পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
*গতকালই বিনা বাধায় প্রচারণা করতে পেরেছেন কয়েক প্রার্থী
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে বিরোধীদের দমন-পীড়ন ও গ্রেফতারে পুলিশ অনেক সোচ্চার থাকলেও সেনাবাহিনী নামার আগের দিন গতকাল তাদের তৎপরতা ছিল অনেক কম। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের বিমাতাসুলভ আচরণে পুরোপুরি নাজেহাল ছিল দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। নেতাকর্মীদের ভাষ্য, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ নয়, খোদ পুলিশই যেন বিরোধীদের দমন-পীড়ন ও গ্রেফতারে মাঠে ‘বিরোধীদলের’ ভূমিকা পালন করেছে। তবে গতকাল রোববার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তাদেরকে আগের মতো ততোটা সোচ্চার দেখা যায়নি। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন, সেনাবাহিনী নামাকে কেন্দ্র করে পুলিশের আচরণে এমন পরিবর্তন হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। এর কারণে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর এতদিনে গতকালই বিনা বাধায় শান্তিপূর্ণভাবে কয়েকজন প্রার্থী প্রচারণা করতে সক্ষম হয়েছেন। গতকাল কয়েকজন প্রার্থী-সমর্থকদের সাথে কথা বলে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পুলিশের এই হঠাৎ নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনভাবেই প্রচারণার জন্য মাঠে নামতে পারেননি। কোন এলাকায় গেলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশও বিএনপির নির্বাচনী কাজে বাধা দেয়। তবে তফসিল ঘোষণার পর পট পরিবর্তন হলে বিএনপি শন্তিপূর্ণভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবে বলে আশাবাদী থাকলেও বাস্তবতা ছিল পরিপূর্ণ ভিন্ন। বিরোধী দলের প্রার্থী-সমর্থকরা প্রচারণ করতে মাঠে নামার সাথে সাথেই বেশিরভাগ এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এমনকি নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধীদের প্রতি পুলিশের গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার অভিযান ছিল চরম অস্বাভাবিক। এমনকি গত শনিবার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে বিরোধীদের প্রতি পুলিশের মামলা ও গ্রেফতার ও অস্বভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য, গতকালও নগরীর প্রতিটি এলাকায় পুলিশের ব্যপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বিরোধীদের প্রতি তাদের আচরণ আগের তুলনায় অনেক নিষ্ক্রিয় ছিল। যদিও এ সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত ছিল। রাজধানীর বাসীন্দারা মনে করছেন, সেনাবাহিনী মাঠে নামাকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিরোধীদের দমনে তাদের মনোভাব পরিবর্তনর করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর থেকে পুলিশ তাদের নামের সাথে আর কোন অভিযোগ বা কালিমা লাগাতে চাচ্ছে না। তারা বাহিনীর স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের মাধ্যমে নিজেদের আদর্শিকভাবে উপাস্থাপন করতে চাচ্ছে।
ঢাকা-৪ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, গত সপ্তাহে প্রচারণায় গেলে নামা শ্যামপুর এলাকায় পুলিশ প্রথমে বাধা দেয়। পরে মীর হাজারীবাগ এলাকায় পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার গাড়ি ভাংচুর করে ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর গতকালই তিনি প্রথমবারের মতো পুলিশি বাধা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে পেরেছেন। সকাল ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে হাজী খুরশেদ আলী রোড, বিড়ি ফ্যাক্টরি এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ ও প্রচারণা চালান।
যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় বিএনপি নেতা আলী রেজা বলেন, এতদিন বিএনপির যে কোন কর্মসূচিতে পুলিশ সাদা পোষাকে স্থানীয়দের সোর্সদের নিয়ে হাজির হয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতো। পরে ছবির ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালিয়ে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার করতো। এই নেতা বলেন, গতকাল সকাল থেকে যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও তাদেরকে আগের মতো বেপরোয়া দেখা যায়নি।
ওয়ারীর ধানের শীষ সমর্থক তসলিম উদ্দিন বলেন, পুলিশের আতঙ্কে বেশিরভাগ নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রেফতারের ভয়ে কেউ ফিরতে সাহস পাচ্ছে না। তবে গতকাল পুলিশকে কাউকে নাজেহাল করতে দেখা যায়নি।
হাজারীবাগের বিএনপির নারী সমর্থক উম্মে সালমা বলেন, আগে মাঠে নামলেই আ.লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশও প্রচারণায় বাধা দিত। তবে গতকাল তাদেরকে ততোটা সোচ্চার দেখা যায়নি। তেজগাঁওয়ের এক বিএনপি নেতা বলেন, তফসিলের পর থেকে প্রচারণায় নামলেই আ.লীগের সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশও বাধা দিত। যার কারণে যথাযথভাবে মাঠে নামতে ব্যার্থ হয়েছে বিরোধী প্রার্থী-সমর্থকরা। তবে আগের তুলনায় গতকাল পুলিশের সক্রিয়তা অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে।
বিএনপির অভিযোগ, গত ১০ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ২২৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় বিএনপির চার নেতাকর্মী হত্যাকাÐের শিকার হয়। একইসময়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে ১৯৫টি। এ সব মামলায় ১২ হাজার ৭৩০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
সংগঠনটির সিনিয়র নেতারা বলেন, রাজধানীতে খোদ সেপ্টম্বর মাসে ৫৭৮টি নাশকতার মামলা হয়েছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। কোন ঘটনার সাথে বিরোধীরা জড়িত না থাকলেও গায়েবি মামলায় তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ৯০টি। ১ হাজার ১৮৬টি ককটেল ও ৩৭০টি পেট্রোলবোমা উদ্ধারের অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। এছাড়া বিরোধীদের প্রতি অক্টোবরে ৭৬টি ও নভেম্বরে ৪৩টি নাশকতা মামলার তথ্য জানা গেছে।
হঠাৎ করে পুলিশের এমন নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বিএনপির কয়েকজন প্রার্থী বলেন, সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর থেকে তাদেরই সব থেকে বেশি সোচ্চার থাকার কথা। যার কারণে একদিন সেনাবাহিনী নামার একদিন আগে পুলিশ নতুন কোন ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছে না। যার কারণে এতদিন তারা বিরোধীদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করলেও গতকাল আগের তুলনায় অনেক নিস্ক্রিয় দেখা গেছে।
এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, পুলিশ একটি পেশাদার বাহিনী। তারা কোন ব্যক্তি কিংবা কারো পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করে না। সর্বদা পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করে। যাদের নামে থানায় মামলা রয়েছে এবং যারা ফৌজদারি মামলার আসামি তাদের বিরুদ্ধে আগেও অভিযান চলেছে। আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।