চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
এগার
এ প্রসঙ্গে রসূল স. বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।’’ “ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, অধ্যায়: আল-রযু, অনুবাদ: মা জাআ ফী কারাহিয়াতিল গাশশি ফিল-রুযূ, খ. পৃ. ৬০৬।”
অপহরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি জঘন্য অপরাধ। তাই ইসলামে অপহরণের শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। আর অপহরণের ক্ষেত্রে সাধারণত চুরি ও প্রতারণাই প্রধান কৌশল হিসেবে অনুসৃত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে যে কৌশলই অবলম্বন করা হোক না কেন, সার্বিকভাবে ইসলাম তা অবৈধ বলে সাব্যস্ত করেছে। কোন মানুষকে বিক্রি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এমন কি নিজের সন্তানকেও বিক্রি করার কারো অধিকার নেই। “ইমাম ইবনে হাযম, মারাতিবুল ইজমা, মিসর, মাতবাআতুল কুদস, ১৩৫৭, পৃ. ৮৪।” কেননা, মানুষ অতীব সম্মানীয়। আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি। “আল কুরআন, ১৭:৭০।”
প্রচলিত আইনের দন্ডবিধির ভাষ্যে বলা হয়েছে: যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে কোন স্থান হতে গমন করিবার জন্য জোরপূর্বলক বাধ্য করে বা কোন প্রতারণামূলক উপায়ে প্রলুব্ধ করে সেই ব্যক্তি উক্ত ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে বলিয়া গন্য হইবে। যদি কোন লোক উক্ত অপরাধে অপরাধী হয় তাহলে তার শাস্তির মেয়াদ সাত বছর কারাদন্ড এবং তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। “গাজী শামছুর, রহমান, দন্ডবিধির ভাষ্য, ধারা- ৩৬২ ও ৩৬৩।”
যে ব্যক্তি অভ্যাসগতভাবে দাস আমদানি, রপ্তানি, অপহরণ, ক্রয়-বিক্রয় করে বা দাসের কারবার করে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে বা যে কোন বর্ণনার অনুর্ধ দশ বছর মেয়াদী কারাদন্ডে তদুপরি অর্থে দন্ডিত হবে। “প্রাগুক্ত, ধারা-৩৭১।”
এ সম্পর্কে ২০০০ সালে জাতীয় গেজেটের ৮ নং আইনের ৭ ধারায় নারী ও শিশু অপহরণের শাস্তি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি ধারা-৫ এ উল্লিখিত কোন অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোন নারী বা শিশুকে অপহরণ করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে বা অন্যূন চৌদ্দ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবে এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবে। যদি কোন ব্যক্তি মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে কোন নারী বা শিশুকে আটক করেন, তা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন।
ওজনে কম দেয়া ঃ ওজনে কম দিয়ে সম্পদ উপার্জন করা ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং যারা এমন জঘন্যতম কাজে লিপ্ত থাকবে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আল-কুরআনে ঘোষণা করেন: ‘‘যারা ওজনে ও মাপে কম দেয়, তাদের জন্য সর্বনাশ। যারা মানুষের কাছ থেকে মেপে আনার সময় ঠিকমত আনে, আর মেপে দেয়ার সময় কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে মহাদিবসে? যে দিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ জগত সমূহের প্রতিপালকের সম্মুখে। কখনও না, পাপাচারীদের আমলনামা তো সিজ্জীনে আছে। সিজ্জীন সম্পর্কে তুমি কী জান? তা চিহ্নিত আমলনামা। সেই দিন দুর্ভোগ হবে অস্বীকারকারীদের, যারা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করে, কেবল প্রত্যেক পাপিষ্ঠ সীমালংঘনকারী এটি অস্বীকার করে।’’ “আল-কুরআন, ৮৩ : ১-১১।”
ইমাম সুদ্দী বলেন: রসূল স. যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করেন তখন সেখানে অনেক লোক দেখতে পেলেন যারা নিজের জিনিস মেপে নেয়ার সময় বেশি নিত এবং অপরকে দেয়ার সময় ওজনে কম দিত; তখন আল্লাহ্ এ আয়াত নাযিল করেন। “ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত: ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা, প্রাগুক্ত, খ. ৬, পৃ. ৫০৮, হাদীস নং-১১৬৫৪” রসূল স. বলেছেন: ‘‘পাঁচটি জিনিসের ফলে পাঁচটি জিনিস অনিবার্য। যে পাঁচটি বিষয় হলো: কোন জাতি প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তার ওপর তার শত্রæকে চাপিয়ে দেবেন। কোন জাতি আল্লাহর বিধান ছাড়া মনগড়া বিধান দ্বারা দেশ শাসন করলে তাদের মধ্যে দারিদ্র্য ছড়িয়ে পড়বে, কোন জাতিকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেলে তাদের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, মাপে ও ওজনে কম দিলে ফসল কম হবে ও দুর্ভিক্ষ হবে, আর যাকাত দেয়া বন্ধ করলে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাবে।’’ “ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত: -আত তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, প্রাগুক্ত, খ. ১১, পৃ. ৪৫, হাদীস নং-১১০১৪”। এখানে স্পষ্টভাবে লক্ষণীয় যে, মাপে কম দেয়া ব্যক্তি প্রকৃত পক্ষে তিল তিল করে অলক্ষে চুরি করে এবং হারাম উপার্জন করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।