পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই তালিকায় সরকারি খাতের চারটি ও বেসরকারি খাতের আটটি ব্যাংকের নাম রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এই ব্যাংকগুলো তীব্র অর্থ সংকটের কারণে খেলাপির বিপরীতে মান অনুযায়ী প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ নয় হাজার ২৯২ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয় নির্ধারিত হারে। সাধারণ ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে শুরু করে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখার নিয়ম রয়েছে। আর যথাসময়ে ঋণ আদায় না হওয়া নি¤œমান, সন্দেহজনক ও মন্দ বা ক্ষতি অর্থাৎ শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে যথাক্রমে ২০, ৫০ ও ১০০ ভাগ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণে ঘাটতি বা না পারলে কোনও ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর বাইরে রাইট অফ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া, ঋণ পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিল করা হয়েছে প্রায় একলাখ কোটি টাকার মতো। এসব ঋণ খেলাপি হলেও তা খেলাপি দেখাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়। কিন্ত দেখা যাচ্ছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি এখন বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংকেও অনিয়ম জেঁকে বসেছে। প্রভাবশালীদের অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে প্রভিশন ঘাটতিও বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভিশন ঘাটতির কারণে শুধু ব্যাংকই যে বিপাকে পড়ছে তা নয়, আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের জন্যও বিপদ। সাধারণত কোনও ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিলে মূলধনেও টান পড়ে। আর মূলধন ঘাটতিতে পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ওই ব্যাংক বছর শেষে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশও দিতে পারে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রভিশন সংরক্ষণে ঘাটতির শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। সেপ্টেম্বর মাসের শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৪৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এরপরই রয়েছে সোনালী ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে এই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি এক হাজার ৩৫২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৬৬ কোটি ৮১ লাখ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বেসরকারি খাতের মধ্যে এবি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের ৪২১ কোটি ১৪ লাখ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ঘাটতি ৯৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২৬১ কোটি ৪১ লাখ টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৯৬ কোটি ৭১ লাখ কোটি টাকা, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ১০২ কোটি ২৯ লাখ টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৬২ কোটি ২১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বেসরকারি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫২০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।