পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : সউদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে তার দেশ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। ২০৩০ সালের ভিশন সামনে রেখে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে উল্লেখ করে তিনি জানান, সউদি আরব বিগত কয়েক দশকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর পরিবর্তন এনেছে। আল-জুবায়ের বলেন, ২০৩০ সালের ভিশন তার দেশকে অগ্রগতির আরো একটি নতুন ধারায় পরিচালিত করবে, যেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং একই সঙ্গে সরকার হবে আরো দক্ষ, আরো স্বচ্ছ এবং অধিকতর জবাবদিহিমূলক। একই সাথে তিনি একথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে তার দেশ কখনোই নিজস্ব সামাজিক বিধিনিষেধ সহজ করার প্রশ্নে বিদেশি চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। সউদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ৫০ বছরে সউদি আরব বিভিন্ন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জন করেছে তা এককথায় অবিশ্বাস্য। বিশ্বের খুব কম দেশই এতো কম সময়ের মধ্যে এতোটা অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে।
নরওয়েতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন যে সউদি আরবের মতো একটি দেশে, যেখানে বাক স্বাধীনতা এবং আরো অনেক নাগরিক স্বাধীনতা অনুপস্থিত, সেখানে ২০৩০ ভিশনের মতো এমন একটি ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনার বাস্তাবায়ন কিভাবে অর্জন করা সম্ভব হবে? জবাবে তিনি বলেন, যখন আপনি এমন একটি সমাজে বসবাস করছেন যে সমাজটা রক্ষণশীল এবং কিছু সুনির্দিষ্ট নৈতিকতায় যে সমাজ পরিচালিত সেখানে ওই সমাজের প্রতি আপনাকে শ্রদ্ধাশীল থাকতেই হবে। এক্ষেত্রে আপনারা যাকে সামাজিক বিধিনিষেধ বলছেন তা আসলে আমাদের সমাজের রীতিনীতিরই একটা অংশ।
সার্বভৌম স্বাধীন সউদি আরবের জন্মের পর থেকেই একমাত্র খনিজ তেলের উপর নির্ভরশীল ছিল দেশটির অর্থনীতি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে কিছু পরিসংখ্যান প্রকাশ হলে দেখা যায়, খোদ তেলসম্পদে ভরপুর সউদি আরবেরও তেল শেষের দিকে। আর তাই নতুন করে অর্থনৈতিক খাতের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে দেশটির নীতি নির্ধারকরা। এই নীতি অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালকে সউদি কর্তৃপক্ষ নতুন অর্থনৈতিক খাত উদ্ভাবনের মাইলফলক হিসেবে ধরেছেন। পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় তারা ইতোমধ্যেই সীমান্ত ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। গত সোমবার সউদি আরব বিশ্ববাসীর সামনে তাদের এই নতুন পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সউদি আরব তাদের এই পরিকল্পনাকে ‘সউদি ভিশন ২০৩০’ বলে ঘোষণা দিয়েছে। সউদি আরবের তেল সম্পদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অন্য খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যেই এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে। গত চার বছরে আশীর্বাদস্বরূপ খনিজ তেলই সউদি আরবের জন্য অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় সউদি কর্তৃপক্ষ আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ব তেল কোম্পানি সউদি আরামকো’র শেয়ার বিক্রি করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই শেয়ার বিক্রিত অর্থ দিয়ে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড তৈরি করা হবে। যা দিয়ে রাষ্ট্রের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিমানবন্দর এবং বেসরকারি খাতে উন্নয়ন করা হবে বলে প্রাথমিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছে।
সৌরশক্তি এবং বায়ুকলে বিনিয়োগের মাধ্যমে সউদি আরব তাদের জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতি খাতকে আরো বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে চাইছে। পাশাপাশি লক্ষ্য হলো তেলের উপর চাপ কমানো। এই নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী সউদি সরকার বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য দরজা খুলে দেবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা সউদিতে বিনিয়োগ করতে পারে। আর এই বিনিয়োগের জন্যই দেশটি নতুন অনেক ক্ষেত্র চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশটির প্রশাসনের জন্য সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো ৩০ বছর বয়সের নিচের তরুণ প্রজন্মের জন্য কয়েক মিলিয়ন চাকুরির ক্ষেত্র সৃষ্টি করা। কারণ যুগের পর যুগ তেল সম্পদের উপর নির্ভরশীল থাকায় সাধারণ সউদিদের মধ্যে প্রচলিত শিক্ষার হার একেবারেই নেই বললেই চলে। শিক্ষা ছাড়াও তাদের নেই কোনো কারিগরি জ্ঞান কিংবা বেসরকারি খাতে কাজ করবার অভিজ্ঞতা। নতুন তরুণ যুবরাজ বাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাকাঠামো প্রণয়নের কথা বলছেন।
আর বিশ্লেষকদের মতে, সউদি আরবে নতুন শিক্ষাকাঠামো প্রণয়ন করা খুব একটা সহজ কাজ হবে না। কারণ দেশটিতে ইতোমধ্যেই প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে ধর্মীয় শিক্ষা বিদ্যমান। ধর্ম কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি ভিন্ন শিক্ষাকাঠামো সউদিরা কিভাবে গ্রহণ করবে সেটাই দেখার বিষয়। এএফপি, ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।