Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতে রেকর্ড আবাহনীর

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ঘটনাবহুল ফাইনালে বাজিমাত। ম্যাচ জিতে রেকর্ড গড়লো ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। ফেডারেশন কাপের সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের পাশাপাশি তারা পেল হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের খেতাবও। ঘরোয়া ফুটবলের মৌসুম সূচক টুর্নামেন্ট ওয়ালটন ফেডারেশন কাপের ফাইনালে গতকাল নিজেদের কারিশমা দেখালো অভিজাত পাড়ার ক্লাবটি। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথমে পিছিয়ে থেকেও আবাহনী ৩-১ গোলে নবাগত বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে অনন্য রেকর্ডের মালিক হলো। বিজয়ী দলের হয়ে নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা দু’টি ও হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড বেলফোর্ট একটি করে গোল করেন। বসুন্ধরার পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন কোস্টারিকার মিডফিল্ডার ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস।
হাতহাতি, প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হওয়া। লাথি, চড়, থাপ্পড়- কি ছিল না ফেডারেশন কাপের ফাইনালে। বড় দল আর কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের দাপটে মাঠে জন্ম নিল কলংকজনক আরেক অধ্যায়ের। দু’দলের চারজনকে লালকার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে হয়। নয়জনের দলে পরিণত হয় ঢাকা আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংস। উত্তপ্ত আবাহনীর সমর্থকরা খালি বোতল গ্যালারি থেকে ছুড়ে ফেলেন মাঠে। ম্যাচের ৮৮ মিনিটে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সানডে। কিন্তু তাকে কনুই দিয়ে বুকে আঘাত করেন বসুন্ধরার ডিফেন্ডার নাসিরুদ্দিন চৌধুরী। মারাত্মক আহত হয়ে মাঠের বাইরে যেতে হয় সানডেকে। তার পরিবর্তে মাঠে নামানো হয় নাবিব নেওয়াজ জীবনকে। সানডেকে তখন অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ঠিক সেই মুহুর্তেই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন দু’দলের ফুটবলাররা। আবাহনীর নাবিব নেওয়াজ জীবন খাপ্পড় দেন বসুন্ধরার সুশান্ত ত্রিপুরাকে। পরে সেই সুশান্ত পেটে লাথি মেরে ফেলে দেন জীবনকে। এই অবস্থা দেখে ঘুরে এসে আবাহনীর মামুন মিয়া ফ্লইং কিক দিয়ে সুশান্তকে ফেলে দেন। শুরু হয় দু’দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতি। এক সময় দুই দলের কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। রেফারি মিজানুর রহমান বসুন্ধরার কিংসের সুশান্ত ত্রিপুরা ও তৌহিদুল আলম সবুজ এবং ঢাকা আবাহনীর নাবিব নেওয়াজ জীবন ও মামুন মিয়াকে লালকার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। ঢাকার ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম এক ম্যাচে চারটি লালকার্ড দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাবেক তারকা ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু ও ইমতিয়াজ আহমেদ জনি। দু’দলের চার খেলোয়াড় লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ফলে ম্যাচটি শেষ করতে পারেন রেফারি মিজান।
ঢাকা আবাহনীর সামনে ছিলো দু’টি রেকর্ডের হাতছানি। যদি তারা ফাইনালে বসুন্ধরাকে হারায় তাহলে দেশের প্রথম দল হিসেবে ফেডারেশন কাপে দ্বিতীয়বার হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতবে। পাশাপাশি এই টুর্নামে্েটর সর্বোচ্চ ১১ বার ট্রফি যাবে আবাহনী ক্লাবে। এই ম্যাচের আগে ফেডারেশন কাপে ১০ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সহঅবস্থানে ছিলো ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান ও আবাহনী। অন্যদিকে বসুন্ধরা কিংসের ছিলো ইতিহাস গড়ার হাতছানি। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে যদি দলটি আবাহনীকে হারিয়ে দেয় তাহলে টুর্নামেন্টের অভিষেকেই ইতিহাস গড়া হবে তাদের। সেই সঙ্গে দু’দলের সামনেই ছিলো এএফসি ক্লাব কাপে খেলার হাতছানি। ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়নরা খেলবে আসন্ন এএফসি ক্লাব কাপ টুর্নামেন্টে। এমন সব সমীকরণ মাথায় নিয়েই কাল খেলতে নামে আবাহনী ও বসুন্ধরা। তবে শেষটা যেমন আবাহনীর পক্ষে আসে ম্যাচের শুরু থেকে কিন্তু তেমনটা ছিলো না। বরং উল্টোই বলা চলে। ম্যাচের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া ছিলো দু’দল। তারা আক্রমণাত্ন ফুটবল উপহার দিলেও প্রথমে সফল হয় নবাগত বসুন্ধরাই। ম্যাচের ২০ মিনিটে আলমগীর কবির রানার শট দৌড়ে এসে ফিস্ট করেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল। ফিরতি বলে বাঁ পায়ের গড়ানো শটে সোহেলকে পরাস্ত করে বসুন্ধরাকে এগিয়ে নেন কোস্টারিকান ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস (১-০)। পিছিয়ে পড়ে গোল শোধে মরিয়া আবাহনী আক্রমণের পর আক্রমণ শানাতে থাকে বসুন্ধরার রক্ষণদূর্গে। কিন্তু প্রথমার্ধে তারা সমতায় ফিরতে পারেনি। অবশেষে সফলতা আসে। গোল পায় আবাহনী। বিরতির পর স্টেডিয়ামে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক দেখে সানডে চিজোবা ঝলক। ম্যাচের ৫০ মিনিটে তার গোলেই সমতায় ফিরে আকাশী-হলুদরা। এসময় ডান প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে দারুণ এক ক্রস দেন সোহেল রানা। সুযোগ হাতছাড়া করেননি সানডে। দু’দফা ব্যার্থ হলেও তৃতীয়বার বক্সে জটলার মধ্য থেকে ডান পায়ের দারুণ এক শটে বল ফেলেন বসুন্ধরার জালে (১-১)। ম্যাচ সমতায় ফেরার পর এগিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে ওঠে দু’দল। কিন্তু বসুন্ধরার কলিন্দ্রেস কিছু করতে না পারলেও আবারো ম্যাজিক দেখান আবাহনীর সানডে। ৭৯ মিনিটে তার গোলেই এগিয়ে যায় ঐতিহ্যবাহীরা। এবার গোলের পেছনের কারিগর মিডফিল্ডার সোহেল রানা। মাঝমাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে এগিয়ে যান সোহেল। বসুন্ধরার চার ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডানদিকে থাকা সানডের উদ্দেশ্যে বল বাড়িয়ে দেন। বল পেয়ে এক মুহুর্তও দেরী করেননি সানডে। ডান পায়ের দারুন প্লেসিংয়ে আবাহনীর কয়েক হাজার সমর্থককে উৎসবে মাতিয়ে তুলেন এই নাইজেরিয়ান (২-১)। ফেডারেশন কাপে এটা তার ৬ষ্ঠ গোল। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটিও মজবুত করেন সানডে। এই গোল হজমের সঙ্গে স্বপ্ন ভঙ্গের আভাস পেয়ে যান বসুন্ধরার সমর্থকরা।
৮২ মিনিটে আরো একগোল দিয়ে জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে যায় ঢাকা আবাহনী। ওয়ালী ফয়সালের কর্ণারে বেলফোর্টের নিচু হেড সরাসরি আশ্রয় নেয় জালে (৩-১)। কিন্তু এরপরেই ঘটে অনাকাক্সিক্ষত সেই ঘটনা। তবে তাতে বাধা হতে পারেনি আবাহনীর টানা তৃতীয়বারের মতো ফেডারেশন কাপের শিরোপা নিজেদের ঘরে রাখার আনন্দ-উল্লাস। দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন আবাহনীর রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলার ও কর্মকর্তারাও। ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শত শত আবাহনীর সমর্থক ঢুকে পড়েন মাঠে। এমন আনন্দ উপলক্ষ্য এনে দেয়ায় জড়িয়ে ধরেন ফুটবলারদের। ফোম স্প্রে করে খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানান কর্মকর্তারা। আরো এবার চ্যাম্পিয়ন মঞ্চে উৎসবের আবির ছড়িয়ে দেয় আকাশী-নীল শিবির। আর প্রায় ৩০টি মিনিবাসে করে এসে দলকে উৎসাহ দেয়া বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকরা বাড়ি গেলেন হতাশার চাদর মুড়ে



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবাহনী

১০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ