া হয় না। আর সবকিছু বলতে অবশ্যই আন্তঃআফগান সংলাপ ও ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধবিরতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর যেসব বিষয় এখনো সমঝোতা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চুক্তি কার্যকর হওয়ার ধরন। তাছাড়া তালেবানের সাথে কাবুল কখন ও কিভাবে সরাসরি আলোচনা করবে, তাও নির্ধারিত হয়নি। তবে আফগানদের অবস্থা ততটা খারাপ নয়। আন্তঃআফগান সঙ্ঘাত এখনো জারি থাকলেও আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধ অবসানের সাথে সাথে সেটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তালেবান পক্ষ নিশ্চিতভাবেই আশার আলো দেখাচ্ছে। বিষয়টি দোহায় সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে তালেবান মুখপাত্র সোহাইল শাহিন বলেছেন এভাবে যে তালেবান তাদের মতো করে আফগানিস্তান শাসন করবে না। বরং দখলদারিত্বের অবসান হওয়ার পর আফগানরা তাদের অতীত ভুলে যাবে, একে অপরের সাথে সহিষ্ণু আচরণ করবে, ভাইয়ের মতো জীবনযাপন করবে। সৈন্য প্রত্যাহারের পর আমরা একচ্ছত্র ক্ষমতা চাইব না। এর মানে হলো, তারা আর কাবুলের সাথে সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা বাতিল করে দিচ্ছে না। আর এই আলোচনায় দেশের ক্ষমতা-ভাগাভাগির এজেন্ডাও থাকবে। এর ফলে দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য আফগান-নেতৃত্বাধীন ও আফগান মালিকানার সংলাপ ছাড়া কার্যত আর কোনো বিকল্প থাকছে না। তবে চুক্তিটি এবং তালেবানকে কতটা ছাড় যুক্তরাষ্ট্র দেবে, সে ব্যাপারে ব্যাপারে কাবুলে সন্দেহ রয়ে গেছে। আর এই ছাড়ের বিষয়টিকে কাবুলের কর্মকর্তারা তাদের জন্য হুমকিপূর্ণ মনে করছে। ফলে আশরাফ ঘানি খসড়া চুক্তিটি ঘোষণা করার পর অতীতের ভুল-ত্রুটি এড়ানোর জন্য ‘বিচক্ষণতার’ ওপর জোর দেয়ার মাধ্যমে আসলে ১৯৯০-এর দশকের গৃহযুদ্ধের কথাই বুঝিয়েছেন। ওই গৃহযুদ্ধের রেশ ধরেই মুজাহিদিনদের থেকে তালেবানের আত্মপ্রকাশ ঘটে, ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তাদের পতনের আগে পর্যন্ত তারা দেশটির প্রায় ৯০ ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
আশরাফ ঘানি ও তার সহকর্মীরা চিন্তিত এ নিয়ে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার সৈন্যদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যহারের ব্যাপারে এতই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে তিনি এই প্রক্রিয়ায় আফগান সরকারকে পাশে সরিয়ে রাখতে পারেন এবং এমনকি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে তালেবানের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে ঘানির মন্ত্রীদের বাধ্য করতে পারেন।
তবে আন্তঃআফগান সংলাপ যদি হয়ও, তবে তাতে কেবল কাবুল নয়, সেইসাথে আফগানিস্তানের সব রাজনৈতিক শক্তিকেই অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ওঠবে। আর ইতোমধ্যেই নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বলতে গেলে কোনো সন্দেহই নেই যে কাবুল একটি গভীরভাবে বিভক্ত রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে এবং ‘প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের’ কারণে ঘানি ও তার সহযোগীদের পক্ষে সব আফগানের প্রতিনিধি হিসেবে বৈধতা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
গ্রেট নর্দার্ন কাউন্সিলের (মার্কিন সামরিক বাহিনী ও ন্যাটোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত) মতো উপগ্রুপগুলো নিশ্চিতভাবেই সমস্যা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং তারা আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যেই গ্রুপিং সৃষ্টি করতে পারে। ফলে খসড়া চুক্তিটি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরের সঙ্ঘাত নিরসন নিয়ে কিছু না বললেও চুক্তিটির ঘোষণা পরপরই যেসব বক্তব্য পাওয়া গেছে তাতে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এটি শেষ পর্যন্ত বড় যে সমস্যার সৃষ্টি করেছে তা হলো, আফগানদের মধ্যে কারা এই প্রক্রিয়ার অংশে পরিণত হবে।
একদিকে কাবুল যখন এই প্রক্রিয়ায় তার অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছে, তখন অনেক কর্মকর্তা পুরো প্রক্রিয়ারই বিরোধিতা করে যাচ্ছে। এর ফলে ঘানি ও তার সহযোগীরা যদি বিভক্ত না হয়ে একটি গ্রুপ হিসেবে আন্তঃআফগান সংলাপে উপস্থিত হতে না পারে, তবে আরেকটি সঙ্কট সৃষ্টির যথেষ্ট অবকাশ থাকবে। আন্তঃআফগান সংলাপে যত দ্রুত হবে, আফগানিস্তানের নতুন যুগের সূচনা ততই মঙ্গলময় হবে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ