পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদকের ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্তে ভেঙ্গে পড়েছে মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেট। মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্তে গত তিন মাসে নিহত হয়েছে ৩৭ জন মাদক চোরাকারবারী। এদের অধিকাংশই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এছাড়াও আইন শৃঙ্খলা বাহনীর অভিযানে ধরা পড়ে কারাগারে গেছে অথবা এলাকা ছেড়ে দেশের বাইরে পালিয়েছে শত শত ইয়াবাকারবারী। এতে করে ভেঙ্গে পড়েছে সীমান্তভিত্তিক মাদক পাচারে সক্রিয় একাধিক
ইয়াবা সিন্ডিকেট। ঘাবড়ে গেছে মাদক চোরাকারবারী গডফাদাররা। তারা এখন সরকারের কাছে আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়ে প্রাণে বাঁচতে চায় বলে জানা গেছে।
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা চোরাকারবারীরা আত্মসমর্পণর জন্য কক্সবাজার শহরে জড়ো হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ মাসের শেষের দিকে অথবা আগামী মাসের শুরুতে
আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আত্মসমর্পণ হতে পারে।
এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গত শুক্রবার একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, “আমি পুলিশ বলেছি, এরা (ইয়বা কারবারি) কারা, তাদের আইডেনটিটি যেন রেডি করে রাখা হয়। আমরা ৩০ তারিখ, অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যে কোনো একদিন যাব।”
গত বছর মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন মাদক কারবারিদের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে মাদক কারবারিদের তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি।
এই অবস্থায় নতুন বছরের শুরুতে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়। পরে কক্সবাজারের চিহ্নিত মাদকপাচারকারীদের একটি অংশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের আগ্রহ জানালে বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিবেচনা করা হয় বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক গত ১৫ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণের কথা জানালে বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার পায়।
এতে করে তার মত শতাধিক ‘তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী‘ ইতোমধ্যে কক্সবাজার শহরের কোনো এক স্থানে জড়ো হয়ে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ এসেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন এর বক্তব্য হচ্ছে, ‹বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ হয়েছে। তারা নিজেরাই যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে তাদের অবহিত করেছি।”
তবে তিনি দাবি করেন, কক্সবাজারে জড়ো হওয়া ইয়াবা চোরাকারবারিরা পুলিশ হেফাজতে থাকার তথ্য ‘সঠিক নয়’। তারা নিজেরাই যোগাযোগের মাধ্যমে সমন্বিত হয়েছেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তারা কক্সবাজার শহরের একটি স্থানে জড়ো হয়ে নিজেদের উদ্যোগে হেফাজতে রয়েছেন বলেও পুলিশ জানান।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ওই সংবাদ মাধ্যমকে আরো বলেছিলেন, “তারা স্বাভাবিক জীবনে না এলে মামলা চলবে। আর স্বাভাবিক জীবনে গেলে এদের মামলা আমরা দেখব।”
ইয়াবা পাচার করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া ব্যক্তিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের অবৈধ সম্পদ বৈধতা পাবে কি না- সে প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর মন্ত্রী তখন দেননি। তিনি বলেন, “সম্পদের বিষয়টা দুদক বা এনবিআর দেখবে।
মিয়ানমার থেকে আসা নেশার বড়ি ইয়াবা মূলত কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা দিয়েই বাংলাদেশে ঢুকে। এই পথে অন্যান্য মাদকও আসে।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি সর্বশেষ তালিকায় থাকা চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারীদের ১ হাজার ১৫১ জন কক্সবাজারের। তাদের মধ্যে ৭৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী’ গডফাদার হিসেবে।
এই ‘শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের’ একটি বড় অংশের বসবাস টেকনাফ হয়ে দেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে। তাদের সবাই কম বেশি প্রভাবশালী, কেউ কেউ আবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
জানা গেছে, পুলিশের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে উখিয়া-টেকনাফের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ভাই ও তার স্বজনেরা। কয়েকদিন আগেই কক্সবাজারের সকল মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন উখিয়া-টেকনাফের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। তার নির্দেশের প্রেক্ষিতে এবার পুলিশের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে বদির ভাই ও স্বজনেরা। এরা হচ্ছেন বদির ভাই তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আব্দুর শুক্কুর, শফিক রহমান, ফয়সাল রহমান, বদির ভাগিনা শাহেদ রহমান নিপু।
এছাড়াও আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমের ছেলে দিদারও। আগামী ২১ জানুয়ারি কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ আনুষ্ঠানিকতার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হলেও তা এখন পিছিয়ে গেছে।
পুলিশের তথ্য মতে, কক্সবাজারে ইয়াাবার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি আছেন ৩৪ জন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে। টেকনাফ থেকে সারা দেশে ইয়াবা পাচার হয়ে আসছে। গত বছরের মে মাস থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের এ প্রক্রিয়াকে সফল করতে গত এক মাস ধরে মাঠে কাজ করছেন পুলিশ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বিশেষ একটি দল। ইতিমধ্যে অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পুলিশের এই বিশেষ দলের হেফাজতে চলে এসেছে বলেও জানা গেছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন আরো জানিয়েছেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করতে চাইলে তাদের শর্ত সাপেক্ষে সে সুযোগ দেয়া হবে। আরো জানা গেছে, এই সুযোগ নিতে দেশের ভেতরে আত্মগোপনে থাকা অথবা দেশের বাইরে পালিয়ে থাকা ইয়াবাকারবারীরা দেশে আসতে শুরু করেছে। এখন সচেতন মহলের প্রশ্ন ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করবে ঠিক আছে। তবে তাদের অবৈধ সম্পদের কি হবে? তারা আবারো সেই অবৈধ পথে গিয়ে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করবে কি না?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।