Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো অনেক দূরে

হাউস অব কমন্সের প্রতিবেদন

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম


নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সংশয় আছে

বাংলাদেশের রাজনীতি সব সময়ই উত্তেজনাকর। এ বছর শেষের দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সেই উত্তেজনার পারদ ততই তুঙ্গে উঠছে। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো সমতা থেকে অনেক দূরে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাচ্ছে না। যুক্তি দেয়া হয় যে, নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যে সংশয় আছে এতে তারই প্রকাশ ঘটছে। এ ছাড়া কমনওয়েলথ এখনো পরিষ্কার করে নি, তারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে কিনা। বাংলাদেশের নির্বাচন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নভেম্বর মাসের আপডেট প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এ কথা প্রকাশ করেছে বৃটিশ হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি। ১৩ পৃষ্ঠার এ রিপোর্টের শিরোনাম ‘বাংলাদেশ: নভেম্বর ২০১৮ আপডেট’।
এতে বলা হয়েছে, বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি বা পূর্বশর্ত হলো, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে, যাতে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারেন। এ ছাড়া আরেকটি দাবি ছিল নির্বাচন তদারকির জন্য একটি নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এসব দাবি আদায়ে সক্ষম না হলেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক পর্যবেক্ষক নির্বাচন নিয়ে যতটা প্রত্যাশা করেছিলেন তার চেয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচন অধিক বিশ্বাসযোগ্য হবে। অনেকেই যুক্তি দেখান যে, এ জন্যই বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশির ভাগ রাজনৈতিক পন্ডিতজন এখনো প্রত্যাশা করেন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হবে। কিন্তু এর আগে নির্বাচনের ফল যা প্রত্যাশা করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি তিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ও ব্যবধান কম হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে সমালোচকরা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। চিন্তার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মিথ্যা মামলা, আইনবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুম। সম্প্রতি কয়েক বছরের মধ্যে তুলনামূলক কম হলেও জঙ্গি হামলার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। অক্টোবর মাসের শেষদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা আপিলের ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার কারাদন্ডের সময় বৃদ্ধি করে ৫ বছর থেকে ১০ বছর করার রায় দেন আদালত। কিছুদিন আগে তাকে আরো একটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত করা হয় এবং এতে তার ৭ বছরের সাজা হয়েছে। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে অক্টোবরে তাকে কারাগারের বাইরে চিকিৎসা সুবিধার অনুমোদন দিলে অনেকেই আশা করেছিলেন যে, তাকে হয়তো মুক্তি দেয়া হতে পারে। কিন্তু নভেম্বরে পুনরায় তাকে কারাগারে ফেরত পাঠালে এ আশা চূর্ণ হয়ে যায়।
গত ২৮শে নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয় যে, বিচারিক আদালতে কারও বিরুদ্ধে দুই বছরের বেশি সাজা বা দন্ড হলে সেই দন্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। যতক্ষণ না, আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল, খালাস বা দন্ড স্থগিত করে জামিন না দেয়। এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সর্বশেষ সম্ভাবনাটিও নিভে গেছে।
একই সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এর আগে অক্টোবর মাসে বিএনপি জানিয়েছিল, আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। পরিবর্তে তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানায়। পর্যবেক্ষকদের অবাক করে দিয়ে অক্টোবরের শেষে এসে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে সম্মত হয়। এরপর ১১ই নভেম্বর বিএনপি জানায় যে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচনের সময় এক মাস পিছিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন জানায়। নির্বাচন কমিশন এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিতে সম্মত হয়।
বিএনপি দাবি করেছে, নভেম্বর মাসে তাদের শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত সপ্তাহে দলটির প্রধান কার্যালয়ের ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেয়া হয়। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর হামলার জন্য বিএনপি সমর্থকদের দায়ী করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের পর বিএনপি আর জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অনেকে যুক্তি দেখান যে, এবারের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের অর্থ হলো নির্বাচন তুলনামূলক অধিক গ্রহণযোগ্য হবে। যদিও অনেক পর্যবেক্ষকই তেমনটি প্রত্যাশা করেন না। তাদের মতে, ‘প্লেয়িং ফিল্ড’ এখনো সমতা থেকে অনেক দূরে। এখনো বিরোধীরা প্রশাসনের হাতে ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সব জায়গায় দায়মুক্তির সুবিধা ভোগ করছে। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিয়েও দীর্ঘদিনের উদ্বেগ রয়েছে। এবার জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএনপি এর বিরোধিতা করেছে। এতে নির্বাচনী কার্যক্রমের ওপর দলটির আস্থা কমে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই অনাস্থা নির্বাচনী প্রচারণার সময় বা ফল ঘোষণার পর সহিংসতা ও অস্থিরতা উস্কে দিতে পারে।
এবারের নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না। এর পরিবর্তে তারা দুই সদস্যের ‘এক্সপার্ট মিশন’ পাঠাচ্ছে। অনেকে এ যুক্তিও দিচ্ছেন যে, নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তে এবারের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সংশয় ফুটে উঠেছে। পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায় নি কমনওয়েলথ।
নির্বাচনের আগে আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি তাদের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে। দলটির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হওয়ায় এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। যদিও আওয়ামী লীগের দাবি, স্বতন্ত্র ও ইসলামপন্থী প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে তারা গোপনে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্বে রয়েছে। কিন্তু কট্টরভাবে ধর্মনিরপেক্ষ এই দলটি স¤প্রতি কিছু রক্ষণশীল ইসলামী দলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে।
প্রধান দুই দলেরই দাবি, তারা নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থনৈতিক ইস্যুর ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে চান। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরবে। বিপরীতে বিএনপি যুক্তি দেখাবে যে, বেপরোয়া দুঃশাসন ও শেখ হাসিনার ছত্রছায়ায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দেশকে আরো পেছনে নিয়ে গেছে। এখনো বেশির ভাগ বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগের বিজয় প্রত্যাশা করছে। তবে নির্বাচন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হতে পারে। বৃটিশ বিশ্লেষক মুশতাক খান সতর্ক করে বলেছেন যে, ২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক আবহ তৈরি হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে যদি আওয়ামী লীগ আবারো জয়লাভ করলে তা একদলীয় শাসনকে সুরক্ষিত করবে। একই সঙ্গে দেশ রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে যাবে।
প্রতিবেদনটিতে সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে বৃটিশ সরকারের দেয়া বিবৃতিগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বৃটিশ সরকার বেশ কয়েকবার স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। একইসঙ্গে, বাংলাদেশ সরকার ও বিরোধী দলগুলোর প্রতিও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর আহŸান জানানো হয়েছে।

 



 

Show all comments
  • Morhum Rakib ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    সংশয় যতই থাক নির্বাচন হবেই হবে এবারের নির্বাচন গণতন্ত্রের নির্বাচন, এবারের নির্বাচন মানুষের অধিকার আদায়ের নির্বাচন, এবারের নির্বাচন ভোটের অধিকার আদায়ে নির্বাচন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mostafizur Rahman ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশের জনগণের ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলে অনেক বর বিপদ সামনে। আওয়ামীলীগ সংলাপের নামে যা করেছে সেটা অত্যান্ত দুখ্য জনক। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কি তা বুঝা যাচ্ছেনা। পুলিশ আর আওয়ামীলীগের কর্মকাণ্ড একই সুত্রে গাথা।
    Total Reply(0) Reply
  • Sebratali Montahaak ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৯ এএম says : 0
    ..… গণভবনে দলীয় ডেলিগেটদের সাথে মিটিং করা হচ্ছে, রেডিও টেলিভিশনে ডিজিটাল প্রচার চালানো হচ্ছে ‘থ্যাংক ইউ পিএম’ নামে, এগুলো কার টাকায় হচ্ছে? রাস্তায় উন্নয়নের ফিরিস্তি দেয়া হচ্ছে, এগুলো কার টাকায় হচ্ছে? তারা বলতে পারে উন্নয়ন প্রচার করার অধিকার আছে, তাহলে আমরা বলতে চাই, এই অধিকার আমারও আছে, আমরাও এই উন্নয়নের ফাঁকিগুলো মিডিয়ায় তুলতে চাই, এই উন্নয়ন খারাপ উন্নয়ন। আমরা বলতে চাই আমরা এই সরকারের মতো উন্নয়ন করব না, আমরা সুষম উন্নয়ন করতে চাই, সেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। কিন্তু সেটা তো সরকার করতে দেবে না। রাষ্ট্রীয় অর্থ দলের পেছনে ব্যয় করার নাম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না। এটা ডাহা মিথ্যা কথা।
    Total Reply(0) Reply
  • Muntaha Afroz ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৯ এএম says : 0
    অনেক দুরে মানে দেখাই যাচ্ছে না,, তবুও এই ফিল্ডেই খেলে জিতবে বিএনপি ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • নবীনগরের প্রকৃতি ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:১০ এএম says : 0
    সুষ্ঠু হবে নির্বাচন নৌকার পক্ষে প্রশাসন!!
    Total Reply(0) Reply
  • Mawlana Mohshin Mohshin ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:১০ এএম says : 0
    সরকারের পদত্যাগ আর সংসদ ভেংগে না দেওয়া পর্যনতো লেভেল প্লেয়িং হবেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abul Kalam Azad ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:১১ এএম says : 0
    নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনী মাঠ গড়তে ব্যর্থ
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:৩২ এএম says : 0
    Nirbachon commissionke o polish Aynsringkhola bahinike jotokhon nirepokkho shorkari doler boloy mukto kora na hobe totokhon eai shokarer odhine nirbachon shushto howar prosnnoi othena....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ