পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিয়ে জনপ্রত্যাশা ততই ফিকে হয়ে আসছে, যদিও এখনো বিরোধীদল ও সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীকেই শেষ ভরসা হিসেবে মানছেন। এমনকি সিইসিও বলেছেন, সেনাবাহিনী নামলে ভোটাররা নিরাপদ বোধ করবেন। এর মানে হচ্ছে, নির্বাচনের আর মাত্র ১০ দিন বাকি থাকলেও এখনো ভোটাররাও নিরাপদ বোধ করতে পারছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারনা কার্যক্রমের উপর প্রতিদিনই হামলা হচ্ছে। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা সামনে রেখে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিরোধী দলের প্রার্থীরা অনাকাঙ্খিত বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে নামতে গিয়ে সরকারী দলের প্রার্থীদের ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে লাঞ্ছনা ও চরম হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। মূলত: গত ৫ বছর ধরেই বিরোধিদলের গণতান্ত্রিক রাজনীতির কোন স্পেস নেই। নিরপেক্ষ বা নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বজনীন দাবী ক্ষমতাসীনরা প্রত্যাখ্যান করার পরও বিএনপিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে যেন সরকারীদল মেনে নিতে পারেনি। তা না হলে সংসদ ও দলীয় সরকার অব্যাহত রেখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও বিরোধিদলের প্রার্থীদের কেন কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না? তফসিল ঘোষনার পর প্রার্থীতা বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের পর সব দলের নির্বাচনী মাঠে অবাধে প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়ার কথা থাকলেও এখনো তা দেখা যাচ্ছে না। এহেন বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বদলে সিইসির একচোখা বক্তব্য ইসিকে জনগণের কাছে আরো আস্থাহীন করে তুলছে।
নির্বাচনে সব দল ও প্রার্থীদের সমান সুযোগ, নিরাপদে প্রচারনা চালানো ও সবার নির্ভয়ে ভোট দিতে পারার পরিবেশই হচ্ছে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’। একজন অতি সাধারণ মানুষও জানে দেশে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। আমাদের দেশীয় বাস্তবতায় দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরকারীদল ও বিরোধিদলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হলেও গ্রহণযোগ্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা অসম্ভব নয়। আমাদের নির্বাচন কমিশনের সে ধরনের আইনগত স্বাধীনতা ও ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সরিষার মধ্যে ভূত থাকলে তা দিয়ে ভূত তাড়ানো যায়না। যেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশ্লেষক এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশি-বিদেশি অংশীজনরা শুরু থেকে অদ্যাবধি নানা ঘটনা-নাশকতার দৃষ্টান্ত সামনে রেখে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে মত দিচ্ছেন। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব বক্তব্য ও অভিযোগ আমলে নিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণের বদলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক আছে বলে বার বার দাবী করছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও তাঁর এই বক্তব্য মানতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যকে অনেকটা অসত্য বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি। মাহবুব তালুকদারও সিইসির এধরনের মন্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যে নেই এটা এখন প্রায় সর্ব মহলে স্বীকৃত। গত মঙ্গলবার রাজধানীতে সেন্টার ফর গর্ভনেন্স আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা ও প্রশ্নবিদ্ধ ভ‚মিকার কারণে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। একই দিন টিআইবির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, বিরোধিদলের প্রার্থী ও সমর্থকদের উপর হামলা, মামলা ও পুলিশি হয়রানির ঘটনায় ইসির নিস্ক্রিয়তায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গায়েবী মামলায় বিএনপি’র শত শত নেতাকর্মীসহ প্রার্থীদের আটক করে জেলে ভরা হলেও ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচারনা চালাতে গিয়ে গাড়ী ভাঙ্গচুর, রক্তাক্ত হামলা ও গুলিবিদ্ধ হলেও নির্বাচন কমিশন না দেখা, না শোনার ভান করছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতমূলক ভ‚মিকা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় হলেও দলবাজ রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিতর্কিত ভ‚মিকার প্রতিকারে নির্বাচন কমিশনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে দেশের কিছু কিছু এলাকায় বিজিবি মোতায়েন হলেও নির্বাচনী পরিবেশে এটা কতটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পেরেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচনের আগে দেশের সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের কাছে নির্বাচনী মেনিফেস্টো, প্রার্থীদের পরিচিতি ও প্রতিশ্রæতি পৌঁছে দেয়া যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রচারনা চালানোর সংক্ষিপ্ত সময়ের অনেকটা ইতিমধ্যে পার হয়ে গেলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অনেক প্রার্থীই এখনো মাঠে নামতে পারছে না। অনেকেই জেলখানায়, আদালতে দৌঁড়াতে ব্যস্ত। গত মঙ্গলবারও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীরা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। অথচ সিইসি বলছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক আছে। মাঠের বাস্তবতায় সিইসির এই বক্তব্য সেরা কৌতুক বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। সেনাবাহিনী মাঠে নামলে ভোটাররা নিরাপদ বোধ করবেন বলে সিইসি যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা এখন সেখানেই নিবদ্ধ। অসমতল মাঠে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী কি জনগণের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারবে? সেনাবাহিনীর প্রতি দেশের মানুষের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। সেই আস্থার জায়গা থেকেই প্রত্যাশা করা যাচ্ছে, সেনা বাহিনী নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় যথোচিত ভ‚মিকা ও অবদান রাখতে পারবে। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, আরেকটি একপাক্ষিক নির্বাচনের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাব ও দায় বহনের ক্ষমতা সামগ্রিক অর্থে বাংলাদেশের নেই। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।