Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারীর গৃহে অবস্থান পরাধীনতা নয়

মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ফাহাদ | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

এক

আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে নারী ও পুরুষ দুই ভাগে সৃষ্টি করেছেন। অতপর তাদের মাধ্যমে মানবজাতির বিস্তার ঘটিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তা থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়। (সূরা আ’রাফ (৭) : ১৮৯)
অন্যত্র ইরশাদ করেন, (তরজমা) হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দু’জন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু নর ও নারী । (সূরা নিসা (৪) : ১)। নিজ নিজ অবস্থা ও উপযোগিতা অনুসারে দুনিয়ার দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে ও আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে উভয়েই সমান অংশীদার। আর কিছু ব্যতিক্রম ছাড়াা সাধারণ প্রায় সকল দ্বীনী বিষয়ে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান। তাদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। যেমন-তাওহীদ, আকীদা-বিশ্বাস, আল্লাহ তাআলার প্রতি সমর্পণ, কৃতকর্মের প্রতিদান-পুরস্কার কিংবা শাস্তি, ছওয়াব ও ফাযাইল ইত্যাদি। তেমনিভাবে শরীয়তের সাধারণ দায়িত্ব ও অধিকারের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) আমি সৃষ্টি করেছি জীন ও মানুষকে। এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। (সূরা যারিয়াত : ৫৬)
পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎ কাজ করলে ও মুমিন হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তার প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হবে না। (সূরা নিসা (৪) : ১২৪)। মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল (১৬) : ৯৭)। যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তোমরা তা লালসা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তারই প্রাপ্য অংশ। (সূরা নিসা (৪) : ৩২)। তবে সৃষ্টির উদ্দেশ্য, দৈহিক ও মানসিক গঠন ইত্যাদি দিক থেকে আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষের মাঝে কিছু পার্থক্য রেখেছেন। পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন পূর্ণ শক্তি দিয়ে। নারীর সকল দায়িত্ব পালন, তার নিরাপত্তা বিধান, ভরণ-পোষণ ও বংশের সংরক্ষণ ও প্রতিপালন তার দায়িত্ব ও কর্তব্য। পুরুষের দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এজন্য যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহর হিফাজতে তারা হিফাজত করে। (সূরা নিসা (৪) : ৩৪)। নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপর পুরুষের মর্যাদা আছে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাকারা (২) : ২২৮)। বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে। (সূরা তালাক (৬৫ : ৭)

জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা। (সূরা বাকারা : ২৩৩)। পুরুষের এই দায়িত্ব-কর্তব্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হাদীস শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট স্ত্রীর প্রতি পুরুষের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যখন তুমি খাবে তখন তাকেও খাওয়াবে, যখন তুমি বস্ত্র পরিধান করবে তখন তাকেও পরিধান করাবে ...। (সুনানে নাসায়ী ৫/৩৭৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩০)। অন্য হাদীসে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, স্ত্রীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তারা তোমাদের নিকট আবদ্ধ। আল্লাহ তাআলার আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ, আল্লাহর কালিমা দ্বারা তোমরা তাদের লজ্জাস্থানকে বৈধ করেছ। আর তাদের জন্য তোমাদের উপর রয়েছে তাদের সঙ্গত ভরণ-পোষণ। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৭; জামে তিরমিযী, আবওয়াবুর রিযা’ হাদীস : ১১৬৩)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা বোঝা যায় যে, নারীর সকল গুরুভার পুরুষের কাধে। পুরুষের দায়িত্ব হল নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। আর এসবের যোগান দেওয়ার জন্য প্রয়োজন জীবিকা উপার্জনের। সুতরাং তাকে গ্রহণ করতে হবে চাকরি, ব্যবসা কিংবা অন্য কোনো পেশা। আর ঘরের কোণে বসে এ দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন ঘরের বাইরে বের হওয়া। এমনকি প্রয়োজনে দূর দূরান্ত সফর করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে যেন তোমরা সফলকাম হও। (সূরা জুমআ (৬২) : ১০)
অন্য আয়াতে বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশভ্রমণ করবে। (সূরা মুয্যাম্মিল (৭৩) : ২০)
সুতরাং বহিরাঙ্গনই হল পুরুষের প্রধান কর্মক্ষেত্র। বাইরে অবস্থান হল তার সাধারণ অবস্থা। ঘরে বসে থাকা পুরুষের জন্য শোভনীয় নয়।
পক্ষান্তরে নারীকে আল্লাহ বানিয়েছেন দুনিয়ার জান্নাত। তিনি স্বামীর জন্য প্রশান্তি, সন্তানের জন্য আশ্রয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সংগিনীদেরকে যেন তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া গৃষ্টি করেছেন। (সূরা রূম (৩০) : ২১)
(তরজমা) তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তা থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়। (সূরা আরাফ : ১৮৯)
নারী, সন্তান, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য আর চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৪)
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-দুনিয়া হচ্ছে ক্ষণিক উপভোগের বস্তু। আর এর সর্বোত্তম সম্পদ নেককার নারী। একমাত্র ইসলামই নারীকে বানিয়েছে সর্বোচ্চ সংরক্ষিত। পরপুরুষ তার দিকে মুখ তুলেও তাকাতে পারবে না। নারীদেরকে আল্লাহ আদেশ করেছেন তারা যেন নিজেদেরকে সংরক্ষিত রাখেন। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তারা যেন নিজেদের আভরণ প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যারা যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত অন্য কারো নিকট। তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর (২৪) : ৩১)
(হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর : ৩১)
বলাবাহুল্য যে, নারীর নিজের ও নিজের সৌন্দর্যকে পরপুরুষ থেকে আড়াল রাখার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হল গৃহে অবস্থান। কেননা গৃহের চার দেয়াল এবং পর পুরুষের সামনে না যাওয়া ও তাদের সঙ্গে উঠাবসা-চলাফেরা থেকে বিরত থাকাই নারীর জন্য বড় পর্দা। আর এজন্যই আল্লাহ তাআলা নারীকে আদেশ করেছেন গৃহের অভ্যন্তরে অবস্থানের। ইরশাদ করেছেন, আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। (সূরা আহযাব : ৩৩)। সুতরাং গৃহে অবস্থানই হল নারীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং এটিই তার প্রধান কর্মক্ষেত্র। তবে প্রয়োজনে সে বাইরে যেতে পারবে। কিন্তু বাইরে অবস্থান শুধু প্রয়োজনবশত ও প্রয়োজন পরিমাণ হতে হবে। আর এ সময়ও নিজেকে ও নিজের সৌন্দর্যকে রাখতে হবে পরপুরুষের দৃষ্টির আড়ালে।



 

Show all comments
  • BORHAN UDDIN AHMED ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:২৪ এএম says : 0
    WE ALWAYS FOLLOW THE RULES OF ALLAH'S IN AL- QURAN.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারীর গৃহে অবস্থান
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ