২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
এইডস এমন একটি রোগ যা থেকে মুক্তির কোনও ঔষধ নেই, তবে সজাগতা এই মহামারি থেকে বাঁচার অন্যতম এবং সবচেয়ে সহজ হাতিয়ার।
HIV কী? HIVর পুরো নাম হচ্ছে Human Immuno deficioency virus । এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে এবং শরীরে বিদ্যমান ইমিউন সিস্টেমকে আক্রমণ করে নষ্ট করে দেয়। এইডস (AIDS)কী? এইডস (AIDS) মানে হচ্ছে Acquired Immuno deficioency Syndrome। এটা হচ্ছে একজন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমে গিয়ে একটা সময়ে শরীরে বিভিন্ন রোগের একটি অবস্থা। HIV এবং AIDS এর পার্থক্য কী? এইচআইভি হচ্ছে ভাইরাসটির নাম এবং এইডস হচ্ছে এই ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টিকারী একটি অবস্থা।
HIV সংক্রমনের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে-ঞ্ঝ জ্বর, ঞ্ঝঅবসাদ, হ ডায়ারিয়া, ঞ্ঝওজন কমে যাওয়া, হ মুখের ভিতরের ইনফেকশন, ঞ্ঝযৌনরোগ। এইসব অবস্থায় চিকিৎসা না-করাটাই হচ্ছে অসাবধানতা। এই অসাবধানতাই এসব রোগের মাধ্যমে আমাদের শরীরের ওসসঁহব ঝুংঃবস-কে নষ্ট করতে সাহায্য করে এবং ধীরে ধীরে তা মৃত্যু ডেকে আনে।
লক্ষণসমূহ ঃ হ রাতে ঘাম ঝরে ভিজে যাওয়া, হ জ্বরের আবৃত্ত, হ অত্যধিক ডায়ারিয়া, হ জিব ও মুখে সাদা সাদা ফ্যাকাশে ছোপ, হ অত্যধিক অবসাদ, হ অত্যধিক ওজন কমা এবং অবশ্যই অস্বাভাবিক চর্মরোগের বৃদ্ধি। HIV- এর সংক্রমণ কীভাবে হতে পারে? (অসুরক্ষিত যৌনসম্পর্ক করলে। (এইচআইভি সংক্রমিত রক্ত নিলে। (এইচআইভি জীবাণুরহিত সূঁচ/সিরিঞ্জ/ ব্লেড ব্যবহারে। পিতা-মাতা থেকে সন্তানের মধ্যে কীভাবে ছড়ায় না? এইচআইভি (+ve) ব্যক্তির সঙ্গে করমর্দন বা আলিঙ্গন করলে। এইচআইভি (+ve) ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে। এইচআইভি (+ve) ব্যক্তির সঙ্গে খাওয়া/দাওয়া বা একই টয়লেট ব্যবহার করলে। এইচআইভি (+ve) ব্যক্তির সঙ্গে একই পুকুর বা জলাশয়ে গোসল করলে। এইচআইভি (+ve) ব্যক্তির সঙ্গে একই ঘরে থাকলে। মশার কামড়ে।
আমাদের এ অঞ্চলে এইচআইভি পজিটিভ মানুষের সংখ্যা- সরকারি তথ্য মতে জনসংখ্যার অনুপাতে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেটে অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বহিদেশ বা জেলা থেকে আগত রোগীর সংখ্যা। তাছাড়া, বেকারত্বের জন্য এতদঞ্চলের যুবকরা বাইরে কর্মসংস্থানের খোঁজে গিয়ে সেখানেও আক্রান্ত হয়। NACO (National AIDS Control Organisation)--এর তথ্য বলছে, সমস্ত দেশে যেখানে এই রোগের প্রভাব কমছে সেখানে গত বছর বিশ্ব্ এইডস দিবসে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের দেশে কোন কোন জেলায় আজও এই রোগের প্রভাব কমেনি।
আমরা কীভাবে সুরক্ষিত থাকতে পারি? মহিলাদের ক্ষেত্রে এখানে কিছু কথা উল্লেখ করতে চাই যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে মহিলাদের শরীরে এই রোগের আক্রমণ পুরুষদের মাধ্যমেই হয়। যেমন, একজন পুরুষ যার এক বা একাধিক সংক্রমন হওয়া সঙ্গীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে তিনি জেনেশুনে বা অজান্তে একজন মহিলাকে বিয়ে করলেন। পরবর্তীতে কয়েক বছর পর দেখা গেল, গর্ভকালীন সময়ে রক্ত পরীক্ষাকালে ওই মহিলার শরীরে এইচআইভির জীবাণু রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে স্বামীও পজিটিভ রয়েছেন। অর্থাৎ অনিরাপদ যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে কখন তার শরীরে এইচআইভির জীবাণু প্রবেশ করেছে তিনি হয়তো জানেনই না। অথবা জানা সত্তে¡ও তিনি তার রোগ গোপন করে বিয়ে করেছেন। তাই একজন কাউন্সেলর হিসাবে আমি সব স্থানেই সজাগতামূলক অনুষ্ঠানে বলি, বিয়ের আগে যতই ধর্মীয় আচার-পদ্ধতি নেন কোনও আপত্তি নেই, তবে সেই সাথে অন্তত পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই রক্তের এইচআইভি পরীক্ষা করানো অবশ্যই উচিত। এমন ঘটনা শুধু মহিলাদের ক্ষেত্রে নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। তাই সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে বিনামূল্যে এই রক্তের পরীক্ষা করাতে পারেন।
রক্তদান জীবনদান-একথা আমরা সকলেই জানি। তবে সরকারি বিধিমতো রক্ত গ্রহণ না করলে তা থেকেও ছড়াতে পারে এইচআইভির জীবাণু। এখানে বলতে চাই যে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে যখন আমরা রক্ত নিতে যাই তখন তার বদলে এক বোতল রক্ত জমা রাখা বাধ্যতামূলক। কেবলমাত্র গর্ভবতী মায়েদের জন্য তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং ঊীপযধহমব ঋৎবব। বিপিএল কার্ডধারীদের জন্য সরকারি অর্থরাশি মওকুব হয়, বাকি সবক্ষেত্রেই ২৫০ টাকা (সরকারি হাসপাতালে) এবং ৫০০ টাকা (বেসরকারি হাসপাতালে) রোগীকে জমা দিতে হয় এবং এক বোতল রক্ত দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, সঠিক সচেতনতার অভাবে অনেকেই নিজের নিকটাত্মীয়কে ভয়ে রক্ত দিতে চান না। প্রয়োজনে ২০০০/৩০০০ টাকা খরচ করে অন্যান্য অপরিচিত ব্যক্তিকে ধরে নিজের পরিচিত পরিচয় দিয়ে রক্ত নিয়ে যান। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, এইচআইভি ভাইরাস ৬ মাস থেকে বছর কয়েক সময় পর্যন্ত Window period-এ থাকে যখন এই রোগ শরীরে থাকলেও সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে না এবং এই রক্ত যারই শরীরে যাবে তিনি অদূর ভবিষ্যতে এইচআইভি (+ve) হবেনই। এসব অজানা তথ্যের অভাবে আমরা প্রায়ই দেখি মানুষ অপরিচিত লোকের কাছ থেকে রক্ত নিয়ে থাকেন যার পরবর্তী পরিণাম দাঁড়ায় ভয়াবহ। তাই সবাইকে অনুরোধ, একমাত্র সুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকেই রক্ত নিন অথবা ব্লাড ব্যাংকে রক্ত জমা দিন। নইলে এ রক্ত জীবনদানের পরিবর্তে মরণ ডেকে আনবে।
যৌনরোগ, যৌন সম্পর্ক ও এইচআইভি থেকে বাঁচার উপায়- এই বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যৌন-সম্বন্ধীয় আলোচনা আমাদের সমাজে এক অবাস্তব কল্পনা বললেই চলে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে সরকারি তথ্য মতে, আমাদের দেশে এইচআইভি ৮৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায় যার অন্যতম কারণ হচ্ছে যৌনরোগ। সরকারি তথ্য মতে, আমাদের দেশে এইচআভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম। আবার বেশির ভাগ লোকই এর চিকিৎসা করাতে লজ্জা অনুভব করেন অথবা সামাজিক অসম্মানের ভয়ে বলা এবং চিকিৎসা উভয় থেকেই দূরে থাকেন। আর এই লজ্জাই পরবর্তীতে ডেকে আনে নানা সমস্যা যার অন্যতম হচ্ছে HIV/ AIDS।
বর্তমানে ভারত সরকারও এই রোগের চিকিৎসার মাহাত্ম্য বুঝতে পেরেছে এবং NACO এর অন্তর্গত STI/RTI রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সুরক্ষা ক্লিনিক নামে প্রত্যেক সরকারি জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে রয়েছে সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা । চিকিৎসা সঠিক সময়ে করতে পারলে দেখা যায়, যে ৮৭ শতাংশ রোগ যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায় তার ৪০ শতাংশ সংক্রমণই কমে যাবে যদি সকলে সঠিক সময়ে যৌনরোগের চিকিৎসা করান। কারণ, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে এইচআইভি জীবাণু যত তাড়াতাড়ি ছড়ায় তার প্রায় ১০ গুণ তাড়াতাড়ি একজন যৌনরোগীর শরীরে ছড়ায়। যৌনরোগ শরীরের রোগ অবরোধ ক্ষমতা আগেই নষ্ট করে ফেলে তাই এইচআইভি সহজে বিনা বাধায় প্রবেশ করে শরীরে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনরোগের লক্ষণসমূহ- হ যৌনাঙ্গে ঘা, জ্বলন, চুলকানি। হ যৌনাঙ্গে ঘায়ের মধ্যে ধাতুর সমস্যা। ঞ ধাতু নিঃসরণ বা ধাতুর সমস্যা। হ পায়ুদ্বার থেকে রস নিঃসরণ। হ সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি, সি, ই হ যৌনাঙ্গে স্কেবিস আক্রমণ হ কুঁচকিতে Lymph node ফোলা হ যৌনাঙ্গে উকুন ইত্যাদি।
মহিলাদের ক্ষেত্রে- হ সাদা স্রাব এর সমস্যা। হ যৌনাঙ্গে ঘা, জ্বলন হ অনাবশ্যক রক্তপাত হওয়া, হ তলপেটের অস্বাভাবিক ব্যথা। হ হারপিসজনিত রোগ, হ গর্ভপাত বারংবার হলেও যৌনরোগের সমস্যা থাকতে পারে, হ সিফিলিস, হ যৌনাঙ্গে স্কেবিস আক্রমণ, হ যৌনাঙ্গে উকুন ইত্যাদি।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো অত্যন্ত মারাত্মক রোগ ধারণ করতে পারে মানব শরীরে। এসব রোগের চিকিৎসার মূল সমস্যাই হচ্ছে সামাজিক ভয় এবং লজ্জা। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসা যদি আমাদের দেশ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ এইচআভি আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে তবে সে চিকিৎসায় লজ্জা কেন? সাদা স্রাবের চিকিৎসা মহিলাদেরে যেভাবে এইচআইভি থেকে সুরক্ষা দেয় তেমনি ক্যানসারের মতো জটিল সমস্যার কবল থেকেও বাঁচিয়ে রাখে। তাছাড়া, সিফিলিস নামক রোগ শরীরে থাকলে মহিলাদের বারবার গর্ভপাতও হতে পারে। কাজেই এই রোগের চিকিৎসা যেমন এইচআইভি সংক্রমন থেকে বাঁচাবে তেমনি গর্ভাশয়ে শিশু মৃত্যুর হারও কমাতে পারে। তাই লজ্জা নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসাই হচ্ছে বাঁচার একমাত্র উপায়। এইসব রোগের চিকিৎসা সরকারি মেডিকেল কলেজে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এমনকি, সরকার থেকে প্রায় অনেক ওষুধও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। তাই সবাইকে লজ্জা ছেড়ে এইচআইভির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার অনুরোধ জানাই।
এসব কারণ ছাড়াও আমাদের শরীরে এইচআইভি ছড়ায় যেসব কারণে তা হচ্ছে- থ সেলুনে একটি ব্লেড বারবার ব্যবহার। থ ট্যাটু বানানো। থ একই সিরিঞ্জ বা সুঁচ দিয়ে একাধিক ব্যক্তির ইঞ্জেকশন নেওয়া। থঅন্যান্য অজানা কিছু কারণ। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, আমরা যখনই সেলুনে দাড়ি কাটাতে যাই না-কেন, সবসময়ই যাতে নতুন ব্লেড ব্যবহার করা হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। কারণ এভাবেও আমাদের শরীরে ০.০৩ শতাংশ এইচআইভি ছড়াতে পারে। তাছাড়াও ট্যাটু বা শরীরে ছাপ বসানো যুব প্রজন্মের কাছে এক ফ্যাশন। তবে মনে রাখবেন, এসব করার সময়ে এক সুচের বারবার ব্যবহার আপনার শরীরে এইচআইভি ছাড়াও হেপাটাইটিস বি, সির মত ঘাতক রোগও ছড়াতে পারে।
সবশেষে সকলের কাছে অনুরোধ যে, এইচআইভি/এইডএস এর নাম শুনে আতঙ্কিত না হয়ে বরং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করান তবেই আমাদের সমাজ ও দেশ এইচআইভি মুক্ত হবে। ইংরেজিতে বলে রোগ হওয়ার পর কাঁদার চেয়ে লজ্জা ছেড়ে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন, এবং সুস্থ থাকুন।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।