পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গাছের নিচে কিংবা ভাঙা বেড়ার ঘরে বসে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের দৃশ্য এখন অতীত। শহর কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন আর দেখা মেলে না এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এখন তৈরি হয়েছে দৃষ্টি নন্দন একাডেমিক ভবন। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১০ বছরেই ১১ হাজার ১৫৬টি নতুন ভবন নির্মাণ করেছে সরকার। নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে আরও ১১ হাজার ৪৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনের কাজ। আর অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কোথাও শুরু হয়েছে নির্মাণ কাজ, কোথাও শুরুর অপেক্ষা।
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়া কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। শিক্ষার অগ্রগতিতে গত এক দশকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সরকারি ভাষ্য নয় বরং বিশ্বব্যাংক, ইউনেস্কো, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে অন্যদের জন্য উদাহরণ অভিহিত করে বলছে, শিক্ষায় প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শিক্ষার অন্যান্য সূচকের চেয়ে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নে। বরং গত ১০ বছরে নান্দনিক ভবন নির্মাণ, আধুনিক ক্লাসরুমসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোন নির্মাণে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন ভবন। অগ্রাধিকার পাচ্ছে পিছিয়ে থাকা ও অনগ্রসর অঞ্চলও। এসব ভবনে থাকছে পরিবেশ বান্ধব ও নান্দনিকতার ছোয়া। গত ১০ বছরে সারাদেশে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ১১ হাজার ১৫৬টি নতুন ভবন নির্মাণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আরও চলমান রয়েছে ১১ হাজার ৪৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কাজ।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৩ হাজার ৬১৯টি ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ১১ হাজার ১৫৬টি। আর চলমান রয়েছে ১১ হাজার ৪৫১টি ভবনের কাজ। এসব ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। একই সময়ে ৭ হাজার ৬৪১টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জরাজীর্ণ ভবন মেরামত ও সংস্কার করেছে অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দেশে ৫টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও ৩টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। ১০০টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নির্মাণ কাজ চলছে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৩৮৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হবে। ঢাকা শহরে ১১টি সরকারি স্কুল ও ৬টি সরকারি কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা, খুলনা ও সিলেটে ৭টি নতুন সরকারি স্কুল স্থাপন কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর সন্নিকটে ১০টি সরকারি স্কুল নির্মাণের বিষয়টি একনেমে অনুমোদিত হয়েছে এবং ভূমিক অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগী শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প একনেক অনুমোদন করেছে। এর সাথে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পও একনেকে অনুমোদন হয়েছে।
চলমান প্রকল্প: ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নান্দনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে বাকী রয়েছে সেগুলোতেও রয়েছে চলমনা। এর মধ্যে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা শশিনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সুনামগঞ্জ জেলার ডুংগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন কাম অডিটরিয়াম নির্মাণ। বরিশালের মুলাদি উপজেলাধীন নাজিরপুর ইউনাইটেড কলেজের একাডেমিক ভবন ও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস নির্মাণ। ছায়ানটের সংস্কৃত সমন্বিত সাধারণ শিক্ষাক্রম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ১টি বেসমেন্টসহ ৮তলা বিশিষ্ট ৩তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ। বরিশালের বাকেরগঞ্জ রোকন উদ্দিন সালেহিয়া ফাজিল মাদরাসার ৫তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা সদরে অবস্থিত ৭০টি সরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ উন্নয়ন প্রকল্প, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন, খুলনার পাইকগাছা কৃষি কলেজ স্থাপন ও উন্নয়ন, ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম এন্ড নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিএজএবিলিটি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, ঝিনাইদহ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন, ডিকে আইডয়াল সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমিক এন্ড কলেজ কালকিনি মাদারীপুর এর অবকাঠামো, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মালিগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ জেলার ৩টি বেসরকারি কলেজের অবকাঠামো, মাদারীপুরের সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অবকাঠামো, বিজিবি হেড কোয়ার্টারে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের অবকাঠামো, নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের উন্নয়ন, নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, নির্বাচিত মাদরাসা সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প। সরকারি কলেজ সমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের উন্নয়ন, সদর দপ্তর ও জেলা কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর শক্তিশালীকরণ, নির্বাচিত বেসরকারি মাদরাসাসমূহে একাডেমিক ভবন নির্মাণ, নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, এ্যানহ্যান্সমেন্ট দি লার্নিং এনভায়রনমেন্ট অব সিলেক্টেড মাদরাসা ইন বাংলাদেশ, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও রাজবাড়ী জেলার ৩টি বেসরকারি কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, খুলনা মিলিটারি কলেজিয়েট স্কুল উন্নয়ন প্রকল্প, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ২টি সরকারি ও ১টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, বাংলাদেশ ভূমিক জরিপ শিক্ষা উন্নয়ন এবং ৪৯টি বিদ্যমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আধুনিকিকরণ প্রকল্প চলমান রয়েছে।
একনেকে উপস্থাপনের অপেক্ষায়: যেসব প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ চলছে তার বাইরেও আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোন নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর মধ্যে- ৩৮৯টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্প, গোপালগঞ্জের শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয় ও ঢাকার সূত্রাপুরের শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের অবকাঠামো, নির্বাচিত ৯টি সরকারি কলেজ, ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প।
সাত ক্যাটাগরিতে ভবন নির্মাণ: অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ক্রমবর্ধমান জন চাহিদা এবং জনসংখ্যার সাথে তাল মিলানোর জন্য প্রকল্পের তালিকাভূক্ত অবকাঠামো সমূহকে সাতটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় ২ হাজার ৪৫০টি বিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। ৯টি শ্রেণিকক্ষ, একটি পাঠাগার, একটি গার্লস কমনরুম, প্রধান শিক্ষক/সহকারী শিক্ষকদের কক্ষ, টয়লেট ব্লক, সিঁড়ি, পানি সরবরাহ, স্যানিটারির কাজ এবং অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কাজসহ ৪তলা ভিত বিশিষ্ট ৪তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০০টি বিদ্যালয়কে উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এনে একই সুবিধার ১৫ শ্রেণিকক্ষ বিশিষ্ট ৬তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ। তৃতীয় ক্যাটাগরিতে পাহাড়ি এলাকার জন্য পাহাড় সুরক্ষাসহ ৫০টি প্রতিষ্ঠানে ৪তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ। চতুর্থ ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে উচু প্লিন্থ এরিয়ার উপরে নিচতলা ফাঁকা রেখে ১৫০টি প্রতিষ্ঠানে ৫তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ। পঞ্চম ক্যাটাগরিতে প্রাকৃতিক অবস্থার কারণে হাওড়/বিল/নদী বিধৌত এলাকায় নিচতলা ফাঁকা রেখে ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫তলা বিশিষ্ট ভবন স্থাপন। ষষ্ঠ ক্যাটাগরিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত এলাকার জন্য ভিন্ন ডিজাইনের অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এজন্য এসব এলাকার ১৭৫টি ৪তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। শেষ ক্যাটাগরিতে নদী ভাঙন এলাকায় ২৫টি প্রতিষ্ঠানে অপসারণযোগ্য আধা-পাকা স্থাপনা (ট্রাস-টিন) নির্মাণ করা হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ হানযালা বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের উপযোগী আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ, সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এছাড়াও টেন্ডার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এখন জেলা থেকে বিভিন্ন কাজের টেন্ডার দেয়া হয়। ফলে শিক্ষা ভবনে আগের মতো টেন্ডার নিয়ে মারামারি, কাড়াকাড়ি হয়না। মধ্যসত্ত্ব ভোগীরা আর নাই। এই কাজকে এমপি, মন্ত্রীরা ভালো বলছে। পেনশন, গ্রাচুইটি, টেন্ডার সবকিছুই এখন অনলাইনের মাধ্যমে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দুর্ভোগ কমছে। মধ্যসত্ত¡ভোগীদের/স্বচ্ছতা থাকছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এগুলো করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্থাপনায় নান্দনিকতা নিয়ে আসা হয়েছে। এখন ভবনগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব। ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা। আধুনিক পয়নিষ্কাশন, প্রতিবন্ধীদের জন্য র্যাম্পের ব্যবস্থা থাকছে। ছাদগুলো করা হচ্ছে ঢালু ও টাইলস দিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।