বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দুনিয়ার আলোচনা বিশজুড়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়াল লিগ বা আইপিএল এর পরই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের খ্যাতি জুটেছে আমাদের দেশের বিপিএলের। আর এই টুর্নামেন্টের ৬ষ্ট আসরের ২য় পর্ব চলছে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। স্বাভাবিকভাবেই সিলেটে এটি আলোচনায় থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ভিন্নচিত্র।
সিলেট জুড়ে আলোচনায় এখন তিন চৌধুরী। তাদের নিয়েই এখন ঝড় উঠছে সিলেটের চায়ের কাপে। এই তিন চৌধুরীর মধ্যে একজন বিএনপি থেকে ডিগবাজি দিয়ে ইতোমধ্যে নীড় ঘরেছেন আওয়ামী লীগের ঘরে। তিনি হচ্ছেন ইনাম আহমদ চৌধুরী। তিনি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। বিগত জাতীয় নির্বাচনের ঠিক পূর্বমূহুর্তে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগে। দেশজুড়ে তৈরি হয় তুমুল আলোচনার। এর আগে তিনি বিএনপি নেতা থাকাবস্থায়ই সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে গিয়ে তার বাসভবন ধোপাদিঘীরপাড়ে দেখা করেন। তখন তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। পরে নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে মনোনয়ন দেয়া হলে ক্ষোভে অপমানে তিনি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
বর্তমানে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যখন সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত আখ্যায়িত করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক এমন সময় আলোচনায় চলে এসেছেন বিএনপির আরোও দুই হেভিওয়েট নেতা। এরা হচ্ছেন সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তারাও ইনাম আহমদ চৌধুরীর মতো হাফিজ কমপ্লেক্সে গিয়ে ড. মোমেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এনিয়ে বিব্রতবোধ করছে সিলেট বিএনপি। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক যখন বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে ঠিক এমন মুহুর্তে বিএনপির এই দুই কেন্দ্রীয় নেতার এমন শুভেচ্ছা বিনিময়কে কোনভাবেই ভালচোখে দেখছেন না দলটির নেতাকর্মীরা।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। গত ২৮ নভেম্বর তিনি মনোনয়নপত্রও জমা দেন। মনোনয়নপত্র জমাদানের পরদিন সকালে তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে দেখা করতে যান। অর্থমন্ত্রী ও তার ভাই সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সাথে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করে ফিরেন সেখান থেকে। এই সাক্ষাতকে সেসময় সৌজন্য সাক্ষাত হিসেবেই দাবি করেছিলেন ইনাম চৌধুরী। এ নিয়ে তিনি বিতর্কের অবসান ঘটাতে নগরীর জিন্দাবাজারে একটি প্রেসকনফারেন্সও করেন।
দীর্ঘ দিনের পারিবারিক সম্পর্ক থেকেই তিনি সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন বলে ওই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন ইনাম। ইনাম চৌধুরীর এমন আচরণ হতবাক করে দলটির নেতাকর্মীকে। শেষ অবধি তিনি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। ১৯ ডিসেম্বর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ২১ ডিসেম্বর তিনি সিলেট ফিরে হাফিজ কমপ্লেক্সে সভা করে ড. মোমেনের স্বপক্ষে নামেন প্রচারণায়।
ইনাম আহমদ চৌধুরীর সৌজন্য সাক্ষাত ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান ঘিরে রাজনৈতিক আলোচনায় যোগ হয় নতুনমাত্রা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে সেই আলোচনায় বিদেশ বিভূইয়েও ছড়িয়ে পড়ে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে নবগঠিত মন্ত্রীসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সাথে গত নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী শফি আহমেদ চৌধুরী এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ঘটনা। তারা দু’জনেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় মেয়র আরিফ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী ও সচিবসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে ধোপাদিঘীরপাড়ে বাসায় গিয়ে ড. মোমেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। মেয়রের দৈনন্দিন সকল কর্মকান্ডের সংবাদ গণমাধ্যমে পাঠানো হলেও মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ঘটনাটি দিনভর চাপা রাখা হয়। রাতে ঘটনাটি জানাজানি হলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এদিকে, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় মোমেনের বাসায় যান সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী। তিনিও অনেকটা গোপনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ড. মোমেনকে। কিন্তু সেই গোপন শুভেচ্ছার খবরটি শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ছবিটি প্রকাশ পাওয়ার পর ভাইরাল হয়ে যায় সেটি। দলীয় নেতাকর্মীরা নেতিবাচক মন্তব্য জুড়ে দিয়ে আরিফ ও শফি চৌধুরীর ছবি শেয়ার করছেন।
শফি আহমেদ চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী কী শেষ পর্যন্ত ইনাম আহমদ চৌধুরীর পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন- এমন প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন অনেকে। তবে শফি ও আরিফ দু’জনেই এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ¯্রফে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্যই তারা হাফিজ কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকেই রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন। যা অপ্রত্যাশীত।
অন্যদিকে শফি চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী সরাসরি গিয়ে ড. মোমেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টিকে দলীয় নেতাকর্মীরা সুন্দরভাবে নিচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। তিনি বলেন, ‘একটি নিষ্ঠুর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কোন সাংসদ বা মন্ত্রীকে বিএনপি নেতারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করবেন- এমন দৃশ্য সিলেটের নেতাকর্মীরা দেখতে চাননি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।