বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লাখো শোকার্ত মানুষের উপস্থিতিতে উনুষ্ঠিত হয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জিএম রহিমুল্লাহর নামাজে জানাযা। আজ সকাল ১০. ৫০ টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম নামাযে জানাযা।
বেলা আড়াইটায় দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয় নিজ গ্রাম সদরের ভারুয়াখালীতে। সকাল সাড়ে দশটায় ১ম জানাযার সময় থাকলেও ২০ মিনিট পরে জানাজা সম্পন্ন হয়।
এতে ইমামতি করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা মাওলানা আবদুল হালিম।
জিএম রহিমুল্লাহ সোমবার গত রাতে হার্টএ্যাকে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্তেকালের সময় ১ ছেলেও ৩ কন্যা সন্তানের জনক জিএম রহিমুল্লাহর বয়স ছিল ৫১ বছর।
জিএম রহিমুল্লাহর জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আমার আদরের ভাই জিএম রহিমুল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ বিশ্বাস হয়নি। কিভাবে তিনি এত অল্প সময়ে চলে যাবেন ভাবিনি। জানাযায় বিশাল এই সমাবেশ তার সততা, জনপ্রিয়তার বড় প্রমান।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, আপনাদের জিএম রহিমুল্লাহ ছিলেন ছোট মানুষ। হয়ে গেলেন জাতীয় নেতা। তিনি কক্সবাজারবাসীর গৌরব ছিলেন। তার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ কম মেলে। সরকার অর্ধশত মামলায় তাকে নির্যাতন করেছে। চাপে রেখেছিল তাকে।
জামায়াত নেতার জানাযায় দল মত নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ অংশ গ্রহণ করে। জানাযার নির্ধারিত স্থান কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ হলে তা দশটার আগেই কানায়-কানায় পূর্ন হয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, পৌরপ্রিপ্যারেটরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, আশপাশের সড়ক উপসড়কে শোকাহত জনতা অবস্থান নেয়। যে যেখানে ছিল সেখান থেকে জানাযার নামাজে অংশ নেয়।
এতে অংশ নেন, এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল, কউক চেয়ারম্যান লে: ক: ফুরকান আহমদ, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহানসহ বিভিন্ন দলমত ও শ্রেণী পেশার লাখো শোকার্ত মানুষ।
দুপুর ১২টার দিকে জিএম রহিমুল্লাহর লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স নিজ এলাকা ভারুয়াখালি পৌঁছলে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সবার প্রিয় জিএম রহিমুল্লাহকে একনজর দেখতে ছুটে আসে শিশু-কিশোর আবালবৃদ্ধবনিতা। এ সময় অশ্রু ঝরিয়ে অসংখ্য মানুষকে কাঁদতে দেখা গেছে। পাহাড়ের চূড়া বা বাড়ির আঙ্গিনা থেকে দেখতে থাকে তাদের প্রীয় নেতার জানাযা।
বেলা ২ টা বেজে ৪০ মিনিটের দিকে মরহুমের নামাজে জানাজা আদায় করা হয়। ইমামতি করেন ভারুয়াখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল বশর। শেষে জিএম রহিমুল্লাহকে তার বাড়ির পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজাপূর্ব সমাবেশে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, জানাজার উপস্থিতি প্রমাণ করে জিএম রহিমুল্লাহ কেমন লোক ছিলেন। ১০ বছরেও এমন জানাজা দেখিনি।
বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর জাফর সাদেক বলেন, জিএম রহিমুল্লাহ আমাদের জন্য আদর্শ, এলাকাবাসীর গৌরব। তিনি আপোষহীন নেতা ছিলেন। লোভের উর্ধ্বে থেকে নিজের আদর্শ ধরে রাখতে পেরেছেন।
শিবিরের কেন্দ্রীয় ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট সলিম উল্লাহ বাহাদুর, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মাওলানা জহিরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর কাশেম, কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবদলের সভাপতি শেফায়েত আজিজ রাজু, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুর, ভারুয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার, মাওলানা আবদুর রহিম প্রমুখ বক্ততব্য রাখেন।
পরিবাবের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন (মরহুমের ভাইপো) যুবলীগ নেতা জিএম জাহিদ ইফতেখার।
বিএনপি জামায়াতের নেতা কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে মামলা হামলা ও পুলিশের ভয়ে কোন সমাবেশ করতে পারেনি। গতকাল জিএম রহিমুল্লাহর জানাযাপূর্ব সমাবেশটি একদিকে ছিল জানাযা, অপরদিকে এটি ছিল যেন আওয়ামী লীগ বিরোধী মহাসমাবেশ। সমাবেশ সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি সচেতন মহলের কাছে তাই মনে হয়েছে।
জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতা এমপি কমল বলেন, কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ ছিলেন সৎ যোগ্য এবং নির্লোভ জনপ্রতিনিধি। জামায়াত নেতা হলেও তার সাথে ছিল তার হ্নদ্যতা। উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জামায়াতের বড় নেতা হয়েও তিনি কোন ঘর বাড়ি করেননি। তার কোন সহায় সম্পদ নেই। এমপি কমল রহিমুল্লাহর ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা, ভরন পোষণ ও একটি ভিটেবাড়ি করেদেয়ার ঘোষণা দেন।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে: ক: ফুরকান আহমদ বলেন, জামায়াত নেতা জিএম রহিমুল্লাহ ছিলেন সৎ এবং জনপ্রীয় নেতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।