Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

গৃহ শিক্ষকের লালসায় খুন হলো স্কুলছাত্র

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:১১ এএম

*৬ মাস আগে ছাত্রের বাবার মোবাইল চুরি 

*অপরাধ বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে পরিকল্পনা
*ময়লার ঝুড়িতে পাওয়া নম্বরে আটক অপরাধী


স্টাফ রিপোর্টার
অসহায়কে সহায়তা করে অবশেষে নিজেই সন্তান হারালেন এক বাবা। তার বাসায় খেয়ে-পড়ে তারই স্কুলপড়–য়া ছেলে সাদমান ইকবাল রাকিনকে (১০) হত্যা করেছে গৃহশিক্ষকসহ দুই খুনি। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুরের ফাউগান এলাকায় এমনই একটি নির্মম ঘটনা ঘটেছে। হত্যার শিকার শিশুটি এ বছর ফাউগান প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা দেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারোয়ার-বিন-কাশেম।
তিনি বলেন, গত ৫ ডিসেম্বর বিকেলে শিশুটিকে অপহরণ করে তারই গৃহ শিক্ষক পারভেজ শিকদার (১৮) ও পারভেজের বন্ধু ফয়সাল আহমেদ (১৯)। ঘটনার ছয়দিন পর ১১ ডিসেম্বর দুপুরে বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাঁশঝাড় থেকে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনা শিশুটির বাবা সৈয়দ শামীম ইকবাল শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করলে র‌্যাব ঘটনার তদন্তে নামে। গত সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর ও জয়দেবপুর থেকে তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পারভেজ শ্রীপুরের ফাউগান এলাকার আলীম শিকদারের ছেলে। সে গত বছর ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে একটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে কৃষি ডিপ্লোমা পড়ছে। আর ফয়সাল একই এলাকার আব্দুল লতিফ মোল্লার ছেলে। সে ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র।
সরওয়ার বিন কাশেম বলেন, গত দু’বছর ধরে শিশু রাকিনকে প্রাইভেট পড়াতো পারভেজ। এর বিনিময়ে বেতন ছাড়াও পড়াশুনার খরচসহ বিভিন্নভাবে পারভেজকে আর্থিক সহায়তা করতেন রাকিনের বাবা। র‌্যাব জানায়, হঠাৎ করে পারভেজের মাথায় অল্প সময়ে বড় (ধনী) হওয়ার ভুত চাপে। তখন সে শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। র‌্যাব জানায়, ক্রাইম পেট্রোলসহ বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে উৎসাহী হয়ে হত্যার ছক কষে পারভেজ। পরবর্তীতে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু একই এলাকার ফয়সালের সাথে পরিকল্পনাটি শেয়ার করে। এই উদ্দেশ্যে প্রায় ৬ মাস আগে শিশুটির বাবার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন চুরি করে পারভেজ। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন পাখি দেখানোর কথা বলে শিশুটিকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে ৬ মাস আগে চুরি করা মোবাইল দিয়ে শিশুটির বাবাকে কল করে ফয়সাল। কিন্তু ফোনে টাকা না থাকায় বিপাকে পরে তারা। পরে একটি চিরকুটে চোরাই ফোনটির নম্বর লিখে স্থানীয় একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে ২০ টাকা রিচার্জ করে। এরপরে পুনরায় শিশুটির বাবাকে কল করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এমনকি ঘটনাটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে নিষেধ করা হয়, অন্যথায় ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অপহরণকারীরা তাদের পরিকল্পনা মতোই এগুচ্ছিলো। কিন্তু সন্ধ্যার পরে শিশুটি বাসায় ফিরতে জোড়াজুরি শুরু করে। এ সময় তারা শিশুটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে ঘটনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তখন ফয়সাল প্রথমে শিশুটিকে মাটিতে ফেলে গলা টিপে ধরে। পরে পারভেজ ও ফয়সাল দু’জনে শিশুটির শরীরের উপরে উঠে একত্রে গলা টিপে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তখন তারা লাশ বাঁশঝাড়ের ভেতরে ফেলে সটকে পড়ে। র‌্যাবের কর্মকর্তা বলেন, কোন ক্লু না থাকায় কোনভাবে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে ঘটনাস্থলে পাওয়া একটি সিগারেটের প্যাকেট ও স্থানীয় একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকানের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু দোকানের ফ্লেক্সিলোডের খাতায় চুরি হওয়া নম্বরটি না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন র‌্যাবের তদন্ত দল। পরে দোকানের ভেতরের ময়লার ঝুড়িতে একটি চিরকুটে ওই নম্বরটি হাতে লেখা অবস্থায় পাওয়া যায়।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, নম্বরের পাশপাশি হত্যাকাÐের স্থান থেকে পাওয়া সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে আবারও তদন্ত শুরু হয়। কে স্টার সিগারেট খায় এবং চিরকুটের হাতের লেখাটি কার এ দুটি বিষয় সামনে রেখে সাত/আটজন সন্দেহভাজনের একটি তালিকা করা হয়। এভাবে তালিকা নিয়ে গত রোববার রাতে সন্দেহভাজন প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে হাতের লেখা মেলানো হলে ফয়সালের হাতের লেখার সাথে চিরকুটের লেখা মিলে যায়। পরে তাকে আটক করলে সে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পারভেজের কথা বলে। পরে পার্শ্ববর্তী এলাকায় পারভেজের মামার বাড়িতে অভিযান চািলয়ে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তারা দু’জনে এলাকায় চুরিসহ বিভিন্ন ছোটখাট অপরাধে জড়িত ছিল। এছাড়া বিভিন্ন মাদকে আসক্ত ছিল। হত্যার সময়ও তারা মাদকাসক্ত ছিল বলেও র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান।
সংবাদ সম্মেলন নিহত শিশুর বাবা সৈয়দ শামীম ইকবাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি সবসময় পারভেজকে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছি। অথচ আমার বাসায় খেয়ে পড়ে সে আমার ছেলেকেই হত্যা করলো। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিসহ প্রত্যেক বাবা-মাকে সতর্ক হতে আহবান জানান। এ সময় তার শিশুটির মা’সহ অন্যান্য স্বজনরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

 



 

Show all comments
  • Hafiz Ussal ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০২ এএম says : 0
    খুবই মর্মান্তিক। আমাদের সমাজ কোন দিকে যাচ্ছে। হায় উপকারের...
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
    ভিন দেশি সংস্কৃতি আমদানির ফল আর কি। এখনই ভারতীয় চ্যনেলগুলো বাংলাদেশে বন্ধ করা উচিত। নয়তো আর কিছু বললাম না...
    Total Reply(0) Reply
  • Zulfiqar Ahmed ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    ধনী হওয়ার লালসা মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। যে পাতে এতদিন খেল সেই পাতেই শুধু পায়খানা করলো না, পেলেটের মালিককেও খুন করল।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির হোসেন মনির ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    একে বলে খাল কেটে কুমির আনা। এদের জন্যই মানুষ উপকার করতে ভয় পায়।
    Total Reply(0) Reply
  • এমদাদ হোসেন ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
    সন্তানহারা পরিবারটিকে সমবেদনা জানানো ভাষা নেই। আল্লাহ তাদের দৈয্য দার কর।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Yousuf ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:৩৪ এএম says : 0
    আহ খুব লাগল
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Rahman ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:০৬ পিএম says : 0
    stop Indian TV channel operating in Bangladesh. its could be wider impact in the future our society.
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:৫৭ পিএম says : 0
    All the crime is happening on a daily basis---it's the product of the Government---government have divorced Qur'an as a result people have forgotten what is the purpose of Life----Our life is like a fading shadow and journey towards infinity......The omnipotent The The Most Gracious created us to obey Him in every sphere in our life------
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজশাহী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ