Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তাওবা ও ইস্তিগফার : গুরুত্ব ও উপকারিতা

মুফতী পিয়ার মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খালিছভাবে তাওবা কর। এতে আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপরাশিকে মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহর।’ [তাহরীম:৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘গুনাহ থেকে তাওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তির মতো হয়ে যায়।’ [সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস:৪২৫০; শুআবুল ঈমান, হাদীস: ৬৭৮০; আসসুনানুল কুবরা, হাদীস:২০৫৬১] উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের দ্বারা বুঝা যায়, পাপ মোচনের মহৌষধ হচ্ছে তাওবা। তাওবার দ্বারা মুমিন হয় নিষ্পাপ এবং প্রবেশ করে অনাবিল শান্তির নিবাস জান্নাতে।

মানব মাত্রই ভুলের শিকার হয়
মূলত মানব মাত্রই ভুলের শিকার হয়। পাপে হয় পঙ্কিল। আসল কথা হলো, মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে পাপ-পূণ্যের ক্ষমতা দিয়ে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা মানবের ভিতরে অসৎকর্ম ও সৎকর্ম উভয়ের প্রেরণা জাগ্রত করেছেন।’ [শামস:৮] কাজেই মানবের ভূল হবেই। মানবের দ্বারা গুনাহ প্রকাশ পাবেই। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এক হাদীসের দ্বারা তো এ কথাও বুঝা যায় যে, আমাদের দ্বারা গুনাহ প্রকাশ না পেলে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ধ্বংস করে অন্য জাতিকে সৃষ্টি করবেন। সাহাবী আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তোমরা মোটেও গুনাহ না কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন এবং এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা গুনাহও করবে, তাওবা-ইস্তিগফারও করবে। তারপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।’ [মুসলিম, হাদীস:২৭৪৯; আহমাদ, হাদীস:৪০৪২; মুসনাদে ইবনে আবী শয়বা, হাদীস: ৮] এ হাদীসে ইঙ্গিত রয়েছে যে, যদি গুনাহ করার যোগ্যতা মানুষের মাঝে না থাকতো, তাহলে মানব সৃষ্টির কোনো প্রয়োজনই ছিল না। শুধুমাত্র ইবাদতের জন্য ফেরেশতারাই যথেষ্ট ছিল।

ফেরেশতাদের মাঝে গুনাহ করার কোনো যোগ্যতাই নেই
কারণ ফেরেশতারা আল্লাহর এমন এক সৃষ্টি, যাঁরা সার্বক্ষণিক তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর হুকুম পালনেই মশগুল। তাঁদের মাঝে গুনাহ করার কোনো যোগ্যতাই নেই। চাইলেও তাঁরা গুনাহ করতে পারবে না। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরেশতাগণ দিবা-রাত্রি আল্লাহ তাআলার তাসবীহ পাঠ করেন। তাঁরা কোনো সময় অলসতাও করে না, ক্লান্তও হয় না।’ [আম্বীয়া: ২০] অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ফেরেশতাগণ আল্লাহর কোনো আদেশ অমান্য করে না এবং তাঁদেরকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়, তাঁরা তাই করে। [তাহরীম: ৬]

নবী-রাসূলগণ নিষ্পাপ
আর মানুষ এমন এক সৃষ্টি, যাদের মধ্যে পাপ-পূণ্য উভয়টা করার যোগ্যতাই আছে। কোনো মানুষই এর বাইরে নয়। এ জন্যই দেখা যায়, যে নবী-রাসূলগণ সৃষ্টির সেরা ও উম্মাহর হেদায়াতের কান্ডারী হওয়া সত্তেও তাঁরা এর বাইরে ছিলেন না। তবে আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে স্বীয় রহমতে হিফাযত করেছেন। ফলে তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,‘নিশ্চয় যুলাইখা ইউসুফ আ. এর ব্যাপারে পাপ কর্মের কল্পনা করেছিল। ইউসুফ আ.ও যুলাইখার ব্যাপারে পাপ কর্মের কল্পনা করতেন যদি না স্বীয় রবের প্রমাণ অবলোকন করতেন। [অর্থাৎ স্বীয় রবের প্রমাণ অবলোকন করার কারণে তিনি সেই পাপ কর্মের কল্পনা থেকে বেঁচে গেলেন] এমনিভাবে হয়েছে। যাতে আমি তাঁর থেকে মন্দ ও নির্লজ্জ বিষয় দুরে সরিয়ে দেই। তিনি ছিলেন আমার মুখলিছ বান্দাদের একজন।’ [ইউসুফ: ২৪] সাইয়ীদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এর বাইরে ছিলেন না। সাহাবী আগার আল মুযানী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মাঝে-মধ্যে আমার অন্তর মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়, তাই প্রতিদিন আমি একশ’ বার পর্যন্ত ইস্তিগফার করি।’ [মুসলিম, হাদীস:২৭০২] কথাটি কে বলেছেন? সেই সুমহান ব্যক্তি, যিনি ছিলেন নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ, পবিত্র, গুনাহ করার কল্পনা থেকেও যিনি ছিলেন নিরাপদ। ভূল-ত্রæটির সঙ্গে যার জীবন পরিচিত নয়। যার অগ্র-পশ্চাতের সকল গুনাহ মাফ। এমন নিষ্কলুষ, মার্জিত, পরিশীলিত ও পবিত্র জীবন যাঁর, তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, ‘আমি প্রতিদিন একশ’ বার পর্যন্ত ইস্তিগফার করি। আল্লাহর দরবারে গুনাহের জন্য মাফ চাই’। প্রকৃতপক্ষে তাঁর ইস্তিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা ছিল আরো বেশি, যা অন্যান্য হাদীস থেকে জানা যায়।

গুনাহের তাড়না সবার অন্তরেই হিসহিস করে উঠতে পারে
যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাকাম ও মর্যাদা সকল মাখলুকের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি। এতো বেশি যে, যে পর্যন্ত পৌছা কোনো মাখলুকের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এ মাকাম ও মর্যদার অধীকারী হওয়া কারো পক্ষেই কোনো কালেই সম্ভব নয়। তা সত্তেও তিনি কেন এত বেশি ইস্তিগফার করতেন? এর ব্যাখ্যায় উলামায়ে কিরাম বলেছেন, ‘মাঝে-মধ্যে আমার অন্তর মেঘাচ্ছ হয়ে যায়, তাই প্রতিদিন আমি একশ’ বার পর্যন্ত ইস্তিগফার করি।’ এ কথার অর্থ হলো, মানুষ হিসাবে কখনও সখনও একজন নবীর অন্তরেও শয়তানী ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি হতে পারে। একজন মানুষ যত বড় মুত্তাকী আর আল্লাহ ওয়ালাই হোক না কেন, তার অন্তরেও গুনাহের তাড়না হিসহিস করে উঠতে পারে। যত ওলী, বুযুর্গ, সুফী-সাধক এ পৃথিবীর বুকে ছিলেন, তাঁরা সবাই পাপের এ উত্তপ্ত ছোঁয়া উপলব্ধি করেছেন। পাপের আকাঙ্খা প্রত্যেকের হৃদয় জগতে জেগেছে। সে হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনেও এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তাঁরা ছিলেন আলোকিত হৃদয়ের মানুষ। তাঁদের উপর ছিল আল্লাহর বিশেষ রহম ও করম। যার ফলে তাঁরা সর্ব প্রকার গুনাহ থেকে নিজেদেরকে সযতেœ দূরে রাখতে পেরেছিলেন। শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও নফসের আকুলি বিকুলি সর্ম্পকে তাঁরা ছিলেন úূর্ণ সতর্ক ও সচেতন। তাই পাপের বিষাক্ত ছোবল তাঁদের কে আক্রমণ করতে পারে নি। বুঝাগেল গুনাহের বাসনা যে কারো মনেই জাগতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। [ইসলাহী খুতুবাত:৬/৪৫৯-৪৬১]

তাওবা-ইস্তিগফারই গুনাহ মাফের মহৌষধ
তবে যে পাপের প্রবণতাকে দমন করবে বা পাপ করে ফেললে তাওবা-ইস্তিগফার করবে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ। আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তার জন্যই জান্নাত। এই তাওবা-ইস্তিগফারই গুনাহ মাফের মহৌষধ। মানুষ যত গুনাহই করুক না কেন, সঠিক পন্থায় তওবা করলে তার গুনাহ মাফ হবেই।

একশ’ খুনির তাওবা
একটি গল্প বলি। কোনো বানানো আষাঢ়ে গল্প নয়। হাদীসের গল্প। সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যবান নিঃসৃত গল্প। সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,বনী ইসরঈলের এক ব্যক্তি নিরানব্বই জন মানুুষকে হত্যা করেছিল। এরপর তার ভিতর তাওবার প্রেরণা জাগ্রত হলো। তাওবার জন্য অস্থির হয়ে উঠলো। এ নিয়ে কঠিন ভাবনায় পড়ে গেলো সে। ভাবলো এখন কি করা যায়? ভাবনায় তাড়িত হয়ে খোঁজতে লাগল কার কাছে গেলে সমাধান পাওয়া যাবে। সে মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো, এলাকার সবচেয়ে বড় আলেম কে? তার কাছে এ বিষয়ে জানবে। তাকে দেখিয়ে দেওয়া হলো এক খৃষ্টান পাদ্রীকে। যিনি ছিলেন আবেদ। কিন্তু আলেম ছিলেন না। তাঁর কাছে গিয়ে বলল, জনাব, আমি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছি। এখন আমি এসেছি তাওবা করতে। আমার জন্য তাওবার দরজা খোলা আছে কি? পাদ্রী উত্তর দিলো, ৯৯ টি খুন করার পর এসেছো তাওবা করতে? তুমিতো ধ্বংস হয়ে গেছো। তোমার জন্য তাওবার কোনো রাস্তা খোলা নেই। তুমি নির্ঘাত জাহান্নামী। এ কথা শুনে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়লো। আর চিন্তা করলো, আমি তো শেষ। তাহলে আর একে বাঁচিয়ে রেখে লাভ কি? একেও শেষ করে দিয়ে একশ’টি হত্যা পুরো করি। যেই ভাবনা সেই কাজ। পদ্রীকে হত্যা করে একশ’ টি হত্যা পূর্ণ করলো। কিন্তু তার ভিতরটা যেহেতু তাওবার চিন্তায় অস্থির ছিলো, তাই আবার সে ঐ এলাকার সবচে বড় আলেমের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লো। মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো এলাকার সবচেয়ে বড় আলেম কে? তার কাছে এ বিষয়ে জানবে। এবার তাকে এলাকার সবচে বড় আলেমের সন্ধান দেওয়া হলো। সে আলেমের কাছে তার পূর্ণ বৃত্তান্ত খুলে বললো। সে বললো, আমি ১০০ জন মানুষকে হত্যা করেছি। এখন আমি এসেছি তাওবা করতে। আমার জন্য তাওবার দরজা খোলা আছে কি? উক্ত আলেম তাকে সান্তনা বাণী শোনিয়ে বললেন, তুমি হতাশ হয়ো না। তোমার তাওবা অবশ্যই কবূল হবে। তোমার ও তোমার তাওবার মাঝে কিসে বাঁধ সাধবে? আগে তুমি তাওবা কর। তারপর অমুক এলাকায় চলে যাও। কারণ সেখানে অনেক নেককার লোক আছে। তাদের সংশ্রবে থেকে ইবাদত-বন্দেগী করতে থাকো। তোমার এ এলাকায় আর ফিরে এসো না। কারণ তোমার এ এলাকা পাপের এলাকা। যেহেতু লোকটি তাওবার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল। তাই সে দেরি না করে তাওবা করে সে এলাকার দিকে রওনা হয়ে গেলো। পথিমধ্যে মৃত্যু তাকে হানা দিলো। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তাকে নেওয়ার জন্য রহমতের ফেরেশতা এলো। এ দিকে আযাবের ফেরেশতাও এসে উপস্থিত হলো। উভয়ের মাঝে মতানৈক্য দেখা দিলো। রহমতের ফেরেশতা বললো, সে তো খাঁটি দিলে তাওবা করেই আলেমের কথামতো নেককার লোকদের সংশ্রবে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিল। কাজেই তাকে আমিই নিয়ে যাবো। আযাবের ফেরেশতা বললো, না, না, তা হতে পারে না। সে তো কখনও কোনো ভালো কাজ করে নাই। তার তাওবা কবূল হয়েছে কি না, তাও জানা যায়নি। কাজেই তাকে আমি নিয়ে যাবো। এ দ্ব›দ্বমুখর অবস্থায় ফায়সালার জন্য আল্লাহ তাআলা মানুষের আকৃতিতে তৃতীয় আরেকজন ফেরেশতা পাঠালেন উভয়ের মাঝে মীমাংসার জন্য। উক্ত ফেরেশতা মীমাংসা করলেন এভাবে- তোমরা মেপে দেখো, যেখানে সে মারা গেছে, সেখান থেকে তার এলাকা বেশি নিকটে, নাকি নেককার লোকদের এলাকা, যেদিকে সে রওনা হয়েছিল, সে এলাকে বেশি নিকটে। যে এলাকাই বেশি নিকটে হবে, সে সেই এলাকারই গণ্য হবে। যদি তার এলাকার বেশি নিকটে হয়, তাহলে তাকে আযাবের ফেরেশতা নিয়ে যাবে। আর যদি নেককার লোকদের এলাকার বেশি নিকটে হয়, তাহলে তাকে রহমতের ফেরেশতা নিয়ে যাবে। এ মীমাংসা উভয় ফেরেশতা মেনে নিয়ে মাপার পর দেখা গেলো, নেককার লোকদের বসতী অধিক নিকটে। তাই রহমতের ফেরেশতা তাকে নিয়ে চলে গেলো। অন্য বর্ণনায় আছে, যখন লোকটির প্রাণ বের হচ্ছিল, তখন সে হামাগুড়ি দিয়ে নেককার লোকদের বসতীর দিকে আগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছিলো। এক বর্ণনায় এও আছে, আল্লাহ তাআলা তার বসতীকে নির্দেশ দিলেন দূরে যেতে আর নেককার লোকদের বসতীকে নির্দেশ দিলেন কাছে আসতে। [মুসলিম, হাদীস: ২৭৬৬; বুখারী, হাদীস:৩৪৭০] সুবহানাল্লাহ! তাওবার কি পাওয়ার? কি ক্ষমতা? ১০০ খুন! এরপরও মাফ! চিন্তা করা যায়?

যাও, তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম
এ ব্যাপারে সাহাবী আবূ হুরায়রা রা. এর সূত্রে ইমাম মুসলিম রহ. তাওবা অধ্যায়ে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি হলো-
সাহাবী আবূ হুরায়রা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতীত উম্মতের জনৈক পাপী ব্যক্তির একটি ঘটনা শুনালেন। লোকটি ছিল জঘন্যতম গুনাহগার। পাপ দরিয়ায় ডুবন্ত ছিল তার জীবন। কোনো দিন কোনো ভালো আমল করে দেখে নি। এ অবস্থায় মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে সে তার সন্তানাদী ও পরিবার-পরিজনকে অসিয়ত করলো যে, আমার সর্ম্পকে তোমরা তো জানো। পাপ-পঙ্কিলতায় থৈ থৈ করা আমার জীবন। নেক আমল বলতে কিছুই নেই। এখন আমি বড্ড বেশি ভয় পাচ্ছি। তাই তোমরা এক কাজ করবে। আমি যখন মারা যাবো, আমার লাশটা পুড়ে ছাই করে ফেলবে। এরপর ছাইগুলোকে একদম মিহি করে পিষে ফেলবে। তারপর সেই ছাইগুলোকে তীব্র বাতাসে সমুদ্রে উড়িয়ে দিবে। তোমাদেরকে এ অসিয়ত কেন করছি জানো? কারণ আল্লাহ তাআলা যদি আমাকে ধরতে পারেন, তাহলে আমার আর রক্ষা নাই। তিনি আমাকে এমন শাস্তি দিবেন, যে শাস্তি দুনিয়ার অন্য কাউকে দেওয়া হবে না। তারপর সে যখন মারা গেলো, তার পরিবারের লোকেরা তার অসিয়ত মতোই তাকে পুড়িয়ে পিষে ছাইগুলোকে তীব্র বাতাসে সমুদ্রে উড়িয়ে দিলো। এরপর অসীম শক্তির অধিকারী আল্লাহ তাআলা যমীনকে নির্দেশ দিলে সে আবার আগের মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ হয়ে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হলো। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বললেন, এমন অসিয়ত তুমি কেন করলে? সে বললো, আপনার ভয়ে হে রব! কারণ জীবনে কোনো দিন কোনো নেক আমল করে দেখি নি। পাপের নর্দমায় ভাসমান ছিল আমার জীবন। তাই আমি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে, আপনার আযাব আমাকে পাকড়াও করবেই। আর আপনার আযাব তো বড়ই কঠিন। এ আযাবের ভয়েই আমি এমনটি করেছি। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা বলবেন, যেহেতু আমার ভয়ে তুমি এরুপ করেছিলে; তাহলে যাও, তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। [মুসলিম, হাদীস: ২৭৫৬]
(চলবে)



 

Show all comments
  • HM Abu Tayub ৬ মে, ২০২০, ২:৫৫ পিএম says : 0
    شكرا
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ ইমরান ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:১৩ এএম says : 0
    মাশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন