Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তিন নারীর চ্যালেঞ্জে বিপর্যস্ত মোদি

চাকরি সঙ্কট, দুর্নীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে গদি ধরে রাখতে পারবেন কি না, তাই নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, তিন নারীই হয়ে উঠতে পারেন চলতি বছর এপ্রিল-মের লোকসভা নির্বাচনে মোদির হন্তারক।
তাদের একজন নেহরু-গান্ধী বংশের প্রতিনিধিত্বকারী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। মাত্র গত মাসে রাজনীতিতে অভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি সাড়া ফেলেছেন ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে। এর একটা বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে, কিংবদন্তি কংগ্রেস নেতা ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চেহারা ও অভিব্যক্তিতে অনেকে তার মিল খুঁজে পাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, প্রিয়াঙ্কা সুবক্তা। তৃতীয়ত, তিনি সেই বংশের প্রতিনিধি, যারা ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় ভারত শাসন করেছে। ভোটারদের মনে সেই আনুগত্য ফিরিয়ে আনতে প্রিয়াঙ্কার ক্যারিশমা কাজে দিতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
দ্বিতীয়জন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনীতির অগ্নিকন্যা বলে খ্যাত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তিনি গড়ে তোলেন অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস (এআইটিসি)। বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায়। সংখ্যালঘুদের মধ্যে তিনি আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। গত মাসে কলকাতায় বিজেপি বিরোধী এক বিশাল সমাবেশ করে সারা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তৃতীয়জন উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে এই নেত্রীর নামই যথেষ্ট। গত মাসে তার বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) জোট গড়েছে একসময়ের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে। মায়াবতী মূলত সংখ্যাগুরু হিন্দু দলিতদের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন।
মমতা ও মায়াবতীও ছক আঁটছেন মোদির ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ-কে পরাজিত করতে। তারা বিরোধী দলগুলোর এক বিশাল জোট গঠনের পরিকল্পনা করছেন, তবে তাদের মধ্যে এখনও কোনও চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। বিজেপি ত্যাগ করা সাবেক অর্থমন্ত্রী যসবন্ত সিংহ বলেন, ‘বিরোধীদলগুলোতে এনডিএ’র চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর নারী রয়েছে। একারনে সাধারণভাবে তারা ভোটারদের, বিশেষ করে নারী ভোটারদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবেন।’
ভারতের বর্তমান চাকরির বাজার ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ, এ তথ্য ফাঁস এবং পরিসংখ্যান ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদির সরকার চলতি বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে তার শেষ বাজেট পেশ করেছে। দুর্বল চাকরি উপাত্ত, কৃষি শিল্পে আর্থিক সঙ্কট, অর্থনীতিতে আস্থার পতন নরেন্দ্র মোদির পুনঃনির্বাচনের সম্ভাবনা হুমকিগ্রস্ত করতে পারে।
অনেক বছর ধরেই অর্থনীতিবিদেরা বলে আসছিলেন যে বেশির ভাগ ভারতীয়ই বেকার বা যোগ্যতার তুলনায় কম বেতনের চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন। এখন ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় প্রকাশিত সরকারি একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে যে ভারতের ৬.১ ভাগ লোক চাকরি পাচ্ছেই না।
পাশাপশি ভারতে দুর্বার গতিতে চলতে দুর্নীতি। মোদির প্রশাসনের বহু হাইপ্রফাইল কেলেংকারি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ৩৬টি রাফাল জঙ্গি বিমান কেনার জন্য ৭.৮ বিলিয়ন ইউরোর চুক্তি থেকে শুরু করে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ২ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা পর্যন্ত। সম্প্রতি প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টেও মোদির ভারতে দুর্নীতি বিস্তারের বিষয়টি স্পষ্ট। ১৭৫টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৭৮। এছাড়া এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ঘুষ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দিক থেকে ভারতের অবস্থান খুবই করুন।
সরকারের দেশীয় ব্যর্থতার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোতে সঙ্কট মোদি সরকারকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। অতীতে পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থতা নির্বাচনে প্রভাব না ফেললেও এবারের নির্বাচনে বিরোধীরা তা ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঘন ঘন সফর করে, প্রতিবেশী প্রথম নীতি গ্রহণ করেও মোদি সাফল্য পাননি। প্রতিবেশী প্রায় সব দেশের সাথেই ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কে সবচেয়ে বড় অবনতি ঘটেছে। ভুটানের মতো দেশেও তাদের প্রভাব নজিরবিহীন মাত্রায় শেষ হয়ে গেছে। নেপাল এখন প্রতিবেশী চীনের দিকে ঝুঁকছে প্রবলভাবে। সূত্র: রয়টার্স।



 

Show all comments
  • Arif Ahmed ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    আগাম ফলাফল মোদি সরকার ক্ষমতায় থাকা নাথাকা ভারতের জনগণ এর পছন্দ অঅনুযায়ী হবে এটাই গনতন্ত্রের রীতি।মোদির কপাল খারাপ তাদের দাদা নেই থাকলে জনগণকে ভোট বঞ্চিত করে তারা আবার ক্ষমতায় বসতে পারতেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Imtiaz ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    পররাষ্ট্রনীতি একদম পানিতে ভেসে গেল
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
    সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র, এই চিন্তাটি আরো ভালো করে কাজে লাগানো উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • sheak kader ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
    আরএসএস হল উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংঘটন। অথচ এদের বিষয়ে সবাই নিরব। কিন্তু কে...
    Total Reply(0) Reply
  • পথিক নবি ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
    কিভাবে দেশের সব সেক্টর রাজনীতিকরণ করতে হয় তা বাংলাদেশের কাছ থেকে শেখা উচিত ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Ridouanul Hoque ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
    এই শিক্ষাটা কি তারা বাংলাদেশ থেকে নিয়েছে! সব কিছুতে রাজনীতিকরণ!
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    কংগ্রেসের বহু বছর ক্ষমতায় থাকার সময় ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছিল। মোদীর সরকার এখন সেগুলোকে কুক্ষিগত করতে চাইছে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের জন্য। এর ফলে মোদী শুধু বিজেপির ক্ষতিই করছেন না, ক্ষতি করছেন আধুনিক ভারতের।
    Total Reply(0) Reply
  • Shajed ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    He pokes his nose into the neighboring nations internal affairs too.
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    আপনি আগে ভারতের উগ্রবাদী বিজেপিকে থামান। বাংলাদেশেরটা আমরা দেখছি। ৭১ এ স্বাধীনতা আনতে পেরেছি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তেও আমরা পারবো। ভারতের বাংলাদেশী খেদাও নামে বাঙ্গালী খেদাও সহ অন্যান্য উস্কানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে না পারলে উপমহাদেশে শান্তি কখনই আসবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Muntasir Khan ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেমন আওয়ামীলীগের হাত ধরে এসেছে তেমনি ভারতের স্বাধীনতাও এসেছে কংগ্রেসের হাত ধরে। তাহলে বিজেপির মত উগ্র মৌলবাদী দল ক্ষমতায় আসে কিভাবে ? বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাক গলানো ইন্ডিয়ান চেতনাবাদীরা কোথায় ? তারা বাংলাদেশের জামাত-শিবির পছন্দ করেনা কিন্তু নিজেরা আবার বিজেপি-শিবসেনার মত সন্ত্রাসী সংগঠনের অধীনে বসবাস করে ??
    Total Reply(0) Reply
  • GOLAM HAKIM ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    মোদীকে একদিন ইতিহাসের কাড়গড়ায় দাড়াতে হবে। ধর্মের নামে রাজনীতি উন্নত বিশ্বেও চলে। কিন্তু এমন হিংস্যতা এমন সাম্প্রদায়িকতা এমন অন্ধত্ব সভ্যতার চাকাকে পিছনে ঘুরিয়ে দেয়ার শামিল। ভারতকে মোদী অমিত শাহরা ভিতর থেকে ভেঙ্গে ফেলেছে। তাই হুঙ্কার আর অস্ত্র নিরভর রাজনিতির পঙ্কিল পথে হেটেছে ভারত। অথচ এই ভারত ছিল ইতিহাস অইতিহ্যের তিরথ স্থান সব শ্রেণীর মানুসের জন্য। সেই ভারতে এখন কেবল ধরমের ভিন্নতার কারনে পশু পাখির মত মানুসকে প্রান হারাতে হচ্ছে। লাখে লাখে হারাচ্ছে ভিটে মাটি তথা নাগরিকতা । ভারত বাসী অবশ্যই এই আদিম যুগ থেকে বেরিয়ে আসবে তারি লক্ষন ফুটতে শুরু করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar Kamal ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    বিজেপি একটি চরম মৌলবাদি দল। বিজেপির ভরাডুবিই পারে এ উপমহাদেশকে মৌলবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ অসাম্প্রদায়িক। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক ও বাহক।
    Total Reply(0) Reply
  • Aminul Islam ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল বর্তমান সাম্প্রদায়িক সরকার, ভারতকে জাতিগতভাবে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে বর্তমান সরকার। যার ফল এখন পেতে শুরু করেছে। আগামী নির্বাচনেও ভারতের সাধারন মানুষ সেই বাড়াবাড়ির মোক্ষম জবাব দেবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
    তিন জনে মিলে মোদি এক রাজ্যে যা রাজ্যে যা ভোট পাবে তা ও পাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Himu Anik ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
    The name of Momota everybody don't know in india.
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
    হাসিনা মার্কা নির্বাচন করলেই তো হয়
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
    ক্ষমতা থাকলে এই তিন মহিলার সম্মিলিত আসন মোদীর বিজেপির আসনকে টপকে দেখাক, আছে সে জোর?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৩:২৪ এএম says : 0
    মোদি সে এমন এক জিনিষ আমাদের বাংলাদেশের ভোট চুন্নির মতো। তার মাঝে মানবতা নাই, সে কত হত্যার যে সরদার। ...................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ