Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হত্যার পর স্বামীর লাশ ৬ টুকরা

গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নিজ বেতনের টাকা বাবা-মাকে দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্বামী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দ্ব›দ্ব চলছিল স্ত্রী জেবুন্নাহারের। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করেন জেবুন্নাহার। পরে শ্বাসরোধ করে স্বামীকে হত্যা শেষে লাশ লুকিয়ে রাখেন বাসার ওয়ার্ডোভের ভেতরে। এরপরে কাজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যান ফ্যাক্টরিতে। রাতে বাসায় ফিরে আবারও স্বামীর লাশ কেটে ৬ টুকরা করেন জেবুন্নাহার। অবশেষে আলাদা আলাদা বস্তায় করে ফেলে দেন বিভিন্ন জায়গায়।
গতকাল দুপুরে গাজীপুর পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শাসসুন্নাহার। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার জেলার শ্রীপুর সদর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী (গিলারচালা) এলাকার আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
শাসসুন্নাহার বলেন, স্ত্রী জীবন্নাহারকে নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন রফিকুল। তিনি স্থানীয় হাউ আর ইউ পোশাক কারখানায় স্টোর লোডার পদে চাকরি করতেন। স্ত্রী জীবন্নাহার পাশের মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন।
পুলিশের এই নারী কর্মকর্তা বলেন, স্ত্রীর বেতনের টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে ঝগড়া-বিবাদ লেগে আছে। এ নিয়ে জেবুন্নাহার বহুবার স্বামী রফিকুলকে ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেন। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে তাদের মধ্যে বেতন নিয়ে বিরোধ হয়। বৃহস্পতিবার সকালে আবারও কথা কাটাকাটি হলে স্ত্রীকে থাপ্পর মারেন রফিকুল। একপর্যায়ে রফিকুল ঘুমিয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ স্ত্রী ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করলে তিনি নিচে পড়ে যান। পরে ইট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করলে অচেতন হয়ে পড়েন রফিকুল। তখন গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন জেবুন্নাহার। পরে বাসার ওয়ার্ডোভে লাশ লুকিয়ে রেখে নিজের কাজে চলে যান স্ত্রী।
এসপি আরও বলেন, রাত ১১টায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে বঁটি দাড় দিয়ে দেহ থেকে মাথা, দুই হাত ও হাটু থেকে দুই পা বিচ্ছিন্ন করে। পরে বিচ্ছিন্ন মাথা, হাত ও দুই পা বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের ময়লার ড্রেনে ফেলে রাখে। আর দেহ আরেকটি বস্তায় ভরে মেঘনা কম্পোজিট কারখানার সীমানা প্রাচীরের পশ্চিম পাশের বাঁশঝাড়ের নিচে ফেলে রাখেন। এদিকে স্থানীয়রা শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাঁশঝাড়ের নিচে রক্তমাখা বস্তা দেখে পুলিশকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থল থেকে লাশের খন্ডিত অংশ উদ্ধার করেন। এ বিষয়ে স্ত্রী জেবুন্নাহারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন।
পুলিশ ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার উলামাকান্দি গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে মারিয়া আক্তার রোজা নামের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। ঘটনার সময় মেয়েটি পাশেই জেবুন নাহারের ছোট বোনের বাসায় ছিল।
শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম বলেন, রফিকুলকে হত্যার ঘটনায় তার বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে স্ত্রী জীবন্নাহারকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় অভিযুক্ত স্ত্রী জীবন্নাহারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ