Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগ্নেয়গিরির প্রাচীর ফেটে সমুদ্রগর্ভে ধসেই সুনামি, নিহত বেড়ে ২৮১

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:৪৬ পিএম

ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা প্রণালীতে শনিবার রাতের সুনামিতে ভয়াবহ সুনামিতে শেষ সংবাদ পাওয়া পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৮১ জন ও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৬ জন। ভূ-পদার্থবিদেরা সুনামির কারণ সম্মন্ধে নিশ্চিত হয়েছেন। তারা ব্যাখ্যা করেছেন, অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত লাভার চাপে হঠাৎ ফেটে যায় আগ্নেয়গিরির দেওয়াল। তার জেরে সমুদ্রের তলদেশে থাকা ভূস্তরের প্লেটে নামে বিপুল ধস। রিখটার স্কেলে ৭.৫ মাত্রার ভূকম্পের অনুরূপ শক্তি নির্গত হয়। সমুদ্রের নীচে বিস্তীর্ণ এলাকার পানির স্তরকে তা ঠেলে সরিয়ে দিতেই সমুদ্র উঠল ফুলেফেঁপে। প্রায় ২০ মিটার উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ে উপকূলে।

খড়্গপুর আইআইটি-র ভূ-পদার্থবিদ শঙ্কর কুমার নাথের বিশ্লেষণ, যে ভাবে সমুদ্রের পানি সেখানে ঠেলে উঠেছিল, তাতে সমুদ্রের তলদেশে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের সমান শক্তি নির্গত হয়েছিল বলেই মনে হচ্ছে। অর্থাৎ ভূ-পদার্থবিদেরা বলছেন, অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ টন টিএনটি (ট্রাই নাইট্রো টলুইন) বিস্ফোরক ফাটলে যে শক্তি নির্গত হয়, সেটাই তৈরি হয়েছিল ওই মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে।

এ বছর ৩০ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়াতেই সমুদ্রের নীচে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প থেকে তৈরি হয়েছিল সুনামি। সেই ভূমিকম্পেও একই পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়েছিল বলে মনে করছেন ভূ-পদার্থ বিদেরা। তবে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভোরে ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রের নীচে রিখটার স্কেলে ৯.১ ভূমিকম্পের জেরে যে সুনামি তৈরি হয়েছিল, তার তুলনায় এই সুনামি শিশু। ভূ-পদার্থবিদদের মতে, ২০০৪-এর ভূকম্পে সমুদ্রের তলদেশে একটি প্লেট আর একটি প্লেটের নীচে ঢুকে যাওয়ায় ৭০ লক্ষ টন টিএনটি বিস্ফোরণের শক্তি নির্গত হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সুনামি হতে পারে সমুদ্রের নীচে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি শক্তির ভূমিকম্প হলে বা আগ্নেয়গিরি ফেটে গিয়ে সমুদ্রতলের ভূস্তরে বিশাল ধস তৈরি হলে। অতিকায় উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়লেও সমুদ্রের নীচে ধস তৈরি হতে পারে।

সমুদ্রের নীচে প্লেট ধসে এতটা শক্তি বেরোলেও, কম্পন পরিমাপক যন্ত্র কিন্তু ওই কম্পনের কোনও মাত্রা জানায়নি। শঙ্কর নাথ জানান, এর কারণ ভূমিকম্পের সময়ে দুই ধরনের কম্পন হয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি কম্পন। দুই কম্পনের মধ্যবর্তী সময়ের বিচার করে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ধসের জন্য প্লেট বসে গেলে তা থেকে শুধু প্রাথমিক কম্পন তৈরি হয়, যেমন হয় মাটির তলায় পারমাণবিক বোমা ফাটালেও। তাই সেই কম্পনের শক্তি যন্ত্র পরিমাপ করতে পারে না। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিপদ এখনও যায়নি। ধস নেমে সমুদ্রের নীচের প্লেটের যে অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করবে। সেই সময় ফের সমুদ্রের নীচে প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হবে। কতটা শক্তি নির্গত হচ্ছে তার উপরেই নির্ভর করবে ফের সুনামি হতে পারে কি না। আগ্নেয়গিরিবহুল ও ভূকম্পপ্রবণ প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশটি ‘রিং অব ফায়ার’ বলে পরিচিত, সেখানেই ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান। ফলে সেখানে বারবার বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে থাকে। তবে আগ্নেয়গিরি থেকে এই ধরনের সুনামি আগে ঘটেনি বলেই জানাচ্ছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। সূত্র: এনবিসি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ