Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে উদ্বেগ-আতঙ্ক ততই বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটার ও জনমনে ততই আতঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে দেশব্যাপী যে সংঘাত-সংঘর্ষ হচ্ছে, তাতে ভোটারা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবেন কিনা, এ শঙ্কা কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, এ নিয়েও সচেতন শ্রেণি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় রয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, নির্বাচনের মাঠটি প্রায় একতরফা হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের সুস্পষ্ট আধিপত্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণও ক্ষমতাসীন দলের অনুকূলে। বিরোধী দলের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় নামলেই তাদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হামলা করছে। পুলিশ যে তার প্রতিকার করবে, তার কোনো নমুনা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশকে ক্ষমতাসীন দলের অনুকূলে এবং প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার ওসিকে প্রকাশ্যেই নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে দেখা গেছে। এর বিপরীতে বিরোধী দলের প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহতভাবে হামলা চলছে। পুলিশও দেদারছে তাদের গ্রেফতার করছে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, বিরোধী দলকে মেরেকেটে, হামলা-মামলা, গ্রেফতারের মাধ্যমে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে একতরফা একটি নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়াস চলছে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে এবং বৃদ্ধি পায়, তবে নির্বাচনের দিন এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দুঃখের বিষয়, নির্বাচনে সহিংস ঘটনা সবাই প্রত্যক্ষ করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেন তা দেখেও না দেখার ভান করছেন। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজমান, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে এবং সুবাতাস বইছে বলে তার বক্তব্যে তিনি অটল রয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নির্বাচনে যে ব্যাপক সংঘাত-সংঘর্ষ হচ্ছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের ওপর হামলা-মামলা, গ্রেফতার চলছে, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিকারে তিনি যদি অটল-অবিচল থাকতেন, তাহলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ অনেকটাই নিশ্চিত হতো। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আরেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম চলমান নির্বাচনী সহিংসতা প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতেই এ রকম আছে। আমরা রাজনীতি ছাড়াই মারামারি, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে অভ্যস্ত। আর যখন তফসিল ঘোষণা করা হয়, তখন আরেকটু গরম হয়ে যায়। আর উত্তাপ না থাকলে ভালো লাগে না। তার এ বক্তব্য যে সুবিবেচনাপ্রসূত ও দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন নয়, তা সচেতন মহলের বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। এ ধরনের বক্তব্য চলমান সংঘাত-সংঘর্ষকে যে আরও উস্কে দেবে, তাতে সন্দেহ নেই। তার বক্তব্যে এটা ধরে নেয়া যায়, নির্বাচনে সংঘাত-সংঘর্ষের যে অপসংস্কৃতি চলে আসছে, তা চিরকালই চলতে থাকবে। এর বিরুদ্ধে কোনো কিছু করার নেই এবং তা তার ভালো লাগে। একজন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য যদি এরকম হয়, তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে, এমন আশা কীভাবে করা যায়? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ভোটারদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কতটা, আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানে কি বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও প্রার্থীদের পিটিয়ে বা মামলা ও গ্রেফতার করে মাঠছাড়া করা? বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতোমধ্যে বিরোধী দলই শুধু নয়, নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু নেই। তাদেরও বলা লাগে না, একজন সাধারণ মানুষও তা দেখতে পাচ্ছে। ইতোমধ্যে অভিযোগটি বিরোধী দল থেকে যে তোলা হয়েছে, নির্বাচনে তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন- তাদের এ অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
বিগত কয়েক দিন থেকেই দেশি-বিদেশি সংস্থা ও নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। সর্বশেষ জাতিসংঘ ও যুক্তরাজ্য অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। এসব শঙ্কা প্রকাশ যে অমূলক নয়, তা নির্বাচনের বাস্তব পরিবেশ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। অথচ এ বাস্তব পরিস্থিতি উপেক্ষা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পুলিশ বাহিনীর প্রধান বলছেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে এবং নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ রয়েছে। আমরা মনে করি, তাদের কথা মতো একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন। সহিংস ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি যদি চলমান থাকে, তাহলে নির্বাচনের দিন তা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং পুরো নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন