Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সুবর্ণচরে গণধর্ষণ, আরো ২ জন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সুবর্ণচরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে জসিম উদ্দিন ওরফে জইস্যা (৩৫) ও ডাবলমুরিং এলাকা থেকে হাসান আলী ভুলু (৬০) নামে ২জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গণধর্ষণের মামলায় এজাহারভুক্ত নয় আসামির মধ্যে পাঁচজন, গণধর্ষণের মূলহোতা চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য রুহুল আমিন ও জড়িত সন্দেহে জসিম উদ্দিনসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার দুপুর ১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নোয়াখালী সদর হাসপাতালে গণধর্ষণের শিকার নারীর সাথে দেখা করে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চরজব্বর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইব্রাহিম খলিল জানান, জসিমের অবস্থান জেনে চরজব্বর থানা পুলিশের একটি দল ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান শুরু করে। শুক্রবার ভোর রাতে চট্টগ্রামের নাজিরহাট এলাকা থেকে জসিম উদ্দিন ওরফে জইস্যাকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফাতর করে। জসিম উদ্দিন ওরফে জইস্যা এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি না। তবে তদন্তে তার নাম আসায় তাকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে নোয়াখালীতে নিয়ে আসা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। অন্যদিকে গতকাল দুপুর ১টায় চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং এলাকা থেকে এজাহারভুক্ত অন্যতম আসামি হাসান আলী ভুলুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চরজব্বর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জানান, শুক্রবার দুপুরে বাদশা আলম, রুহুল আমিন মেম্বার ও বেচুকে ৭দিন করে রিমান্ড চেয়ে নোয়াখালী বিচারিক আদালত-২এ হাজির করা হলে আদালত বাদশা আলমের শুনানি আগামী রোববার ধার্য্য করেন। বাকী দুজনের শুনানির দিন পরবর্তীতে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. ওমর ফারুক জানান, উপজেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের সাংগঠনিক বৈঠকের মাধ্যমে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
ধর্ষিতার পাশে বাসদ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ
শুক্রবার দুপুর ১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নোয়াখালী সদর হাসপাতালে গণধর্ষণের শিকার নারীর সাথে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরিদর্শন শেষে বাসদ নেতৃবন্দ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনায় জড়িত মূল ইন্ধনদাতাদের নাম মামলার এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করতে পুলিশের গড়িমসি করেছে। তার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ইন্ধনদাতাদের নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা, জড়িতদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবী জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় সদস্য শুভ্রাংশ চক্রবর্তী, বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিষ্ট লীগ পলিটব্যুরোর সদস্য অধ্যাপক আব্দুর সাত্তার, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষী চক্রবর্তী, বাসদ (মাহবুব) এর কেন্দ্রীয় নেতা মহিন উদ্দিন লিটন ও জোটভুক্ত জেলা নেতৃবৃন্দ।
সুবর্ণচরের আতঙ্ক রুহুল আমিন
সুবর্ণচর উপজেলায় এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযুক্ত রুহুল আমিন এক সময় হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন। পরে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন তিনি। ২০১১ সালে ৫ নম্বর চরজুবিলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর তিনি এলাকায় অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বনদস্যু ও জলদস্যুদের সংগঠিত করে নিজের নামে গড়ে তোলেন রুহুল আমিন বাহিনী। এরপর থেকেই সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলী ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদে রুহুল আমিন হয়ে ওঠেন এক আতঙ্কের নাম।
চরজুবিলীতে সরেজমিনে জানা গেছে, রামগতির চরাঞ্চলের লাঠিয়াল খুরশিদ আলমের ছেলে রুহুল আমিন। খুরশিদ আলমও ছিলেন হত্যা মামলার আসামি। ১৯৮০ সালে বেচু হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন তিনি। রুহুল আমিন ছোটবেলায় হারিছ চৌধুরী বাজারে রাহিন-মাহিন হোটেলে বয়-এর কাজ করতেন। কিছু দিন কাজ করার পর তিনি জেলা শহর মাইজদীর মোবারক মিয়ার বাসায় কাজ নেন। ওই বাসায় কাজ করার পাশাপশি নোয়াখালী ইউনিয়ন হাইস্কুলে পড়ালেখা করে এসএসসি পাস করেন তিনি। এরপর সুবর্ণচর উপজেলার পাংখার বাজারে সততা নামে একটি স্থানীয় এনজিওতে চাকরি নেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই এনজিওর ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে রুহুল আমিন ঢাকায় চলে যান এবং রাজধানীর কাওরান বাজারে পাইকারি সবজি দোকানে কাজ নেন। সেখান থেকেও বেশ মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে বরিশাল চলে যান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ওয়ার্ড সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ নম্বর চরজুবিলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তাকে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক করা হয়। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে রুহুল লাখ লাখ টাকা আয় করেছে। মাদক বিক্রির জন্য একটি চক্র রয়েছে। রুহুল আমিনের স্ত্রী শিরিন আক্তার তার স্বামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। এসব ষড়যন্ত্র। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। ওই গৃহবধূ এবং তার স্বজনদের অভিযোগ, গত ৩০ ডিসেম্বর রোববার নির্বাচনের দিন সেই নারী ধানের শীষে ভোট দিয়ে ফেরার পথে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন। এরপর রাতে রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ১০ জন মিলে ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে তার স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করেন। এছাড়া ওই দম্পতি এবং তাদের সন্তানদের পিটিয়ে জখম করেন তারা। এরপর সকালে সেই নারীকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেই নারীকে গণধর্ষণ ও পিটিয়ে জখম করার আলামত পাওয়ার কথা জানান। এ নিয়ে পরের দিন ৩১ ডিসেম্বর সেই নারীর স্বামী চরজব্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু গৃহবধূর স্বজনরা অভিযোগ করেন, এই বর্বরোচিত কান্ডে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই রুহুল আমিনকেই আসামি করা হয়নি। এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। সরকারের পক্ষে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও জানিয়ে দেন, গণধর্ষণের ঘটনায় কেউ রেহাই পাবে না। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ