Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এএমইউ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিলেই হয়

মর্মাহত অলিম্পিয়ানের খেদোক্তি

টাইমস অব ইন্ডিয়া | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সুবিখ্যাত আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (এএমইউ) নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মর্মাহত ভারতের সাবেক হকি ক্যাপ্টেন, অলিম্পিয়ান ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জাফর ইকবাল খেদ প্রকাশ করে বলেছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিলেই একে ঘিরে সব রাজনৈতিক বিতর্ক বন্ধ হবে। শুক্রবার আলিগড়ে চলমান আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হকি টুর্নামেন্টের সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে জাফরের উপস্থিত থাকার কথা। তিনি সাম্প্রতিক অতীতে এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু বিজেপি নেতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তার এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এসব নেতাদের কেউ কেউ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে সন্ত্রাসীদের শিক্ষাকেন্দ্র নামে আখায়িত করেছেন।
এ বছর এপ্রিলে রাজ্য সভার এমপি সুব্রামনিয়ান স্বামী এএমইউ-কে সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থী মতবাদের আখড়া বলে আখ্যায়িত করেন। ২০ নভেম্বর আলিগড়ের এমপি সতিশ গৌতম এএমইউ-র ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে এক চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি তালেবানি মানসিকতায় পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি সন্ত্রাসীদের শিক্ষালয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাথে কথা বলার সময় জাফর ইকবাল বলেন, এ বিশ^বিদ্যালয় সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য কষ্টদায়ক ও অসত্য। এ বিশ^বিদ্যালয় শুধু দেশের কিছু সেরা সন্তানকেই উপহার দেয়নি, হকির ক্ষেত্রে এক ডজন অলিম্পিয়ান উপহার দিয়েছে।
ভারতের শেষ্ঠ কিছু হকি খেলোয়াড়ের নাম উল্লেখ করেন তিনি। জাফর বলেন, মাসুদ মিনহাজ (লসএঞ্জেলেস অলিম্পিক, ১৯৩২), আহসান মোহাম্মদ খান (বার্লিন অলিম্পিকস, ১৯৩৬), লেঃ এ শাকুর, মদনলাল, লতিফ-উর-রহমান (সবাই লন্ডন অলিম্পিকে ছিলেন, ১৯৪৮), যোগেন্দ্রনাথ সিং, রোম অলিম্পিকস, ১৯৬০), এস এম আলি সাইদ টোকিও অলিম্পিকস ১৯৬৪), ইনামুর রেহমান (অলিম্পিয়ান, মেক্সিকো অলিম্পিকস ১৯৬৮), বিপি গোবিন্দ, অলিম্পিয়ান, মিউনিখ অলিম্পিকস ১৯৭২), আসলাম শের খান (মিউনিখ অলিম্পিকস, ১৯৭২) ও আখতার হোসেন হায়াত (অলিম্পিয়ান, লন্ডন অলিম্পিকস, ১৯৬৪) সবাই এএমইউ থেকে এসেছেন। তারপরও এ বিশ্ববিদ্যালয় নিন্দার শিকার।
১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী জাফর ইকবাল বলেন, শুধু শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই দেশ উন্নতি করতে পারে। তিনি বলেন, মুসলিম শব্দটি আজ বিরোধের মূল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই এটা বাদ দেয়াই ভালো। তাহলে শান্তি আসবে।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ রাজনীতি কীভাবে জড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, খেলাই শুধু একমাত্র ক্ষেত্র যা এ ভাইরাস থেকে মুক্ত রয়েছে। প্রত্যেক জায়গায় মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। খেলোয়াড়রা এখনো তারা জাতি-ধর্মের কথা না ভেবে দেশের জন্য খেলে। ঐক্য না থাকলে টিম জয়ী হতে পারে না।
জাফর সত্তর দশকের কথা স্মরণ করেন যখন তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং -এর ছাত্র ছিলেন। আমাদের রাধুনি রিয়াজ মিয়া খেলোয়াড়দের জন্য রান্না করতেন এবং কে রান্না করেছে সে কথা না ভেবে সবাই তা খেত। আমাদের খেলোয়াড়দের চিন্তাভাবনা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তাই আমার বন্ধুদের বেশীরভাগই ব্রাহ্মণ হওয়া সত্তে¡ও বন্ধুর বাইরে আর কিছু ভাবিনি। বিভেদ আর শাসনের দিকে টেনে না নেয়ার আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, মানুষ সে জনপ্রিয় গানটির কথা ভুলে গেছেঃ ‘না হিন্দু বনেগা, না মুসলমান বনেগা.... ইনসান কি আওলাদ হ্যায়, ইনসান বনেগা। রাজনীতিকরা অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে বড় করে ধরে ও বিভিন্ন শহরের নাম পরিবর্তন করে তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছেন। এসব নয় নয়, বরং আমরা হাসপাতাল ও সড়ক চাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ