Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশের আগ্রহ মামলায়

ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এক ট্রাফিক পুলিশের সংকেত পেয়ে মোটরসাইকেল থামালেন চালক। এ সময় কাগজপত্র তল্লাশী করে অনিয়ম থাকায় চালককে মামলা করেন দায়িত্বরত সার্জেন্ট। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে একান্তে কথা-বার্তা হলেও ছাড় পায়নি চালক।

ট্রাফিকের এমন মামলা করার দৃশ্য শুধু শাহবাগের নয়। রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্টে হঠাৎ মোটরসাইকেল বা গাড়ি থামিয়ে এমন মামলা করার দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতিদিন। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ শুরুর পর মামলা ও জরিমানার সংখ্যা আরও বেড়েছে।
নগরবাসীর ভাষ্য, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম’ শুরু হলেও পুলিশের নজর শৃঙ্খলায় নেই। তারা মূলত মামলা-জরিমানা নিয়ে ব্যস্ত। হঠাৎ করেই কোন বাস বা গাড়ি থামিয়ে কাগজ পত্র দেখতে চায় সার্জেন্টরা। এতে যাত্রীদের অনেক প্রয়োজন বা তাড়া থাকলেও এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গাড়ি বা চালকের কাগজপত্রে ছোট ত্রুটি পেলে মামলা-জরিমানা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বড় ধরণের অনিয়ম বা ত্রুটি ধরা পরলে তবে আর নিস্তার নেই। রেকার লাগিয়ে ডাম্পিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সে সব গাড়ি। এতে আচমকা চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। যারা অনেক দূরে যাবেন তাদের ভোগান্তি আরও বেশি। ভুক্তভোগী যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, হঠাৎ করে গাড়ি থামিয়ে এমন কাগজপত্র তল্লাশী করায় যাত্রীদের যেমন ভোগান্তি হয়, তেমনি রাস্তায়ও তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
চালক ও হেলপারদের ভাষ্য, গাড়ি থামিয়ে মামলা-জরিমানা করলে এর একটি অংশ ভাগ হিসেবে পায় কর্তব্যরত সার্জেন্ট। যার কারণে শৃঙ্খলা রক্ষার চেয়ে মামলা-জরিমানার প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে বেশি। এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলা ও জরিমানা আদায়ের সংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি মাসে শ্রেষ্ঠ ইউনিট ও কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেওয়া হয়। আবার কখনো কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলার সংখ্যা কমে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়।
এদিকে, চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি থেকে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানীতে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ শুরু হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। শৃঙ্খলা পক্ষ শুরুর প্রথম দিন ট্রাফিক আইন ভাঙাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন যানবাহনে ৬ হাজার ৯০৯টি মামলা করা হয়। ওইদিন জরিমানা আদায় করা হয় ৩৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া ৩৮টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৮৮৯টি গাড়ি রেকার করা হয়।
ট্রাফিক সূত্রে জানা গেছে, উল্টোপথে গাড়ি চালানোর দায়ে ১ হাজার ২৯০টি, হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে ২১৮টি, হুটার ও বিকন লাইট ব্যবহারে ১১টি, কালো গ্লাস ব্যবহারে ২৩টি ও গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইলে কথা বলার কারণে ২৬টি মামলা দেয়া হয়। এ সময়ে ট্রাফিক আইন অমান্য করায় ২ হাজার ৭৬৮টি মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা ও ১৩৯টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
একইভাবে, ১৬ জানুয়ারি ৬ হাজার ৭২২টি যানবাহনকে মামলা ও ৩১ লাখ ২ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায়সহ ৪০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৮৪৯টি গাড়ি রেকার করা হয়। ১৭ জানুয়ারি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ১৮ জানুয়ারি ৪ হাজার ১৭২টি মামলা ও ২০ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময়ে ১৫টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৪৫৬টি গাড়ি রেকার করা হয়। ১৮ জানুয়ারি ৪ হাজার ১৭২টি মামলায় ও ২০ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫০ টাকা জরিমানা আদায়সহ ১৫টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৪৫৬টি গাড়ি রেকার করা হয়। ১৯ জানুয়ারি ৪ হাজার ১৭৭টি মামলা ও ২১ লাখ ৫০ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানাসহ ২৫টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৬৫৪টি গাড়ি রেকার করা হয়। ২০ জানুয়ারি ৬ হাজার ১৫৩টি মামলা ও ২৯ লাথ ৯৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ওই দিন ২৫টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৮০৫টি গাড়ি রেকার করা হয়। ২১ জানুয়ারি ৬ হাজার ১৬৫ মামলা ও ২৮ লাখ ৭১ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময়ে ৩০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৮৯৫টি গাড়ি রেকার করা হয়। এছাড়া গত ২২ জানুয়ারি বিভিন্ন অভিযোগে ৫ হাজার ৯০২ মামলা ও ২৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা আদায় করে ট্রাফিক বিভাগ। এ সময়ে ১৮টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৭৬৭টি গাড়ি রেকার করা হয়।
ট্রাফিক সূত্র জানায়, উল্লেখযোগ্য মামলার মধ্যে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর দায়ে ১ হাজার ৭৪টি, হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে ৯৮টি, হুটার ও বিকনলাইট ব্যবহারে ৬টি, স্টিকার ব্যবহারে ৩টি, মাইক্রোবাসে কালো গ্লাস লাগানোয় ২২টি ও গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলায় চালককে ২৫টি মামলা দেওয়া হয়। এ সময়ে ট্রাফিক আইন অমান্য করায় ৩ হাজার ৪১৩টি মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা ও ১০৫টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ঢালাওভাবে মামলা ও জরিমানা আদায় করা হলে গণপরিবহন ব্যবসায় জড়িতরা নিরুৎসাহিত হবে। এতে ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা কমলে আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়বে নগরবাসী।
সার্জেন্টদের ভাষ্য, ট্রাফিক নির্দেশনা না মানা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, গাড়ির ফিটনেস-সংক্রান্ত কাগজপত্র নবায়ন না করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন না করা, নির্ধারিত রুট পারমিট ব্যবহার না করা, নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করা, মোটরসাইকেলে দু’জনের বেশি যাত্রী বহন করা, হেলমেট না পরা, সঠিক জায়গায় গাড়ি পার্ক না করা, ওভারটেক করা, রাতে হেডলাইট না জ্বালিয়ে গাড়ি চালানো, সিটবেল্ট না বাঁধা, গাড়িতে নম্বর নবায়নকৃত নম্বর প্লেট না থাকা, মদ্যপান বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো আরও কিছু অনিয়ম পেলে তারা মামলা-জরিমানা করেন। তবে অহেতুক কাউকে মামলা করেন না বলে অনেক চালক জানান।
মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত কয়েকজন সার্জেন্ট বলেন, বর্তমানে পরিচালিত অভিযানের মধ্যেও ট্রাফিক আইন ভাঙা অব্যাহত রয়েছে। তবে এর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তারা বলেন, মামলা ও জরিমানা করায় আইন ভাঙার সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কমতে থাকে।
কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অহেতুক কাউকে মামলা হয়রানি করতে বলা হয় না। তবে কিছু উৎসাহী সার্জেন্ট এমন কাজ করে।
ঊর্ধ্বতনদের কেউ কেউ বলেন, ট্রাফিকরা মামলার কাজ করার সময় তাদের অনেক পরিশ্রম হয়। তাই ট্রফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে আদায়কৃত জরিমানার একটি অংশ পুলিশকেও দেওয়া উচিত। তবে কেউ কেউ এমন বক্তব্যের বিরোধিতাও করেন। তাদের ভাষ্য, জরিমানার টাকা থেকে পুলিশকে দেওয়া হলে মামলার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।



 

Show all comments
  • Rashed ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ পিএম says : 0
    জরিমানার বিকল্প নাই মনে করি। কারণ এখন কাগজ পত্র দেখতে একটু দেরি হলেও কিছু দিন পর আর মূল ডকুমেন্ট ছাড়া রাস্তায় গাড়ি বাহির হবে না। দুবাই সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আপনি দেখবেন। কোন্ কথা নাই। একটু বেশকম জরিমানা। জনগণ সচেতন প্রসাসন আন্তরিক কারন কোন অপরাধের জন্য কত টাকা জরিমানা লিস্ট করা আছে না দিলে সমস্ত লেনদেন বন্ধ। সুতরাং আবার ও অনুরোধ করছি জরিমানার বিধান কঠোর ভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে রাস্তায় শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Mehedi hasan ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩২ পিএম says : 0
    "Police manusher bondhu"
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ