বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
লজ্জা-শরম এবং সততা-পবিত্রতাও সেসব চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোরে ব্যাপারে কোরআন মাজীদ বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। এর বিপরীত হলো অশ্লীলতা ও চরিত্রহীনতা। (এর জন্য কোরআন মাজীদে ব্যাপক শব্দ ‘ফাহেশাহ’ ও ‘ফাহশা’ ব্যবহার করা হয়েছে।) এ থেকে বাঁচার জন্য কঠোরভাবে তাকিদ করেছে, বরং নিষিদ্ধ ও হারাম সংক্রান্ত বর্ণনার কয়েক স্থানে প্রথম নম্বরে এর উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন, সূরা নাহলের যে আয়াতটি সংক্ষিপ্ত হওয়া সত্তে¡ও কোরআন মাজীদের একটি ব্যাপক দিক-নির্দেশনা হিসাবে গণ্য (এবং সে কারণে জুমআহ প্রভৃতির খুতবার শেষাংশে সাধারণত যেটি পাঠ করা হয়) তাতেও ইরশাদ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ন্যায়বিচার ও দয়া-করুণা প্রভৃতি সচ্চরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ দেন এবং ‘বারণ করেন অশ্লীলতা, সাধারণ দুষ্ককর্ম ও অন্যায় বাড়াবাড়ি থেকে। আল্লাহতায়ালা তোমাদের এসব উপদেশ দান করেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।’ (সূরা নাহল: আয়াত ৯০)।
এমনিভাবে সূরা আরাফের যেখানে মৌলিক নিষিদ্ধ বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে, সেখানেও সর্বাগ্রে ‘ফাওয়াহিশ’ তথা অশ্লীলতাসমূহেরই নাম নেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে রাসূল, আপনি লোকদের বলে দিন, আমার পরওয়ারদিগার হারাম করে দিয়েছেন, যাবতীয় অশ্লীল বিষয়, সেগুলোর মধ্যে যা প্রকাশ্যে সংঘটিত হয় এবং যা গোপনে হয়। (অর্থাৎ, অশ্লীল বিষয় প্রকাশ্যেও হারাম এবং অন্তরালেও) আর এমনিভাবে আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার ও বাড়াবাড়িকে এ বিষয়টি যে, তোমরা তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে, যার কোনো প্রমাণ আল্লাহ নাজিল করেননি এবং এ কথা যে, তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলবে, যার ব্যাপারে তোমাদের (সঠিক সূত্রে) কোনো জ্ঞান থাকবে না।’ (সূরা আরাফ: আয়াত ৩৩)।
এ দু’টি আয়াতে এবং এছাড়া অন্যান্য যেসব আয়াতে অশ্লীল বিষয়সমূহ (ফাহশা, ফাহেশাহ বা ফাওয়াহিশ) নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আসলে এ নিষিদ্ধতা নেতিবাচক ভঙ্গিতে শ্লীলতা ও পবিত্রতারই নির্দেশ। এছাড়া কোরআন মাজীদে সেসমস্ত বিষয় থেকেও বারণ করেছে যা সরাসরি যদিও লজ্জাহীনতা নয়, কিন্তু তার দ্বারা অশ্লীলতা ও চারিত্রিক পঙ্কিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকতে পারে।
সেজন্যই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, নামাহরাম তথা বেগানা পুরুষ ও মহিলাদের সামনাসামনি পড়ে গেলে উভয়েই দৃষ্টি নামিয়ে ফেলবে। একে অন্যের দিকে তাকাবে না। সূরা নূরে ইরশাদ হয়েছে, হে রাসূল, আপনি ঈমানদার পুরুষদের হুকুম দিয়ে দিন, যাতে (বেগানা মহিলাদের সামনাসামনি হয়ে গেলে) তারা নিজেদের দৃষ্টি নিচু করে রাখে এবং যাতে তারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য বিশেষ পবিত্রতার বিষয়।
বস্তুত যা কিছু তারা করে এবং করবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। আর (এমনিভাবে) আপনি ঈমানদার মহিলাদের হুকুম দিয়ে দিন, যাতে তারা নিজেদের দৃষ্টি নামিয়ে রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা নূর: আয়াত ৩০-৩১)। স্বয়ং আয়াতের শব্দাবলী থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, দৃষ্টির ওপর এ নিয়ন্ত্রণ লজ্জা, সততা ও সতিত্বের হেফাজতের জন্যই আরোপ করা হয়েছে। বরং বলতে গেলে পর্দা সংক্রান্ত সমস্ত বিধিবিধানের যথার্থ প্রকৃতিই তাই।
সেসবই লজ্জা, পবিত্রতা ও সততার হেফাজতের জন্য বিধান করা হয়েছে। সূরা আহযাবের যেখানে হুকুম দেয়া হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা.-এর গৃহিণীদের কাছে কোনো কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। বলা হয়েছে, ‘ওয়া ইজা সাআলতুমুহুন্না মাতাআন আফআলুহুন্না মিও ওয়ারায়ি হিজাব।’ বর্ণনা পদ্ধতির দিক থেকে আয়াতটি যদিও নবী পতিœগণের সাথে সম্পৃক্ত; কিন্তু আয়াতের হুকুমটি সাধারণ মুসলিম মহিলাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তখন সেখানে তা এ তাৎপর্য ও কারণই বলা হয়েছে, ‘এ পন্থা তোমাদের এবং তাদের অন্তরকে অধিকতর পবিত্র রাখবে।’ (সূরা আহযাব: আয়াত ৫৩)। তাছাড়া এই সূরা আহযাবেই যেসব ঈমানী চরিত্র ও গুণাবলীর অধিকারী পুরুষ ও মহিলাকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটি গুণ পবিত্রতা ও সচ্চরিত্রতাও রয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী পুরুষগণ ও হেফাজতকারিণী মহিলাগণ আর প্রচুর পরিমাণে আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষগণ ও প্রচুর পরিমাণে জিকিরকারিণী মহিলাগণ- আল্লাহ তায়ালা তাদের সবার জন্য ফায়সালা করে রেখেছেন ক্ষমা এবং তৈরি করে রেখেছেন বিপুল প্রতিদানের ব্যবস্থা।’ (সূরা আহযাব: আয়াত ৩৫)।
এমনিভাবে সূরা মু’মিনূন ও সূরা মাআরিজে আল্লাহতায়ালার রহমত ও জান্নাতের অধিকারী ঈমানদারদের যেসব অনন্য বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে, তন্মেধ্যে তাদের পবিত্রতা ও সচ্চরিত্রতাও রয়েছে। উভয় স্থানে শব্দাবলী সম্পূর্ণ একই রকম।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সে সমস্ত বান্দা যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী।’ (সূরা মু’মিনূন: আয়াত ৫, সূরা মাআরিজ: আয়াত ২৯)। সুতরাং কোরআন মাজীদের শিক্ষা অনুযায়ী এবং শালীনতাও সেসব বিশেষ ঈমানী বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত, যার সাথে মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।