পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের আভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানে দীর্ঘস্থায়ী মন্দা চলছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের চাকাও শ্লথ ও নানাবিধ সঙ্কটের মুখে পড়েছে। বৈদেশিক রেমিটেন্স আয় এবং কর্মসংস্থানে অবদানের ক্ষেত্রে দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রধান সেক্টর গার্মেন্টস শিল্পের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাত। এই দুই সেক্টরের মধ্যে কোনটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা নিরূপণ করাও এখন দূরূহ। এহেন বাস্তবতায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতের যে কোন সঙ্কট দেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক বেশী গুরুত্ব বহন করে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, গত বছর বৈদেশিক কর্মসংস্থানে প্রায় ১২ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও বছরশেষে সে সংখ্যা ৭ লাখ ৩৩ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মানে হচ্ছে, শ্রমশক্তি রফতানীমাত্রা লক্ষ্য অর্জনের সাড়ে ৪ লাখ বা প্রায় ৪০ শতাংশই পুরণ হয়নি। দেশের প্রবৃদ্ধির ও অর্থনীতির জন্য নির্ভরশীল এমন একটি খাতে প্রায় ৪০ শতাংশ ঘাটতি অনেক বড় উদ্বেগের বিষয়। ঘাটতি পুরণ করে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্য অর্জন এবং বাজার সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সমন্বিত বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
সউদি আরব, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার মত বন্ধুপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের যে বিশেষ সুবিধার কথা বিবেচিত হয়ে আসছে তাতে এত দীর্ঘ সময় ধরে অচলাবস্থা থাকা অস্বাভাবিক ব্যাপার। যেখানে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ১০ লক্ষাধিক শ্রমিকের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে, সেখানে প্রায় ২০ ভাগ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০১৮ সালে লক্ষ্যমাত্রা ১২ লাখ নির্ধারণ সঠিক ছিল। তবে লক্ষ্য পুরণে যে সব প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান রয়েছে তা দূর করে সে লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এ খাতে অভাবনীয় ধস নেমেছে। সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বৈদেশিক কর্মসংস্থানের এমন ধস নামার কোন সঙ্গত কারণ নেই। গত বছরের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের চালচিত্র বিশ্লেষণ করলে এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যে অর্জন তার প্রায় পুরোটাই বেসরকারী খাতের। সরকারী পর্যায়ে জিটুজি, জিটুজি-প্লাস ইত্যাদি পরিকল্পনায় গৃহিত উদ্যোগগুলো ব্যর্থ হওয়ার কারণেই বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে এমন ধস সৃষ্টি হয়েছে কিনা সংশ্লিষ্টদের তা বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারী মিশনগুলোর ব্যর্থতা এখানে সুস্পষ্ট।
সরকারের ধারাবাহিকতায় নতুন বছরে দেশে নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হতে চলেছে। দেশের আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মত অতিব গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সেক্টরের পুরনো সমস্যাগুলো দূর করতে নতুন ভাবে মূল্যায়ন ও উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যতই দিন যাচ্ছে বৈদেশিত কর্মসংস্থানের গতি যেন শ্লথ হয়ে আসছে। প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, নভেম্বর মাসে ৭০ হাজারের বেশী শ্রমিক বিদেশে গেলেও ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ৫০ হাজারের কম। আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতের সম্প্রসারণ ও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পেছনে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন বা বায়রার বিশেষ ভ‚মিকা রয়েছে। এ খাতের বিদ্যমান সংকট দূরীকরণে সরকারী-বেসরকারী সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই। অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরকে আরো কার্যকর ও গতিশীল পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নতুন মন্ত্রীসভায় একজন দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মস্থান মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দিতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা ও ব্যর্থতার আলোকে নতুন সরকারের নতুন মন্ত্রী ও দফতরকে পুরনো শ্রম বাজারের সমস্যা নিরসনের পাশাপাশি জাপান, কোরিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।