Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীলঙ্কার ঝোড়ো অর্থনীতিতে রাজনৈতিক সঙ্কটের আঘাত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

শ্রীলঙ্কার বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট দ্রুত মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আরো তীব্র করে তুলেছে। ২০১৯ সালের জন্য কোনো বাজেট প্রণীত হয়নি, জানুয়ারির মধ্যে আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে, আর আমেরিকার ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস ইনভেস্টর্স সার্ভিস শ্রীলঙ্কা সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার রেটিংসের মানে অবনমন ঘটিয়েছে। গত মাস থেকেই ডলারের বিপরীতে রুপির মান পড়ছিল। তবে মুডির অবনমন ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শ্রীলঙ্কার ঋণ ছাড় নিয়ে আলোচনা স্থগিত করতে পারে বলে খবরের মধ্যে রুপির মান রেকর্ড সর্বনিম্ন ডলারপ্রতি ১৭৯-এ নেমে গেছে।
এক বিবৃতিতে মুডিস জানিয়েছে, চলমান বৈদেশিক ও ঘরোয়া আর্থিক অবস্থার টানাপোড়েন ও রিজার্ভ সঞ্চয়ে স্বল্পতার ভিত্তিতে রেটিংয়ে অবনতি ঘটানো হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে, আর তা আর্থিক নীতির ওপর স্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কাকে ২০১৯-২০২২ সময়কালে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আগামী বছর করতে হবে ৩ বিলিয়ন ডলার। মুডিসের অবনমনের বিষয়ে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বলেছে, এটি ছিল ‘অযৌক্তিক।’ আর ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে ব্যাঙ্কটি জানিয়েছে, বাজেট বিলম্বিত হলেও তারা জানুয়ারিতে ঋণ পরিশোধের জন্য এক বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করবে। আর এপ্রিল নাগাদ করা হবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক গভর্নর ড. ইন্দ্রজিত কুমারস্বামী বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ পরিশোধের অর্থ সংগ্রহ করবেন। এসবের মধ্যে রয়েছে হামবানতোতা বন্দর হস্তান্তরের ফলে পাওয়া তহবিল ও বিভিন্ন প্রধান ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ গ্রহণ।
চলতি সপ্তাহে বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিঙ্গের দল ইউএনপি জানিয়েছে, তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসাকে বাধা দেবে। উল্লেখ্য, রাজাপাকসা একইসাথে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। আর বিক্রমাসিঙ্গের কোয়ালিশন সরকারের আমলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল ইউএনপির হাতে।
গত ২৬ অক্টোবর নিযুক্ত হওয়ার পর রাজাপাকসা দু’বার জ্বালানির দাম কমিয়েছেন। তিনি আগের সরকারের পাশ্চাত্যের নির্দেশনার আলোকে উদার অর্থনীতির দিকে ধাবিত হওয়ায় দেশের ব্যবসায় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অভিযোগ করে সংরক্ষণবাদী নীতি গ্রহণের কথা বলছেন। বিক্রমাসিঙ্গেকে বরখাস্ত করার একটি কারণ হিসেবে প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পাশ্চাত্যের নির্দেশনায় চলেন। এখন সিরিসেনা-রাজাপাকসা সরকার ও তাদের জাতীয়তাবাদী অবস্থান কীভাবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ে প্রয়োগ করা হবে, তাই এখন দেখার বিষয়। কারণ দেশটির জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন। অন্যদিকে বিক্রমাসিঙ্গে ও রাজাপাকসা উভয়েই ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক বিষয়াদি অব্যবস্থাপনার জন্য একে অপরকে অভিযুক্ত করে আসছেন।
এদিকে সিরিসেনা-রাজাপাকসা মন্ত্রিসভা বুধবার ভোট অন অ্যাকাউন্ট প্রস্তুত করতে লিগ্যাল ড্রাফসম্যান চালু করার অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। রাজাপাকসার দল শ্রীলঙ্কা পদুজনা পেরামুনা (এসএলপিপি) গত বৃহস্পতিবার মিডিয়াকে জানিয়েছেন, তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তহবিল দিতে জানুয়ারির প্রথম দিকে ভোট অন অ্যাকাউন্ট উপস্থাপনের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু রাজাপাকসার বাজেটের বিরুদ্ধে ইউএনপির প্রতিবন্ধকতার মুখে কীভাবে তা করা হবে, তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
পার্লামেন্টে বাজেট পাস হতে ১১৩ জন সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন হয়। পার্লামেন্টে রাজাপাকসা-সিরিসেনার সদস্য রয়েছে ১০৩ জন। তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (টিএনএ), মার্ক্সিস্ট জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি), দুটি মুসলিম দল- শ্রীলঙ্কা মুসলিম কংগ্রেস ও অল সিলন মাক্কাল কংগ্রেসের সমর্থন তারা পাচ্ছে না। এসব দলের মধ্যে জেভিপি ও টিএনএর রয়েছে ২০ জন সদস্য। তারা সরকার গঠন করার জন্য ইউএনপিতে যোগ দেবে না। তবে রাজাপাকসার যেকোনো উদ্যোগ ভন্ডুল করে দিতে ইউএনপিকে সমর্থন করবে।
প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসার দুষ্ট সরকারকে তহবিল-বঞ্চিত করতে ২৯ নভেম্বর ইউএনপি ও এর সমর্থক দলগুলো একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চাইছে। তাদের যুক্তি হলো, বিক্রমাসিঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থক থাকায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে অসাংবিধানিক। তারা আরো দাবি করছে, রাজাপাকসার বিরুদ্ধে দুবার অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়েছে। বর্তমান অচলাবস্থার অবসান না হলে ১ জানুয়ারি থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ও দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের তহবিল বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে দেশটি নজিরবিহীন আর্থিক সঙ্কটে নিমজ্জিত হবে।
এদিকে রাজাপাকসা শিবির জোর দিয়ে বলেছে, রাষ্ট্র ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চলবে এবং রাজাপাকসার অধীনে থাকা অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তহবিল দিতে ভোট অন অ্যাকাউন্ট প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তবে বরখাস্তকৃত অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা জোর দিয়ে বলেছেন, রাজাপাকসার বিরুদ্ধে দুবার অনাস্থা প্রস্তাব পাস হওয়ায় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সব সরকারি পাওনা পরিশোধ অবৈধ হয়ে যাবে।
শ্রীলঙ্কা এ ধরনের অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলায় অতীতে কখনো পড়েনি বলে সামারাবিরা বলেন, এর কারণ হলো রাজাপাকসা সরকার অবৈধ।
ইউএনপি ও এর মিত্ররা সরকারি অর্থব্যবস্থায় রাজাপাকসা সরকারকে প্রবেশ করতে না দিতে অটল থাকার প্রেক্ষাপটে পর্যবেক্ষক্ষেরা আশঙ্কা করছেন, পার্লামেন্টে হাঙ্গামা অব্যাহতই থাকবে। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে রাজাপাকসার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাসের সময় গোলযোগ হয়। এসময় স্পিকার কারু জয়সুরিয়ার ওপর শারীরিক হামলা চালানো হয়। রাজাপাকসার বিরুদ্ধে দুবার অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলেও তা প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা গ্রহণ করেননি। এখন কণ্ঠভোট না ইলেক্টনিক ভোটে অনাস্থা প্রস্তাব পাস করতে হবে তা নিয়ে জটিলতা চলছে। অনাস্থা প্রস্তাব দুটি পাস হয়েছে কণ্ঠভোটে। গতকাল শুক্রবার আবার পার্লামেন্ট বসার কথা ছিল। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রীলঙ্কা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ