চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাহবুবুর রহমান নোমানি
ক্রোধ বা রাগ মানুষের আত্মিক একটি ব্যাধি। অনেকে সামান্য কিছুতেই রেগে যায়। এই রাগ তার শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতি, তেমনি তা অনেক পাপের পথ খুলে দেয়। ক্রোধ অগ্নিস্ফুলিঙ্গসদৃশ, যা ঝগড়া-বিবাদের সূত্রপাত ঘটায়। এটা মানব মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বেলে দেয়, যা অনেক সময় খুনখারাবি পর্যন্ত নিয়ে যায়। রাগান্বিত হয়ে মানুষ অন্যের প্রতি জুলুম করে, বাড়াবাড়ি করে, গালাগালি করে। অনেকে রাগে বেসামাল হয়ে প্রিয়তমা স্ত্রীকে পর্যন্ত তালাক দিয়ে বসে। ফলে ভেঙে যায় তার সাজানো-গোছানো সুখের সংসার। যা সারা জীবন তাকে কাঁদায়। মানুষের প্রতি হিংসা, গিবত ও সমালোচনার পেছনেও এই রাগের ভূমিকা প্রবল। সুতরাং রাগ দমনের অভ্যাস গড়া অতি জরুরি। এটি জীবনের বড় প্রাপ্তি ও সফলতা। বুজুর্গানে দ্বীন আধ্যাত্মিক সাধনার ক্ষেত্রে ক্রোধ দমনের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সেজন্য বিভিন্ন আমল ও মুজাহাদার সবক প্রদান করেন। তারা বলেন, আত্মিক ব্যাধিসমূহের মধ্যে ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সবচেয়ে বড় কামিয়াবি। জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে আবেদন করেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অল্প কথায় নছিহত করুন। নবীজি (সা.) তাকে বললেন, রাগ করো না। লোকটা কয়েকবার বলল, আরও একটু নসিহত করুন। নবীজি (সা.) প্রত্যেকবার বললেন, রাগ বর্জন কর।’ (সহিহ বোখারি) রাগ বর্জন কতটা অপরিহার্য তা সহজেই অনুমিত হয় উক্ত হাদিস থেকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা রাগ হজমকারীদের প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নেককার লোকদের একটা বড় গুণ হলো তারা ক্রোধ হজম করতে জানে এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়।’ (আলে ইমরান : ১৩৪) ক্রোধ দমনের ফজিলত বর্ণনা করে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘ক্রোধ প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি ক্রোধ সংবরণ করল, কেয়ামত দিবসে আল্লাহতায়ালা তাকে সমস্ত মাখলুকের সামনে আহ্বান করে যে কোনো হুর সে কামনা করবে তা গ্রহণ করার অধিকার দান করবেন।’ (আবু দাউদ) অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘কোনো বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাগের যে ঢোক গলাধঃকরণ করে, আল্লাহর দৃষ্টিতে তার চেয়ে উত্তম আর কোনো ঢোক কেউ গলাধঃকরণ করে না।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬১১৪)
রাগ দমনের পন্থা
১. হজরত আবজর গিফারি (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কারো যখন রাগ আসে, তখন দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে পড়বে। তাতে রাগ চলে গেলে ভালো। অন্যথায় শুয়ে পড়বে।’ (আবু দাউদ : ৪৭৮২) রাগের গতি ঊর্ধ্বমুখী। রাগের সময় মানুষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তখন শোয়া থাকলে বসে পড়ে, আর বসে থাকলে দাঁড়িয়ে যায়। তাই রাগ দমনের জন্য তার গতি নি¤œমুখী করে দেবে।
২. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রাগ এসে থাকে শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান সৃষ্টি হয়েছে আগুন থেকে। আর আগুন নির্বাপিত হয় ঠা-া পানি দ্বারা। সুতরাং তোমাদের কারো রাগ আসলে সে যেন অজু করে নেয়।’ (আবু দাউদ : ৪৭৮৪)
৩. মোয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, ‘দুই ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর সামনে ঝগড়ায় অবতীর্ণ হলো। তাদের একজন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলে নবীজি (সা.) বললেন, আমি এমন একটি কালিমা জানি যা পাঠ করলে তার রাগ চলে যাবে। তা হলো, ‘আ-উজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম।’ (আবু দাউদ : ৪৭৮১) পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো উসকানি তোমাকে পায়, তাহলে তুমি ‘আ-উজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ পড়ে নিও। (সুরা হা-মীম সেজদা : ৩৬)
৪. মাটির দিকে তাকানো এবং রাগ বর্জনের ফজিলতের প্রতি চিন্তা করা। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হুজুর (সা.) বলেন, ‘তোমরা কি জানÑ সবচেয়ে বীর-বাহাদুর কে? লোকেরা বলল, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় অন্যকে ধরাশায়ী করে দেয়, সেই বাহাদুর।’ নবীজি (সা.) বললেনÑ ‘না, বরং প্রকৃত বাহাদুর ওই ব্যক্তি যে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’
তবে সব ক্ষেত্রে ক্রোধ বর্জন প্রশংসনীয় নয়। বরং কখনো কখনো ক্রোধের প্রয়োজন রয়েছে। যেমনÑ ছেলেমেয়ে বা অধীনস্থ কাউকে অন্যায় কাজ করতে দেখলে সংশোধনের নিমিত্তে রাগ প্রদর্শন ও শাসনের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। এমনিভাবে শরীয়তের কোনো হুকুম লঙ্ঘিত হতে দেখলে ক্রোধ প্রদর্শন জরুরি। বুজুর্গানে দ্বীনের জীবনীতে দেখা যায়, তারা কখনো নিজেদের ব্যক্তি বিষয়ে রাগ করতেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।