Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সড়কপথের গাছ রক্ষায় গুরুত্ব নেই

অভিনব পন্থায় গাছ কাটা হচ্ছে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য ক্লান্ত পথিকদের বিশ্রাম বঞ্চিত যশোরে বহু গাছ কাটার মামলা

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত পথিকরা গাছের ছায়ায় একদন্ড দাঁড়িয়ে কিংবা বসে বিশ্রাম নিয়ে থাকেন। বিভিন্ন সড়কে এই দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়তো। গ্রামীণ সড়ক কিংবা হাইওয়ে গাছ কমে যাওয়ায় পথিকরা সেই প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের বড়ই কষ্ট হচ্ছে। দফায় দফায় বিভিন্ন সড়কে গাছ কেটে নেয়ায় সড়কপথে গাছের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। শুধু সড়ক বিভাগের নয়, জেলা পরিষদের অনেক গাছ কাটা পড়েছে বৈধ ও অবৈধভাবে। কয়েক বছর আগেও সড়কে বড় বড় মেহগনি, শিশু, কড়াই, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন গাছ ছিল, যার একটা অংশ কেটে নেয়া হয়েছে।

এমনিতেই ফারাক্কা আর মিনি ফারাক্কার ধাক্কায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, শিল্প ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তার ওপর অনেকটা বাধাহীনভাবে বিভিন্ন সড়কের গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। অভিনব পন্থায় গাছ কাটা হচ্ছে। প্রথমে ডালপালা ছেটে ও পরে গাছের ছাল-বাকল তুলে নিয়ে একটু দুর্বল করে নিয়ে এক পর্যায়ে করাত বসিয়ে ট্রাক ভিড়িয়ে গাছ লোপাট করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বন বিভাগ এবং জেলা পরিষদের বিভিন্ন সড়কের মূল্যবান গাছ কেটে নেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-নড়াইল, যশোর-নওয়াপাড়া, খুলনা-সাতক্ষীরা, সাতক্ষীরা-নাভারণ, যশোর-মাগুরা ও ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়কে মাঝেমধ্যেই গাছ কাটা হচ্ছে। যা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মামলাও করে। তাতে কিন্তু গাছ কাটা বন্ধ হচ্ছে না। শুধু যশোর জেলা পরিষদ গাছ কাটা নিয়ে মামলা করেছে প্রায় দেড়শ’, জানালেন জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার এম এ মঞ্জু। তার কথা, বিভিন্ন সড়কে অভিনব পন্থায় গাছের ছাল কেটে বিষ প্রয়োগ করে মারা হচ্ছে। শুকিয়ে যাওয়া গাছ একপর্যায়ে কেটে নেওয়া হয়। এরকম ঘটনা অসংখ্য ঘটছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে, যশোরসহ বিভিন্নস্থানে গাছ কাটা নিয়ে মামলাও চলছে আদালতে বছরের পর বছর ধরে। প্রভাবশালী মহল মাঝেমধ্যেই জ্যান্ত গাছ মরা দেখিয়ে গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করেও অনেক সময় গাছ কেটে নিচ্ছে প্রকাশ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোর-বেনাপোল সড়ক এখনও অবিভাবকহীন। সড়কটি জেলা পরিষদের না সড়ক বিভাগের এই দ্বন্দ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। যার কারণে সড়কের গাছগুলোর কোন পরিচর্যা নেই। নতুন করে গাছ লাগানো হচ্ছে না। প্রায় ২শ’ বছরের মূল্যবান গাছ রাতের আধারে গাছকাটা বাহিনী গাছের ডালপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের মধ্যে আন্তর্জাতিক সড়ক হিসেবে বেনাপোল সড়কেই সবচেয়ে বেশী বড় বড় গাছ ছিল। বড় বড় গাছ ছিল ঝিনাইদহ-যশোর সড়কে। বহু বছর পুরানো গাছ দফায় দফায় কেটে নেয়া হয়েছে।
সড়ক পথের গাছ ছাড়াও যশোরের ঐতিহ্য খেজুর গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। ইটভাটার জালানী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে খেজুর গাছ। কয়লার বদলে কেন খেজুর গাছ-এ নিয়ে বহুবারই প্রশ্ন তোলা হয়েছে কিন্তু সংশ্লিষ্টরা প্রশ্নের জবাব দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি। যার কারণে খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

যশোরের বসুন্দিয়া, চেঙ্গুটিয়া, ফুলতলা, ঝিনাইদহের বারোবাজার, হাটগোপালপুর, গাড়াগঞ্জ, বারীনগর, কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরার কলারোয়া, তালা, চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা, জীবননগর ও মেহেরপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারের পাশে রাস্তার ধারে কাঠের ব্যবসা চলছে রমরমা। যার বেশীরভাগই অপরিণত গাছ কাটা হয়েছে বিভিন্নস্থান থেকে। আবার বড় বড় গাছের গুড়ি ও কাঠও আছে। কিভাবে কোথা থেকে গাছ কাটা হয়েছে তার কোন তদন্ত হয় না কখনো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ