Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে

| প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের চারটি নতুন প্রকল্পে অর্থের কোনো সংস্থান না থাকায় চলমান একটি প্রকল্প থেকে টাকা কেটে ওই চারটি প্রকল্পে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, এরকম আরো বেশ কিছু নতুন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের চাপ রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। স্মরণ করা যেতে পারে, জাতীয় নির্বাচনকে উপলক্ষ করে বিপুল সংখ্যক নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। গত অক্টোবর-নভেম্বরেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১২৬টি নতুন প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার চেয়েও পাঁচ হাজার ১৮ কোটি টাকা বেশি। এমতাবস্থায় বরাদ্দজটিলতায় পড়তে পারে প্রকল্পগুলো। ওদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন ও বরাদ্দ না দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে মতে, নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে চলমান প্রকল্প থেকে নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে কোনো আইনগত বাধা নেই। সম্ভবত সে কারণেই বাংলাদেশ রেলওয়ের নতুন চারটি প্রকল্পে চলমান একটি প্রকল্প থেকে টাকা কেটে বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যান্য নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়ার চাপ বেড়েছে এই একই কারণে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক চিঠি এখনো পাওয়া যায়নি। পেলে কমিশন সেভাবে চাইবে সেভাবেই আমরা চলবো। একই সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ইচ্ছা করলে এক প্রকল্পের টাকা কেটে একই মন্ত্রণালয়ের অন্য প্রকল্পে বরাদ্দের প্রস্তাব করতে পারে।
নির্বাচনের আগে ব্যাপক সংখ্যক নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দেয়। অনেকেই বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য প্রকল্পগুলো তড়িঘড়ি করে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া প্রকল্পগুলোর জনগুরুত্ব অনেক সময় বিবেচনা করা হয় না। পরবর্তীতে দেখা যায়, অনেক প্রকল্পেরই প্রয়োজন নেই। আবার অনেক প্রকল্প পুণর্মূল্যায়নও করা হয়। এ ধরনের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হলে অর্থের অপচয় হয় এবং জনগণও সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। একই মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কেটে নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হলে পরিণতি ভিন্নতর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যথার্থই বলেছেন, চলমান প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কেটে নিয়ে নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়ার আইনগত বাধা না থাকলেও দু’দিক থেকে ক্ষতি হবে। একদিকে চলমান প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে নতুন প্রকল্পে ব্যয় হলে সেখানে অপচয়ের আশংকা থাকবে। তার স্পষ্ট অভিমত, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া নতুন প্রকল্পগুলো পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়ন পর্যায়ে অবশ্যই পুনর্মূল্যায়ণ করা উচিৎ।
যেহেতু নতুন অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থের সংস্থান নেই, সুতরাং সেসব প্রকল্পের এত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়নেরও প্রয়োজন নেই। নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা লাভের জন্য চলমান প্রকল্পের টাকা নতুন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হলে ড. জাহিদ হোসেনের ভাষায়, উভয় দিক দিয়েই ক্ষতি হবে। এ ক্ষতি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারেনা। প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনস্বার্থই প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিৎ। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগুরুত্বসম্পন্নতা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এ কারণে কোনো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই পরিত্যক্ত হয়, কোনো কোনো প্রকল্প অর্ধসমাপ্ত হয়ে বাদ পড়ে যায়, কোনো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও জনগণের কোনো কাজে আসে না। এতে উন্নয়ন হয়না। রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। পারতপক্ষ রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প না নেয়ার কথা বলেন। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে, বলা বাহুল্য, জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। এটা ঠিক, একযোগে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সামর্থ আমাদের নেই। পর্যায়ক্রমে অর্থের সংস্থান সাপেক্ষে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আমাদের দেশের জন্য উত্তম পথ। প্রকল্প গ্রহণ বা অনুমোদন করাই যথেষ্ট হতে পারে না, প্রকল্পের মেরিট ও বাস্তবায়নযোগ্যতাই আসল কথা। এই বিবেচনায়, আমরা আশা করবো, নতুন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন জটজলদি শুরু করার কোনো দরকার নেই। অন্য প্রকল্প থেকে টাকা কেটে বরাদ্দ দেয়ারও প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে অর্থের সংস্থান করা হোক, প্রকল্পগুলোর পুণর্মূল্যায়ন করা হোক এবং সময় নিয়ে বাস্তবায়ন করা হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকল্প


আরও
আরও পড়ুন