মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
একটা রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয় যখন সেই রাষ্ট্র তার সরকারকে নীতিগত মান্যতা দেয়। এই মান্যতা দেওয়ার প্রক্রিয়াতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। আর তা ঘটে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে। শুধু তাই নয়, কে ভোট পেলেন, তা গোপন রাখার মধ্য দিয়েও এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং এই ভোটদান প্রক্রিয়া হতে হবে সঠিক, গণনাও হবে সঠিকভাবে এবং গোপনীয়তা যাতে রক্ষা করা হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। স্বচ্ছতা, শুদ্ধতা এবং গোপনীয়তা যে কোনো নির্বাচনের তিন প্রধান স্তম্ভ হওয়া দরকার। এটা ইভিএমের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকার বিষয় নয়, যে কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে এই তিনটি জিনিস মাথায় রাখা হচ্ছে কী না, সেটা নজরে রাখা জরুরি।
ঘটনাচক্রে ইভিএম এই তিনটি পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ। জার্মানির সাংবিধানিক আদালত ২০০৯ সালে এক স্পষ্ট রায়ে এই কথাগুলোই বলেছে এবং তারা আবার কাগজের ব্যালটে ফেরত গেছে। একইভাবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে থাকা নেদারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডসহ আরো বেশ কিছু দেশ ইভিএম বাতিল করেছে।
ইভিএম স্বচ্ছ এবং সঠিক, এটি এক বাক্যে বলে দেওয়া যায় না, কারণ কোনো ভোটদাতাই তার নিজের ভোট দেখতেও পান না এবং সঠিক কিনা বুঝতেও পারেন না। যেটা বোঝা যায় সেটা হলো সর্বমোট কত সংখ্যক ভোট পড়ল, কিন্তু ভোটদাতার ভোট তার ইচ্ছা অনুযায়ী পড়ল কি না, তা বোঝার কোনো উপায় নেই।
ঠিক এই কারণেই ভিভিপ্যাট বা ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট মেশিন ভারতে চালু করা হয়। কিন্তু তা দিয়েও পুরো সমস্যার সমাধান হয় না। কারণ এই মুহূর্তে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে সমস্ত ভিভিপ্যাট মেশিন গোনা হয় না। যদি এরকম করা যেতো, যে কোনো নির্বাচনে একটা ইভিএমের গন্ডগোল হলে সমস্ত ভিভিপ্যাট মেশিন হাতে গোনা হবে, তাহলেও বিষয়টা মেনে নেওয়া যেত, কিন্তু যতদিন না সেই সংক্রান্ত কোনো নিয়ম বাস্তবায়িত হচ্ছে, ততদিন ইভিএমকে সন্দেহের ঊর্দ্ধে রাখা যায় কি?
আসা যাক গোপনীয়তার বিষয়টিতে। যখন পেপার ব্যালটে ভোট হতো, তখন গণনার সময় সমস্ত ব্যালট আগে মিশিয়ে দেওয়া হতো, যাতে বোঝা না যায়, কোন অঞ্চলের মানুষ কোন প্রার্থীকে বা কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়েছেন। যার ফলে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা থেকেও বাঁচার উপায় থাকত। দ্বিতীয়ত, কোন অঞ্চলের মানুষ সরকারি কোনো সুবিধা পেয়েও শাসকদলকে ভোট দিয়েছেন বা দেননি, সেটা বোঝার সম্ভাবনা কমত। ফলে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে প্রচার করার যে বিষয়টা ইদানিং আলোচনায় আসছে, সেটা থেকে বিরত রাখা যেত রাজনৈতিক দলগুলিকে। আধার কার্ডের সঙ্গে ভোটার কার্ড যুক্তকরণের বিরুদ্ধে এটাও একটা জোরালো যুক্তি।
যদিও এটা হয়তো সত্যি যে, ইভিএমে নির্বাচন হলে সময় এবং অর্থ কম ব্যয় হয়, কিন্তু এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে ইভিএম ব্যর্থ। যদিও নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
অনেকেই বলে থাকেন, এই পদ্ধতিতে ছাপ্পা ভোট এবং ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা কমে গেছে, কিন্তু এটা তো সত্যি যে, ইভিএমের মাইক্রোচিপ দিয়ে যে ভোট হয়, তাকে বিশ্বাস করা ছাড়া ভোটদাতার কোনো গতি নেই। কোন সফটওয়্যারে এই মেশিন চলছে সেটাও জানা নেই। এটা প্রমাণ করা যথেষ্ট কঠিন যে, ইভিএমে কারচুপি করা যায়, কিন্তু তা বলেই তা সন্দেহের ঊর্দ্ধে, সেটাও তো বলে দেয়া যাচ্ছে না। এই সন্দেহই কি যথেষ্ট নয় যে, আমরা ইভিএমের বদলে পেপার ব্যালটে ফিরে যাওয়ার আলোচনাটা অন্তত শুরু করতে পারি?
জার্মানির আদালতে বলা হয়েছিল, ‘যে কোনো নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক মান্যতা দিতে গেলে নির্বাচনী পদ্ধতিকে সম্পূর্ণরূপে স্বচ্ছ হতে হয়, তবেই একমাত্র সেই প্রক্রিয়া সন্দেহের ঊর্দ্ধে উঠতে পারে, তাতেই গণতন্ত্র রক্ষিত হয়।’ সুতরাং ভারতের নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব, এই সন্দেহের ঊর্দ্ধে ভারতীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।