নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
খুব বেশি আগের কথা নয়। গত জুলাই মাসের ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে টেস্ট সিরিজে নাজেহাল হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। চার মাসের ব্যবধানে সে বিপর্যয়ের ক্ষতে প্রলেপটা খুব ভালোভাবেই দিতে পারল সাকিব আল হাসানের দল। সেবার ক্যারিবীয় গতির সামনে হার মানা বাংলাদেশ বদলাটা নিয়েছে ঘূর্ণিপাকে ফেলে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে গতি আর বাউন্সে কাবু হয়েছিল বাংলাদেশ। ফিরতি সফরে ঘরের মাঠে পেয়ে সেই ক্যারিবিয়ানদের এবার পাওনা মেটাতে ঘূর্ণি বলে নাচিয়ে ছাড়ল সাকিব আল হাসানের দল। স্পিনারদের জন্য বাইশ গজি স্বর্গ বানিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতল আড়াই দিনে।
২০০৯ সালে ভাঙাগড়ার মধ্যে থাকা দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওদের দেশে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। এরপর নয় বছরে আর ওদের বিপক্ষে টেস্ট জেতা হয়নি। সেবার মাশরাফি মর্তুজা চোটে পড়ায় ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। এবার তো তিনি অধিনায়কই, ওদের বিপক্ষে তিনটি জয়েই তাই অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। সবমিলিয়ে এটি বাংলাদেশের বারোতম টেস্ট জয়।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কতটা কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেবেন্দ্র বিশু কিংবা রোস্টন চেজরা একের পর এক উইকেট তুলে নেওয়ায় বাংলাদেশের তাইজুল ইসলাম, সাকিব আল হাসানরাও নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে ক্যারিবীয়দের সামনে ২০৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে বাংলাদেশ তাই ছিল নির্ভার।
উইকেটে বল যেভাবে ঘুরছে, তাতে ২০৪ রানকেই পর্বততূল্য লক্ষ্যে পরিণত করার মতো যথেষ্ট রসদ যে মজুত ছিল বাংলাদেশের। তাইজুল-সাকিব-মিরাজরা প্রত্যাশামতোই জ্বলে উঠলেন ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংসে। তাইজুল তুলে নিলেন ৬ উইকেট, সাকিব, মিরাজরাও সময়মতো আঘাত হানলেন। ২০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেল ১৩৯ রানেই। তিন দিনের মাথায় ৬৪ রানের জয় তুলে নিয়ে টেস্ট সিরিজের শুরুটা হলো দুর্দান্ত।
প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক সেঞ্চুরি করেছেন। ১২০ রানের সেই ইনিংসটির জন্য তিনি জিতে নিয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। কিন্তু চট্টগ্রামে বাংলাদেশের জয়ের মূল নায়ক কিন্তু স্পিনাররাই। প্রথম ইনিংসে অভিষিক্ত নাঈম হাসান। ৫ উইকেট তুলে নিয়ে দলকে এনে দিয়েছেন মোটামুটি ভালো লিড, দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল ৩৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে দাঁড়াতেই দিলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সাকিব, মেহেদী মিরাজরাও কম যাননি। প্রথম ইনিংসেও সাকিব নিয়েছেন ৩ উইকেট।
মিরাজ প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন। সংখ্যা ধরলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন হওয়া ২০ উইকেটই বাংলাদেশের স্পিনারদের। সে হিসাবে চট্টগ্রাম টেস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ঘূর্ণিতেই কুপোকাত- এটা বলাই যায়।
জয়টাও এসেছে মাত্র আড়াই দিনে! সাড়ে সাত সেশনের মতো খেলা হয়েছে এই টেস্টে। প্রতিপক্ষকে বাংলাদেশ দুই ইনিংসে মাত্র ৯৯ ওভার ২ বল করেই দুবার অলআউট করেছে। অর্থাৎ প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট তুলে জয় পেতে বাংলাদেশকে খরচ করতে হয়েছে ৫৯৬ বল। এটিই টেস্টে বাংলাদেশের দ্রæততম জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বাদশ দ্রæততম পরাজয়।
এই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে পারে মাত্র ৬৪ ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের অবস্থা ছিল আরও শোচনীয়। ২১.৫ ওভারে তাদের ৮ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। নবম উইকেটে ৬১ রান আর ৮৩ বলের জুটিটা না হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরও বড় লজ্জায় পড়তে পারত। শেষ পর্যন্ত ৩৫.২ ওভারে অলআউট হয়ে যায় তারা। তাতেই বলের হিসাবে প্রতিপক্ষকে দ্রæততম সময়ে অলআউট করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আগের রেকর্ডটি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১৪ সালে মিরপুর টেস্টে জিম্বাবুয়েকে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬৭০ বলে অলআউট করে জিতেছিল বাংলাদেশ।
প্রতিপক্ষ টেস্টে ১০০০-এর কম বলে দুবার অলআউট করে বাংলাদেশ টেস্ট জিতেছে ছয়বার। তিনবারই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এর মধ্যে দুবার সেই ২০০৯ সালের আলোচিত সফরে, যেখানে খেলোয়াড় বিদ্রোহে দ্বিতীয় সারির একাদশ নামাতে বাধ্য হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে বাংলাদেশ যে শুধু দুর্বল প্রতিপক্ষকেই এভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে তা নয়। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ারও এই অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
জুলাইয়ের সেই সফরে বাংলাদেশকে দুই ইনিংসে মাত্র ৩৫৪ বলে গুঁড়িয়ে দিয়ে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ নিল মধুর প্রতিশোধ! সেটিও অবশ্য ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বলের হিসাবে প্রতিপক্ষকে দ্রæততম সময়ে অলআউট করে জেতার নতুন রেকর্ড। এমনিতে সব দল মিলিয়ে এই রেকর্ডটি ইংল্যান্ডের। ১৮৯৬ সালে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুই ইনিংসে ২৪৮ বলের মধ্যে অলআউট করে দেয় ইংলিশরা।
টেস্টে বাংলাদেশের দ্রæততম জয়
প্রতিপক্ষ বল ভেন্যু সাল
উইন্ডিজ ৫৯৬ জহুর আহমেদ ২০১৮
জিম্বাবুয়ে ৬৭০ শেরে বাংলা ২০১৪
ইংল্যান্ড ৭৬২ শেরে বাংলা ২০১৬
অস্ট্রেলিয়া ৮৭৪ শেরে বাংলা ২০১৭
উইন্ডিজ ৮৮২ গ্রানাডা ২০০৯
উইন্ডিজ ৯৯২ সেন্ট ভিনসেন্ট ২০০৯
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।