Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডাক্তার ও নার্সদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তা

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় ডাক্তার-নার্সদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রথম নয়, এর আগেও তিনি বিভিন্ন উপলক্ষে অনুরূপ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত রোববার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, কর্মস্থলে না থাকলে এবং সেবা না দিলে ডাক্তার ও নার্সদের ওএসডি করা হবে। প্রয়োজনে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। কর্মকর্তাদের তিনি এই মর্মে নির্দেশনা দিয়েছেন, ‘সরকারি হাসপাতালগুলোতে কতজন রোগী যায় ও কেন হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারদের পাওয়া যায় না তা খুঁজে বের করতে মন্ত্রণালয়ের জরিপ করা উচিৎ। বদলি করা ডাক্তাররা যদি কাজে যোগ না দেয় তবে ওএসডি করে তাদের সরিয়ে দিন, তাদের প্রয়োজন নেই; আমরা নতুন ডাক্তার নিয়োগ দেব।’ নার্সদের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘নার্সদের রোগীর সেবাটা করতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক। না করলে তারা কাজে থাকবে না, চলে যাবে। আমরা নতুন লোক প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসব।’ অত্যন্ত দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তাররা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। এমন কি তাদের অনেকে নিয়মিত উপস্থিতও থাকেন না। নার্সদের ক্ষেত্রেও একথা সমানভাবে প্রযোজ্য। অথচ তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা। তাদের অনুপস্থিতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে মানুষ প্রত্যাশিত চিকিৎসা সেবা পায় না। এর আগে প্রধানমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, যারা নিয়োগপ্রাপ্ত অথচ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে থাকতে চান না, ঠিকমত দায়িত্ব পালন করেন না সেই সব ডাক্তারের উচিৎ চাকরি ছেড়ে দেয়া। এটা নৈতিকতার দাবি, বলাই বাহুল্য। এই নৈতিকতা ও ঔচিত্যবোধের পরিচয় দুর্লক্ষ্য। কাজেই প্রধানমন্ত্রীতে বলতে হয়েছে, তাদের ওএসডি করতে হবে এবং প্রয়োজনে চাকরি থেকে বিদায় করে দিতে হবে। এছাড়া আর কী করার থাকতে পারে?
চিকিৎসাপ্রার্থীদের আবশ্যকীয় সেবা দেয়াই ডাক্তারদের পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটা তাদের অজানা থাকার কথা নয়। অথচ অনেক ডাক্তারেরই এই দায়িত্ব-কর্তব্যে মনোযোগ নেই। তারা ‘মফস্বল’ বলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে যেতে চান না। নিয়োগ দেয়া হলেও সেখানে থাকতে চান না বা থাকেন না। ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। তাদের মনোযোগ থাকে অর্থ উপার্জনের দিকে। তারা মফস্বলে থাকতে চান না এজন্য যে, সেখানে চাকরির বাইরে অর্থ উপার্জনের সুযোগ কম। এ সুযোগ আছে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে প্রাইভেট প্রাকটিস ও অপারেশনের সুযোগই বেশি নয়, কমিশন বাণিজ্যেরও একটা ব্যাপার আছে। তারা চাকরি ও প্রাইভেট প্রাকটিস বা কমিশন বাণিজ্য-সবই একসঙ্গে ঠিক রাখতে চান। এই যাদের মনোভাব ও লক্ষ্য তাদের পক্ষে সাধারণ মানুষের কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা দেয়া কীভাবে সম্ভব? সম্ভব নয়। এ কারণেই দেশের চিকিৎসা সেবার মান এত অবনত। চিকিৎসা সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার সরকারি উদ্যোগ ও প্রয়াস রয়েছে। এ জন্য সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে একের পর এক। অন্যদিকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালও গড়ে উঠছে। তারপরও চিকিৎসা সেবা সহজপ্রাপ্য, সুলভ ও মানসম্পন্ন হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং ক্রমাগত অবনতিই প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বলতে গেলে কোনো সুশাসনই নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এক্ষেত্রেও দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অর্থ কামানোর মনোভাব প্রবলভাবে বিদ্যমান।
একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা, সরকারি হাসপাতালগুলোই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার প্রধান অবলম্বন। এক্ষেত্রে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অথচ এসব হাসপাতালেই চিকিৎসা সেবার হাল সবচেয়ে করুণ। হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা সেবা পেতে হলে ডাক্তার-নার্সদের নিয়মিত উপস্থিতি যেমন নিশ্চিত হওয়া দরকার, তেমনি তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কিনা সেটাও নজরে রাখা দরকার। উভয় ক্ষেত্রেই বিরাজ করছে একটা নাজুক অবস্থা। নতুন ডাক্তারদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন বাধ্যতামূলক করা হলেও এ বাধ্যবাধকতা কার্যকর নেই। এক্ষেত্রে একটা স্বেচ্ছাতন্ত্র চালু রয়েছে। সরকারি ডাক্তারদের প্রাইভেট প্রাকটিস করা না করা নিয়ে একটা বির্তক আছে। অনেকে মনে করেন, তাদের প্রাইভেট প্রাকটিস করার অধিকার থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ্য ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের এই সুযোগ থাকলে অনেক চিকিৎসাপ্রার্থীই লাভবান হতে পারে। অনেকে মনে করেন, সরকারি ডাক্তাদের এ ধরনের সুযোগ থাকা অনুচিৎ। কারণ, তাদের চাকরিগত দায়িত্বাপালন এতে ব্যহত হতে পারে। তারা প্রাইভেট প্রাকটিসে অধিক সময় ও মনোযোগ দিতে পারেন, যাতে তাদের মূল দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ঘটতে পারে। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রাইভেট প্রাকটিস করা কোনো বাধা নেই। তবে অনেকেরই এই মত যে, তাদের প্রাইভেট প্রাকটিসের একটা নীতিমালা, সময় এবং পরিধি নির্ধারণ করে দেয়া যোতে পারে। এক্ষেত্রে স্ব স্ব হাসপাতালেই তাদের প্রাইভেট প্রাকটিসের সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। সে রকম একটা ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এ ব্যবস্থা অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে সম্প্রসারণ করা হলে অধিক সুফল পাওয়া যাবে বলে অনেকে মনে করেন। মোটকথা, সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তা নির্ধারণ ও কার্যকর করতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবান জাতির জন্য উন্নত স্বাস্থ্য সেবার বিকল্প নেই।



 

Show all comments
  • md Anamul haque ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:৪৬ পিএম says : 0
    সব চাইতে বেশি দুর্নিতি হচ্ছে ডাক্তার ও নার্ছদের কাছে।মাননিয় প্রধান মন্এি খুব তারাতারি এটার ব্যাবস্তা নিবেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন