পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের উচ্চ পর্যায় থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও সীমান্তে নির্মমভাবে বাংলাদেশী বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের সঙ্গে চীন, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের সীমান্ত থাকলেও গত ১০ বছরে কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। চলতি বছরের প্রথম মাসেই বাংলাদেশ সীমান্তে নিরীহ দু’জন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করলো ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ)। বিভিন্ন সময় জুড়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকান্ডের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। সর্বশেষ গত বছর দিল্লীতে বিজিবি ও বিএসএফ প্রধানের মধ্যে বৈঠকেও সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ প্রধান। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ী মো. জেনারুল নির্মমভাবে খুন হন। তিনি হরিপুর উপজেলার ৪নং ডাঙ্গীপাড়া ইউপির তালডাঙ্গী গ্রামের আব্দুল তোয়াফের ছেলে। এর আগে ১৮ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় সীমান্তে বিএসএফয়ের গুলিতে জাহাঙ্গীর আলম রাজু (২১) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হন।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে ভারত সরকার ও বিএসএফ বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করেছিল যে, সীমান্তে প্রাণঘাতী কোনও অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। পরবর্তীতে ২০১১ সালে বিএসএফ ও বিজিবি পাচারকারী ও অবৈধপথে সীমান্ত পার হওয়া নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তিও করে। ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কথা বলা হয় বার বার। অন্যদিকে বিএসএফ বার বার নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করলেও বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠক বা প্রতিবাদ লিপি ছাড়া আর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায় না।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখছে না। দু’দেশের সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরও ভারত বারবার বাংলাদেশী নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করছে। তারা (ভারত) বলেছিল, সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার করবে না। কিন্তু আমরা দেখলাম, সেটি মুখের বুলি হলো। এখনও প্রতিনিয়ত সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের দ্বরস্থ হওয়া উচিত। সদিচ্ছা থাকলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ সম্ভব। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই বেশি প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র জানায়, ফালানী মতো হত্যাকান্ডের ঘটনার পরেও বিএসএফ দায়মুক্তির সুযোগ পেয়েছে। বিচার এমনভাবে হয়েছে যে, দায়মুক্তি প্রতিষ্ঠিত করেছে। একদিকে ফালানীর মামলা নষ্ট হয়েছে, আরেকদিকে রিটটিও সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে। এধরনের হত্যা বন্ধের জন্য যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা নেয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানী খাতুনকে সীমান্তে হত্যার ঘটনাটি ছিল বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলীতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। তার লাশ দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকে কাঁটাতারের বেড়ায়। এই হত্যাকান্ডের ছবি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএসএফের বিশেষ আদালত ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন।
হরিপুর থানা পুলিশের ওসি আমিরুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার ভোরে মো. জেনারুলসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে। এ সময় মালদ্বখন্ড ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই জেনারুল নিহত হন। তবে বাকি গরু ব্যবসায়ীরা পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন।
আইন ও সালিস কেন্দ্র ও বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে মারা গেছেন ১২২১জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে বিএসএফের হাতে ১০৫২ জন ও ভারতীয়দের হাতে ১৬৯ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
ওই সূত্র জানান, ২০১৩ সালে মোট ২৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্যরাএদের মধ্যে ১৩ জনকে গুলি করে এবং ১৫ জনকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালে হত্যা করা হয়েছে ৪০ জন বাংলাদেশিকে। ২০১৫ সালে হত্যা করা হয় ৪৫ জনকে, এবছর তাদের নির্যাতনে আহত হয়েছেন ৬৮ জন, ২০১৬ সালে ৩১ জন আর ২০১৭ সালে বিএসএফ ২২ জনকে হত্যা করে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংগঠকদের মতে, দুদেশের মধ্যে সমঝোতা এবং এ সম্পর্কিত চুক্তি অনুযায়ী যদি কোন দেশের নাগরিক অননুমোদিতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে, তবে তা অনুপ্রবেশ হিসেবে চিহ্নিত হবার কথা এবং সেই মোতাবেক ঐ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের নিয়ম। তবে এই সমঝোতা এবং চুক্তি লঙ্ঘন করে বিএসএফ সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের গুলী করে হত্যা করছে ও অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে-এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।