চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
পূর্বকথা ঃ বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী, দেশের বিশিষ্ঠ আলেমেদ্বীন, লেখক ও গবেষক, হযরতুল আল্লাম মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রাহ. ছিলেন হবিগঞ্জের অন্যতম কৃতিসন্তান। তিনি বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলাধীন ঘাটুয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত বংশে বিগত ১৩৫৯ বাংলার ৬ জ্যৈষ্ঠ, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯ টার সময় জন্মগ্রহণ করেন। অবশ্য তাঁর পূর্বপুরুষগণ সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার কলিরকাপন গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর পিতা হযরত মাওলানা আব্দুল হালিম সাহেব রাহ. ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার আলেমেদ্বীন ও বুযুর্গ ব্যক্তি। যিনি ইমামবাড়ী জামেয়ার প্রবীণ উস্তাদ হিসেবে আজীবন দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন এবং তাঁর সকল সন্তানগণকেই আলেমে দ্বীন হিসেবে গড়ে তোলে গিয়েছিলেন। সুযোগ্য পিতার সুযোগ্য সন্তান হিসেবে আল্লামা মুফতী শিব্বির আহমদ সাহেবও সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শ্রদ্ধা-ভালবাসায় আপ্লুত ছিলেন। মূলত ঃ এটা তাঁদের লিল্লাহিয়্যাত তথা দ্বীনের প্রতি একনিষ্ঠতার ফসল বটে।
শিক্ষাজীবন ঃ আল্লামা মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রাহ. স্বীয় গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-জামিয়া আরাবিয়া ইমামবাড়ি মাদ্রাসা, বাংলাদেশের উম্মুল মাদারিস বলে খ্যাত চট্রগ্রামের ‘দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী মাদ্রাসা)’ এবং পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করাচীর ‘দারুল উলূম ইসলামিয়া আশরাফাবাদ’ প্রভৃতি মাদ্রাসা ও বিশ্ববিখ্যাত অনেক উলামায়ে কেরামের নিকট থেকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা অর্জন করেন। তাঁর উস্তাদগণের ক’জন হলেন আল্লামা জা’ফর আহমদ উসমানী রাহ., হাফিজুল হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রাহ., মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রাহ., আল্লামা মিসবাহুজ্জামান কদুপুরী রাহ., আল্লামা রমিজ উদ্দিন শ্রীমতপুরী রাহ., আল্লামা আব্দুর রহমান শায়খে ধুলিয়া রাহ. এবং আল্লামা আব্দুল মো’মিন শায়খে ইমামবাড়ী দা.বা. প্রমূখ।
কর্মজীবন ও কৃতিত্ব ঃ আল্লামা মুফতী শিব্বির আহমদ মাহবুর রাহ. কর্মজীবনে দারুল উলূম-মৌলভীবাজার, ইমামবাড়ী মাদ্রাসা-নবীগঞ্জ, উমেদনগর টাইটেল মাদ্রাসা-হবিগঞ্জ, দেওভোগ মাদ্রাসা-নারায়নগঞ্জ, জামিয়া হুসাইনিয়া আরজাবাদ-ঢাকা এবং দারুল উলূম মিরপুর-০৬, ঢাকা সহ দেশের বহু দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইলমে ওয়াহী বিতরণে নিরলস প্রচেষ্ঠা চালিয়ে শত শত যোগ্য আলেম তৈরী করে গিয়েছেন। তিনি কয়েকবছর ঐতিহাসিক বানিয়াচঙ্গেও (জামিয়া মাদানিয়া আদমখানী/কালিকাপাড়া মাদ্রাসার শিক্ষাসচিব ও আদমখানী ডাক্তারবাড়ি মসজিদের ইমাম হিসেবে) দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। যদিও হযরতের কাছে অধম নিবন্ধকারের অধ্যয়নের সুযোগ হয়নি তবুও যেহেতু অধমের অনেক বন্ধু-বান্ধব হযরতের সরাসরি ছাত্র তাই এ অধমও হযরতকে উস্তাদের মতোই সম্মান করতো। এ অধম নিজের বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের মাধ্যমে হযরত মুফতীসাহেব রাহ. এর আধুনিক গবেষণালব্ধ আবিস্কার; বিশেষত তেল, মবিল, পেট্রোল ও গ্যাস ছাড়াই চলতে সক্ষম মোটর সাইকেল আবিস্কারের উপাখ্যান, তদীয় ইলমী যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, আমল-আখলাক ও আমানতদারীর উৎকর্ষতা এবং তাঁর তাকওয়া-পরহেজগারীর বিরল ঘটনাবলী শুনে মুগ্ধ হয়েছি বার বার। গবেষণামূলক ও সৃজনশীল মননের অধিকারী এ প্রাজ্ঞ আলেমেদ্বীন জীবনের শেষদিকে বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এর ‘তালীম ও তারবিয়্যাত’ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বৃহত্তর সিলেট ও ঢাকার বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসায় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পবিত্র কোরআন-হাদীস, ফেকাহ, তাফসীরসহ ইলমে দ্বীনের সকল বিয়য়ে সুদীর্ঘ ৪২ বছর পর্যন্ত খেদমত আঞ্জাম দিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
সাহিত্যচর্চা ও রচনাবলী ঃ লেখালেখির জগতেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারঙ্গম। তিনি আরবী, ফারসী, উর্দূ, হিন্দি, বাংলা ও ইংরেজী প্রভৃতি ভাষায় ছিলেন সমান পারদর্শী। তিনি আরবী, বাংলা ও উর্দূ প্রভৃতি ভাষায় অনেক মূল্যবান কিতাবাদি রচনা করে গিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আর্থিক দৈন্যতার কারণে তিনি সেগুলোর অধিকাংশই প্রকাশ করে যেতে পারেননি। কোন বিত্তশালী লোক কিংবা প্রকাশনা সংস্থাও এক্ষেত্রে কোন ধরণের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেনি। তাঁর লিখিত কিতাবগুলো হলো ঃ (১) শারহুল মাওয়াকিত ওয়াল মাওয়াযিন ওয়াল মাওয়াতিন-যা বেফাক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ও ইফতা ক্লাসের জন্য সিলেবাস হিসেবে স্বীকৃত (২) কাদিয়ানী ষড়যন্ত্র ও তৎপ্রসঙ্গ (৩) কাশকুল-৮ খন্ড (৪) দুরুসুল ফুনূন (৫) আল মুখতাছার আলাল মুখতাছার (৬) বিজ্ঞানময় কোরআন ও হাদীস (৭) তা’রীফুল মুসান্নিফীন (৮) বায়োকেমিক রেপাটরী নোটবুক (৯) ইসলামের দৃষ্টিতে কোপার্নিকাসের সৌরবিজ্ঞান (১০) দেওয়ারুল মুতানাবিব (১১) খুলাসাতুল হিসাব (১২) বুখারী শরীফ ১ম খন্ড (আংশিক) (১৩) মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড (আংশিক) (১৪) হিদায়া আওয়াল (১৫) জামউত তাফাসীর (১৬) প্রাথমিক ঈমান ও নামাজ শিক্ষা (১৭) ইলমুল লুগাত (১৮) তায়া’রিফুল ফুনূন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।