পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে বিনিয়োগে ভাটার টান থাকলেও বছর শেষে অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। মুদ্রাবাজারে টাকার প্রবাহও ছিল অনেক বেশি। তবে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় ছিলো কম। তবে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং আমদানির পরিমাণ বাড়লে রফতানির তেমন প্রবৃদ্ধি হয়নি। তারপরও ব্যাংকগুলো আগের বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে।
প্রতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর বার্ষিক হিসাবায়ন চূড়ান্ত করা হলেও এবছর ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নির্ধারণ হওয়ায় ব্যাংকগুলোর বার্ষিক হিসাব চূড়ান্তের সময় তিনদিন এগিয়ে ২৭ ডিসেম্বর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও নির্ধারিত সময়ে অধিকাংশ ব্যাংকই বার্ষিক হিসাবায়ন চূড়ান্ত করতে পারেনি।
চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০১৮ বছরে মুনাফা করেছে ২০৩ কোটি টাকা। যা গত বছর ছিল ১৭২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান তমাল এস এম পারভেজ বলেন, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, কমপ্লায়েন্স এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাতে অধিক গুরুত্ব দেওয়ায় পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকে সুশাসন ফিরিয়ে আনার একটি দৃঢ় সংকল্প ছিল। এটি কাজ দিয়েছে। ব্যাংকিং রীতিনীতি মেনে আমরা কর্মকান্ড পরিচালনা করেছি। ফলে একটা খারাপ পরিস্থিতিতেও আমরা দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পেরেছি।
চতুর্থ প্রজন্মের আরেক ব্যাংক সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের ২০১৮ সালে ২০৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, এর আগের বছরে এই ব্যাংকের মুনাফা ছিল ১৮২ কোটি টাকা। সে হিসেবে চলতি বছরে ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ২৩ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এসবিএসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের ব্যাংকের বিতরণ হওয়া ঋণের মান ভালো হওয়ায় মুনাফা বেশি হয়েছে। আমরা কৃষি ও শিল্পকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে গ্রাহক নির্বাচন করেছি।
গোলাম ফারুক বলেন, এসবিএসি ব্যাংক শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবধরনের নিয়মকানুন মেনে ব্যাংক পরিচালনা করে আসছে। সে জন্য ব্যাংকের সব সূচকে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মুনাফাকে প্রাধান্য দিয়ে নয় বরং গ্রাহক সেবাই আমাদের লক্ষ্য। একই সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের সফল নির্দেশনা এবং কর্মকর্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে দেখছেন মো. গোলাম ফারুক।
ফারমার্স ব্যাংক ছাড়া ভালো পরিচালন মুনাফা পেয়েছে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোও। মধুমতি ব্যাংক চলতি বছর ২০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ১৪৬ কোটি টাকা।
বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এবার হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৯০৬ কোটি টাকা।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৭৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩৫৮ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। ২০১৭ সালে ব্যাংকটি ৫৯৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছিল।
ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালন মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫৫ কোটি টাকায়। ২০১৭ ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৫৩৫ কোটি টাকা। প্রাইম ব্যাংক মুনাফা করেছে ৬১০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৪৫০ কোটি টাকা।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের মুনাফা ১৯২ কোটি থেকে বেড়ে ২২৫ কোটি টাকা হয়েছে। তবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ২২১ কোটি টাকা থেকে কমে ১২৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড পরিচালন মুনাফা করেছে ২৭৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিলো ২৫৫ কোটি টাকা। মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ২০১৮ সালে হয়েছে ৫১৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৪১৭ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৬৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৭১১ কোটি টাকা। এনআরবি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৯১ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ৮৫ কোটি টাকা। মেঘনা ব্যাংক মুনাফা করেছে ৯৩ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ১০২ কোটি টাকা। ইস্টার্ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭৮০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়া মুনাফা করেছে ৮১১ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬৭১ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে পূবালী ব্যাংকের মোট পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৯১৫ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, বছরব্যাপী ব্যাংকিং খাত নিয়ে নেতিবাচক প্রচার ছিল। তার পরও পূবালী ব্যাংক প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা পেয়েছে।
২০১৭ সালের তুলনায় চলতি বছর পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হয়েছে বেসিক ব্যাংকের। নানা সমস্যায় জর্জরিত ব্যাংকটি চলতি বছর বড় অংকের পরিচালন লোকসান গুনেছে। তবে খেলাপি ঋণ থেকে আদায় বাড়ায় ভালো করেছে হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ২০১৮ সালে মুনাফা করেছে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির এমডি মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, গত দুই বছরের সংগ্রামে সোনালী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা পেয়েছি।
অগ্রণী ব্যাংক করেছে ৯০০ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৭১৭ কোটি টাকা। ৩৪৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত¡ রূপালী ব্যাংক। রূপালী ব্যাংকের এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ২০১৭ সাল শেষে রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিল ৩৩টি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা লোকসানি শাখা আটটিতে নামিয়ে আনতে পেরেছি। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ১১৬ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে বিডিবিলের মুনাফা ছিল ১১৫ কোটি টাকা। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক পরিচালন মুনাফায় কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। যদিও জনতা ব্যাংকের এমডি মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, এননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির ধাক্কার পরও আমরা পিছিয়ে নেই। পরিচালন মুনফায় লাভই থাকবে জনতা ব্যাংকের। একই সঙ্গে মূলধন ঘাটতিও থাকবে না। তিনি বলেন, আমানতের সুদহার নিয়ে টানাহেঁচড়ার কারণে আমাদের প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। তবে এখনো ব্যাংকের হিসাবায়ন চূড়ান্ত হয়নি। মূলধন ঘাটতি থেকে বের হয়ে আসতে বন্ড ছাড়ার প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই ব্যাংকটি ঘুরে দাড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আব্দুছ ছালাম আজাদ।
বেসরকারি খাতের অন্যান্য ব্যাংকগুলোর হিসাবায়ন চূড়ান্ত না হওয়ায় তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন শীর্ষ নির্বাহীরা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভালো পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, যমুনা, ন্যাশনাল, ইউসিবি ও ব্র্যাক ব্যাংক।
যদিও পরিচালন মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই কোনো ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) এবং সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তাদের অনিরীক্ষিত পরিচালন মুনাফা প্রকাশ করতে পারে না। এ কারণে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্র থেকে পরিচালন মুনাফার এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।