বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্ব আজ ন্যুব্জ। গত বছর মার্চে সমগ্র বিশ্বে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা দেয়। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন শুরু করে। সরকারগুলোর অনেকে করোনাভাইরাসকে সামান্য ফ্লু বলে উপেক্ষা করে নিজ দেশের জনগণকে ফেলেন চরম বিপদে। অনেক দেশের সরকার করোনা মোকাবিলায় রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু কেন বিশ্বব্যাপী করোনার মতো অদৃশ্য এক শক্তিশালী ভাইরাস পৃথিবীর মানুষকে ত্রস্থ করে তুলল, এ ধরনের মহামারির অতীত ইতিহাসই বা কী অথবা এর পেছনে কোনো আধ্যাত্মিক কারণ রয়েছে কি না তা খোঁজার চিন্তাও কেউ করেনি। বরং এর মোকাবিলায় যুদ্ধাবস্থার ন্যায় ভ্যাকসিন তৈরিতে শত শত মন নস্যি ব্যয়ের পথে হাঁটলো বিশ্বের তাবড় তাবড় শক্তিগুলো।
অতীত ইতিহাস মন্থন করে আমরা দেখতে পাই যে, যুগে যুগে মানুষ যখন আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, সমাজে নানা অনাচার, অপকর্ম ছড়িয়ে পড়ে তখন তাদের শাস্তি স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের গজব পৃথিবীতে নেমে আসে। আদ, সামুদসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীকে পৃথিবী থেকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। মুসা (আ.)-এর কওমের গো বৎস পুজাকারীদের বাধা না দেয়ায় তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছিল। দাউদ (আ.)-এর সময় শনিবার মাছ ধরতে বাধা না দেয়ায় তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের কাছেও পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে’। (সুরা আনআম : ৪২)
বানী ইসরাইলের ওপর ধারাবাহিকভাবে গজব আসে যা কোরআন মাজিদ পড়লেই জানা যায়। বন্যা, খরা, ফসলহানিসহ বিভিন্ন শাস্তির সম্মুখীন হয় বিভিন্ন যুগের মানুষ। আজ হামেশায় শোনা যায় বিভিন্ন দেশে প্রাচীন পূরাকীর্তি আবিষ্কারের ঘটনা। মূলত এগুলো সবই মহান আল্লাহ তা‘আলার গজবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিভিন্ন জাতির আবাস। আল্লাহর গজবের কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্যই সেগুলো পৃথিবীর বর্তমান বসবাসকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
মহানবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের পূর্বযুগে বিশ্বে নানা ধরনের অন্যায়-অবিচার ও পাপাচার প্রসার লাভ করেছিল। আইয়ামে জাহেলিয়াত নামের সেই যুগের বর্বর জাতিগুলোকে সভ্য করার লক্ষ্যেই আল্লাহ তা‘আলা মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। এরপর আর কোনো নবী বা রসূল পৃথিবীতে আসবে না। তবে কিয়ামত সঙ্ঘটিত হবার আগে পৃথিবীতে নানা ধরনের অপরাধ সঙ্ঘটিত হবে। মানুষ খুন, রাহাজানি, যিনা ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ, জুয়া, অশ্লীলতাসহ নানা অপরাধে লিপ্ত হবে, অনেকে এগুলোকে অন্যায় মনে না করেই এসবের সাথে জড়িয়ে যাবে। অনেকে এসবকে প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রতীক মনে করবে। তখন মানুষকে সতর্ক করা বা পরীক্ষার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নানা ধরনের ছোট ছোট আজাব-গজব পৃথিবীতে নাযিল করবেন।
আল্লাহ তা‘আলা কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেন, ‘আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি, ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। (সুরা বাকারা : ১৫৫) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি তাদেরকে বড় শাস্তির পূর্বে ছোট শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে’। (সুরা সাজদাহ : ২১)
করোনা একটি অতি ক্ষুদ্র অদৃশ্যমান ভাইরাস। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করুক না কেন, এটি যে আমাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে গজব তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের অনৈতিকতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার কারণে সতর্কতা হিসেবে এই গজব পৃথিবীতে নেমে এসেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই তাওবাহ করার সুযোগ গ্রহণ না করেই লাশবাহী খাটে সওয়ার হচ্ছেন। কিন্তু এখনো যারা পৃথিবীতে বেঁচে আছি তাদের জন্য এখনো তাওবার দরজা খোলা। মৃত্যুর আগে জীবনকে অমূল্য সম্পদ মনে করে তাওবার সুযোগ আমাদের অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত।
কোনো জনপদে যখন বিপদ বা বিপর্যয় আসে তখন শুধু গুনাহগারের ওপরই শাস্তি পতিত হয় না; বরং সে এলাকার সবার ওপর পতিত হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমরা এমন ফেতনা (বিপদ) থেকে বেঁচে থাক যা বিশেষতঃ শুধু যে জুলুম করে তার ওপর পতিত হবে না, এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর’। (সুরা আনফাল : ২৫)
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের গুনাহের কারণে যে শাস্তি দেন তা শুধু তাদের সতর্ক, সাবধান ও সংশোধন হয়ে গুনাহ ছেড়ে তার দিকে ফিরে আসার জন্য। মূলত এ শাস্তিটা যারা আল্লাহ তাআলার পথে ফিরে আসতে চায় তাদের জন্য রহমতস্বরূপ। কিন্তু যারা এ সতর্কতাকে গুরুত্ব দেয় না, সাবধান হয় না, রহমত হিসেবে গ্রহণ করে না, শুধু পাপ করেই যায়, পাপ কাজে বাধা না দিয়ে সহযোগিতা করে তাদের ওপর কিছুদিন পরপর নেমে আসছে ভয়াবহ বিপর্যয়। এখনো সময় আছে সতর্ক হওয়ার, সাবধান হওয়ার, সকল পাপ থেকে ফিরে আসার। আল্লাহ তা’আলা হেফাজত করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।