Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মাঠপর্যায়ে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

দিনাজপুরের ৬টি আসন

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশের সর্বত্রই নির্বচনী আমেজ। একই হাওয়া বইছে গোটা দিনাজপুরজুড়ে। প্রকাশ্যে মিটিং-মিছিল দেখা না গেলেও; পাড়া-মহল্লা, অফিস-আাদালত, চা-দোকানসহ সব জায়গাতেই নির্বাচনী ডামাডোল। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোট ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থীদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। মাঠপর্যায়ে পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পদচারণা কম থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের জোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ঐক্যজোট নেতারা। অন্যদিকে, মহাজোট প্রার্থীরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দিনাজপুরের ৬টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও প্রার্থী নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে ঐক্যজোটের। বীরগঞ্জ-কাহারোল উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-১ আসন থেকে মহাজোটের পক্ষে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল। বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা, ছাত্রলীগ নেতা আবু হোসাইন বিপু, অ্যাড. হামিদুল হক ও গোপেল চন্দ্র রায়ও মনোয়ন জমা দিয়েছেন। এছাড়া আরো কয়েকজন মনোনয়ন ক্রয় করলেও জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বর্তমান এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপালের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলনের কারণে কেন্দ্রীয় থেকে শোকজের মুখোমুখি হলেও মাঠ পর্যায়ের চিত্র পাল্টায়নি।
অপরদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়ন ক্রয় করেছেন, বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি শিল্পপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলাম, কাহারোল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী, যুবদল নেতা মেহেদী হাসান সুমন ও রেজওয়ানুল ইসলাম। জামায়াতের শক্ত অবস্থান হিসেবে পরিচিত এই আসনে বিএনপি’র সম্মতি সাপেক্ষে বর্তমান বীরগঞ্জ পৌর মেয়র মো. হানিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন কিনেছেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। এই আসনটিতে বতমান এমপি’র বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা কর্র্মীদের জোরালো অবস্থানকে কেন্দ্র করে বিরোধী শিবির কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
বিরল-বোচাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে দিনাজপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ও কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পাশাপাশি সাবেক এমপি সতিষ চন্দ্র রায়ের পুত্র আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মানবেন্দ্র রায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পিতার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি মানবেন্দ্র রায়ের শো-ডাউন ভোটারদের ভাবিয়ে তুলেছে। আছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জুলফিকার হোসেন।
অপরদিকে, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনা.(অব.) মাহবুবুর রহমানের পৈত্রিক আবাসস্থল এই আসনে তিনি নির্বাচনী দৌড়ে আসেননি। তার জায়গায় সাবেক ছাত্র নেতা এম এ জলিল, বিরল উপজেলা চেয়ারম্যান আ ন ম বজলুর রশিদ, সাদের রিয়াজ চৌধুরী পিনাক ও অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম মনোনয়ন নিয়েছেন।
সদর উপজেলাকে নিয়ে দিনাজপুর-৩ আসনে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, সংবিধান প্রণেতা কমিটির অন্যতম সদস্য আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি জাতীয় সংসদের হুইপ এম ইকবালুর রহিম রয়েছেন সবার আগে। পাশাপাশি আরো যারা মনোনয়ন দৌড়ে অংশ নিয়েছেন তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি বাম নেতা হিসাবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আশফাক হোসেন, ফারুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল ও মোমেনা আক্তার লিপি। যদিও নির্বাচনী মাঠে প্রকাশ্যে ইকবালুর রহিম ছাড়া কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলেছে, মনোনয়ন জমা দিলেও সদরে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সকল নেতা কর্মী ইকবালুর রহিমের নেতৃত্বেই নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এগিয়ে যাচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফী রুবেল।
অপরদিকে, বিএনপি থেকে যারা মনোনয়ন নিয়েছেন তারা হলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন সাবেক এমপি মরহুমা খুরশিদ জাহান হক এর পুত্র শাহারিয়ার আক্তার ডন, বিএনপি নেতা অ্যাড. মোফাজ্জল হোসেন দুলাল, পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, শিল্পপতি হাফিজুর রহমান (দিনাজপুর-৪ আসনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী) লুতফর রহমান মিন্টু (দিনাজপুর-৬ আসনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী)। মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন শাহারিয়ার আক্তার ডন। একইভাবে মোফাজ্জল হোসেন দুলালও কৌশলী প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। পাশাপাশি শিল্পপতি হাফিজুর রহমান খানসামা চিরিরবন্দর আসনে উৎসাহী হলেও সদর আসনে নির্বাচন করার লক্ষে নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
খানসামা-চিরিরবন্দর উপজেলা নিয়ে দিনাজপুর-৪ আসনে বর্তমান এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী’র পাশাপাশি যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তারা হলেন প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং শিক্ষানুরাগী আমেনা বাকি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এম আমজাদ হোসেন, সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানু, অ্যাড. সাইফুল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম। অপরদিকে, এই আসনে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা হিসাবে পরিচিত সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান মিঞা এবং শিল্পপতি হাফিজুর রহমান সরকার। জামায়াত জোটের কাছে আসনটি দাবি করতে পারে।

ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৫ আসনে রয়েছেন, বর্তমান এমপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান-এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাকারিয়া জাকির, অ্যাড. শান্তুনু সফেদ আকতার তুহিন, মাহদুননবী নাবী ডা. তোফাজ্জল হোসেন। নির্বাচনী মাঠে বর্তমান এমপি’র পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিজের জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তরুণ নেতা জাকারিয়া জাকির। এই আসনে জাতীয় পাটি প্রার্থী সোলায়মান সামিতোও মনোনয়ন দাখিলের অনেক আগে থেকেই মাঠ কাঁপিয়ে চলেছেন। মহাজোটের অন্যতম প্রার্থী হচ্ছেন জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা এ জেড এম রেজওয়ানুল হক, ফুলবাড়ী উপজেলা বিএনপি সভাপতি খুরশীদ আলম মতি ও হাসানুজ্জামান উজ্জল। এই আসনে বর্তমান আওয়ামী এমপি’র বিরুদ্ধে গোত্রীয় দ্ব›দ্বই ঐক্যজোট প্রার্থীদের উজ্জীবিত করে রেখেছে।
নবাবগঞ্জ-হাকিমপুর-বিরামপুর ঘোড়াঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি সিবলি সাদিকের পাশাপাশি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তারা হলেন, সাবেক এমপি আজিজুল হক চৌধুরী, আলতাফুজ্জামান মিতা, আতাউর রহমান, মিজানুর রহমান মন্ডল, আক্কাস আলী, পারভেজ কবীর, খায়রুল আলম রাজু, লিয়াকত আলী সরকার টুটুল, সামসুল আলম, শাহনাজ পারভীন আমির হোসেন, ডাঃ মোঃ মোশাররফ হোসেন, আয়নাল হক চৌধুরী, অ্যাড. আবদুল হাকিম, জামিল হোসেন চলন্ত, এমদাদুল হক চৌধুরী, আবদুর রহমান লিটন, রাফে খন্দকার শাহ, মাকসুদুর রহমান লাভু চৌধুরী ও সুলতানা আকতার বর্ষ। মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের আশীর্বাদপুষ্ট জাপার কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপূরীর মালিক দেলওয়ার হোসেন। বর্তমান এমপি ও দেলওয়ার হোসেন একই বংশধর হওয়ায় আসনটিকে মামা ভাগিনার আসন বলেই মহাজোটে পরিচিতি লাভ করেছে।
এই আসনে বিএনপি তথা ঐক্যজোট থেকে মনোনয়ন কিনেছেন তারা হলেন, লুৎফর রহমান মিন্টু ও ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ হোসেন। তবে এই আসনটি দাবি করেছে জামায়াত। ২০০৮ এর নির্বাচনে এই আসনে অল্প ভোটে হেরে যাওয়া জেলা জামায়াতের আমীর অ্যাড. আনোয়ারুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ