Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইসিতে জোর প্রস্তুতি মার্চে উপজেলা নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

সারাদেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঁচ ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে কমিশন। এ জন্য আগামী ফেব্রæয়ারি মাসে প্রথম সপ্তাহে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দিবে ইসি। এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছেন কমিশন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন মার্চ মাসে। নির্বাচনে নিজেদের দক্ষতা দেখাতে প্রস্তুতি দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এককভাবে নির্বাচনের থাকার ঘোষনা দিয়েছে জাতীয় পার্টিও। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক ভাবে পরাজয়ে কারনে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে কি না তা এখনো ভাসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। যদিও শেষ মুহূর্তে তাদের মত পাল্টাবে বলে মনে করছেন রাজনীতিবীদরা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সারা দেশে নির্বাচনের ডামাডোল মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যদিকে ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার সিনেট ভবনে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রতীকে হবে উপজেলা নির্বাচন। ফলে এবার ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে আছে বাড়তি আগ্রহ। তবে জাতীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় নবনির্বাচিত এমপিদের কাছাকাছি ভিড়তে শুরু করেছেন সরকার দলীয় প্রার্থীরা। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিতরা চাচ্ছেন উপজেলায় প্রার্থী হতে। পুরনো প্রার্থীদের সঙ্গে এবার চারদিকে নতুন মুখের ছড়াছড়ি সরকারি দলে।
গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবার উপজেলা নির্বাচনেও মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে জরিপকেই গুরুত্ব দেবে আওয়ামী লীগ। জরিপে একটি প্রশ্নকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কত দিন? দলের রাজনীতিতে ১২ বছর সরাসরি যুক্ত না থাকলে দলের মনোনয়ন নয়Ñএমন মনোভাব দলের সভাপতি শেখ হাসিনার। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার এমন তথ্য জানিয়েছেন।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, উপজেলা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উভয় নির্বাচন নিয়েই ইসি প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আগামী মাসে মাসে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে মার্চ মাস থেকে পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাচন আরও একধাপ বাড়তে পারে। সচিব বলেন, ‘ডিএনসিসির নির্বাচনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের কপি এখনো আমাদের হাতে পৌঁছেনি। রায়ের কপি পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে উপজেলা নির্বাচনের পাশাপাশি ডিএনসিসি নির্বাচনের প্রস্তুতি কমিশনের রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা গত বুধবার, আগামী মার্চ মাসে ডিএনসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। তিনি বলেন, আমরা তাড়াতাড়ি ডিএনসিসি নির্বাচন করে ফেলবো। মার্চে শুরু হওয়া উপজেলা পরিষদের মাঝেই এ নির্বাচন করা হবে। তবে এ বিষয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিইসি বলেন, ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল করা হবে। সেজন্য কমিশনের বসতে হবে।
পঞ্চমবারে মতো উপজলো পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। সে কারণে সদর উপজেলাগুলোতে ইলকেট্রনকি ভোটিং মেশিনে (ইভএিম) ভোটগ্রহণ করা হব। এ ক্ষেত্রে সদর উপজেলার সব কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। গত ১৪ জানুয়ারি ইসির ৪২তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদের ৬টি আসনের নির্বাচনের পর এই প্রথম উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে উপজলো পরিষদ নির্বাচন আইনত নির্দলীয় হলেও আইন সংশোধনের ফলে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রথম ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চে। তখন তিনটি উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় ভোটে অংশ নিয়েছিল। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম তিন পর্বে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীদের মধ্যে সংখ্যায় বিএনপি এগিয়ে ছিল। তবে পরের তিন পর্বে তাদের ছাড়িয়ে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা প্রার্থীরা। ১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে উপজেলা পরিষদ চালু হয়। প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে। একই সরকারের আমলে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় দফায় উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯১ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সংসদে পাস না হওয়ায় কারণে বাতিল হয়ে যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে পুনরায় উপজেলা পরিষদ বিল সংসদে পাস করে নির্বাচন চালু করা হয়। ২০০৯ সালে পুনরায় তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সারাদেশে একদিনে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে ২০১৪ সালে রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশনের আমলে ছয় ধাপে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৬ ছয় দিনে সারাদেশের প্রায় ৫০০ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। বর্তমানে দেশে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে।এবার পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে ৫ ধাপে।
আইন অনুযায়ী, কোনো উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পূর্তির আগের ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দশম সংসদ নির্বাচনের পরপরেই অনুষ্ঠিত হয়। এবারও ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরপরই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৪ সালরে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর ১৯ জানুয়ারি উপজলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন। একই বছরের ১৯ ফেব্রæয়ারি থেকে মে মাস র্পযন্ত মোট ছয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সীমানা জটিলতা নিয়ে ডিএনসিসি উপ-নির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা রিট গত ১৬ জানুয়ারি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি গোবিন্দচন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটকারীর আইনজীবীরা অনুপস্থিত থাকায় নির্বাচনে স্থগিতাদেশ ও রুল খারিজ করে দেন। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো আইনি কোনো বাধা রইলো না। এর আগে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ১৭ জানুয়ারি ডিএনসিসি উপ-নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্টের বেঞ্চ। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচনের আড়াই বছর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়র আনিসুর হত লন্ডনে মারা যান। পরে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ইসি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত বছরের ২৬ ফেব্রæয়ারি ডিএনসিসি নির্বাচনের কথা ছিল।
এদিকে আইনি বাধা কেটে যাওয়ায় কারণে আগামী মার্চেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমানকে চিফ রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়াও নির্বাচন পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য ১৫ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ডাকসু ও হল সংসদ গঠনতন্ত্রের ৮(ই) ধারা অনুযায়ী তাকে এই নিয়োগ প্রদান করেন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ