পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আমানত না আসায় গত দুই বছরে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ৭৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ ধার করে গ্রাহকদের ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (২৪ মাসে) ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে দুই লাখ ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। অথচ এই সময়ে ব্যাংকগুলোতে আমানত এসেছে মাত্র এক লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। ফলে এই দুই বছরে ব্যাংকগুলোকে ৭৭ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা ধার করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩০টিরও বেশি ব্যাংক এখন ধার করে (ঋণ করে) চলছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর (নগদ জমা) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ সঞ্চিতির হার) জমা রাখতে পারছে না। দশটি ব্যাংক তাদের মূলধনও ভেঙে খাচ্ছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না।
এদিকে গ্রাহকরা নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত না দেওয়ায় খেলাপির ঝুঁকিতে পড়ছে ঋণ করে (ধার করে) চলা ব্যাংকগুলো। এমন দুরবস্থার মধ্যে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ঋণ খেলাপি হয়েছে ৯৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে আরও জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে এক লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৮ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে, যা মোট ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ। একই সময়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ছয় লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে, যা মোট ঋণের ছয় দশমিক ৫৮ ভাগ।
বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে, যা বিতরণ করা ঋণের সাত ভাগ। বিশেষায়িত দুই ব্যাংক ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে, যা বিতরণ ঋণের ২১ ভাগ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুন পর্যন্ত ৮৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। অবশ্য নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২২ নভেম্বর পর্যন্ত আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এছাড়া ঋণ পুনর্গঠন হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর ঋণ অবলোপন আছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে যতদিন সুশাসন আসবে না, ততদিন খেলাপি বাড়তেই থাকবে। এক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যথাযথ দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
এদিকে দেখা যাচ্ছে, দুই বছরে ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানতের চেয়ে ৭৭ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই পরিমাণ অর্থ ঋণ বা ধার করেছে ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত দুই বছরে (২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ২ লাখ ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে আমানত এসেছে মাত্র ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৭৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আমানত ছিল ৮ লাখ ৯৫ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আমানত ছিল ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ১৭ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করে ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণ বিতরণ করেছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।